১২ ভারতীয় শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দেওয়া হলো কলকাতায়

India honours
১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, বিজয় দিবসের দিনে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর কলকাতায় ১২ ভারতীয় শহীদ পরিবারের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। ছবি: স্টার

৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ের স্বাধীন হয়েছিল সোনার বাংলাদেশ। শুধু তৎকালীন পূর্ব বাংলার মুক্তিকামী মানুষই নন বরং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ভারতের বহু বীর সেনানীও। সরকারি হিসাবে সেই সংখ্যাটা প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৮ থেকে ওই বীর শহীদদের সম্মাননা প্রদান করছে বাংলাদেশ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিজয় দিবসের দিন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর কলকাতায় এমনই ১২ শহীদ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা।

ঘড়ির কাঁটায় রবিবার সকাল সাড়ে আটটা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সে দফতর থেকে সরাসরি যুদ্ধে নেমেছিলেন ভারতীয় সেনারা, সেই পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরে শিখা অনির্বাণের পাশেই প্রতিবছরের মতো এবারও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা ছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর।

এই দিনটিকে তারাও একইভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করে আসছে গত ৪৭ বছর ধরে।

তবে এদিনের আয়োজনের ব্যতিক্রম ছিলো ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বীর শহীদদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। মুক্তিযোদ্ধাবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক সম্মাননা তুলে দেন।

সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত শহীদ পরিবার। যেমনটি বলছিলেন বিএসএফের বীর শহীদ লেন্স নায়েক অমল কুমার মণ্ডলের ছেলে অশোক মণ্ডল। তিনি জানালেন, তার বাবার মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে তার জন্ম হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার বাবার শহীদ হওয়ায় তিনি গর্ব বোধ করেন। অন্যদিকে পাকিস্তানকে ঘৃণা করেন তিনি। বলেন, “পাকিস্তান নাম শুনলে বিরক্ত লাগে। আজও আমি পাকিস্তানের খেলা দেখি না।”

বাংলাদেশ সরকারের এই সম্মাননায় আবেগাপ্লুত শহীদ ফ্লাইট অফিসার সত্যব্রত নন্দীর ভাই বি নন্দী। তিনি জানান, “স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর হলেও এই সম্মাননা আমাদের জন্য গর্বের।”

সম্মাননা নিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা মৌসুমী চৌধুরী। তার বাবা শহীদ ফ্লাইট সার্জেন্ট হিমাংশু ঠাকুর। বাবার মৃত্যুর সময় তার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। তবুও মনে আছে, বাবার মৃত্যুর কথা। সম্মাননা পেয়ে তিনি বলছিলেন, “মনে হলো বাবা যেন আমার পাশে দাঁড়য়ে আছেন।”

মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক জানালেন, “বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭০০ জন ভারতীয় শহীদের তালিকা করেছে। এক এক করে সবাইকে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে।”

এদিকে, প্রতি বছরের মতো ভারতীয় সেনা বাহিনীর আমন্ত্রণে কলকাতায় বিজয় দিবস উদযাপন করতে বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ৭২ জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছেন। ওই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সম্পাদক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী এবং বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য।

এবারের প্রতিনিধি দলের রয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ এনামও।

এদিন অন্য একটি আয়োজন ছিলো কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসে। বিকালে তিন দিনের বাংলাদেশ বিজয় উৎসবের সূচনা করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন ভারতের নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার রাজমাতা মহারানী বিভু কুমারী দেবী ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

3h ago