পলিথিনে মোড়ানো হচ্ছে পোস্টার, পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ
ঘূর্ণিঝড় ‘ফেথাই’ এর কারণে গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারে সকাল ও রাতে বৃষ্টি হয়েছে। এতে নির্বাচনে প্রার্থীদের অনেকের ঝুলানো পোস্টার ছিঁড়ে ফাঁকা হয়েছে হাটবাজার ও রাস্তা। অন্যদিকে, পলিথিন দিয়ে পোস্টার মুড়ে টাঙ্গানো শুরু হয়েছে। এতে বেড়েছে পলিথিন বিক্রি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, অপচনশীল এই প্লাস্টিকের জন্য পরিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গতকাল কয়েকটি উপজেলায় ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ভোর রাত থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার সব এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় হাটবাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ও যানবাহনের সংখ্যাও কমে গেছে।
বৃষ্টিপাতের ফলে নির্বাচনী আমেজও কিছুটা নিরুত্তাপ হয়ে পড়েছে। হাটবাজার ও রাস্তার বিভিন্ন স্থানে রশিতে ঝুলানো পোস্টার ছিঁড়ে গেছে। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণাতেও পড়েছে শীতের প্রভাব।
কুলাউড়া উপজেলার পীরের বাজারে সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন বলেন, বৃষ্টির কারণে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গত দু’দিনে প্রার্থীদের বিভিন্ন সভা সমাবেশের পরিসরও হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে পোস্টার। নতুন করে প্রার্থীদের সমর্থক ও কর্মীরা পোস্টারে পলিথিন মুড়িয়ে দিচ্ছেন যেনো পোস্টারগুলো আর নষ্ট না হয়।
প্রার্থীদের সমর্থক ও কর্মীরা জানান, বৃষ্টিপাতের ফলে পোস্টার ছিঁড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় প্লাস্টিক মুড়িয়ে পোস্টার টানানো হয়েছে এবং কিছু এলাকায় তা করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, প্লাস্টিকে না মোড়ালে পোস্টার রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
কুলাউড়া শহরের পলিথিন বিক্রেতা আব্দুল নুর বলেন, বৃষ্টির কারণে হঠাৎ করেই পলিথিন বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ গ্রাহক বলেছেন পোস্টার মোড়ানোর জন্য এগুলো ব্যবহার করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, নির্বাচনের সময় পোস্টারে পলিথিনের ব্যবহার সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “পলিথিন ব্যবহারের ফলে ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ঝিল ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে, অপচনশীল পলিথিন নদী, পুকুর, জলাশয় এর তলদেশে জমা হয়ে পানির সুইং এ বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে পানিতে থাকা প্রাণ যেমন মাছ কিংবা অন্যান্য প্রাণ-বৈচিত্র্য পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।”
“মাটি, পানি, বাতাস- তিন স্তরেই প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। অপচনশীল বলে এরা মাটির উর্বরা শক্তি মারাত্মকভাবে বিনষ্ট করে। নালা-নর্দমা থেকে শুরু করে নদ-নদী পর্যন্ত সব স্তরেই পানির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয় পলিথিনের কারণে। একে পুড়িয়ে ফেললেও যে ধোঁয়া বাতাস দূষিত করে ভীষণভাবে। এছাড়াও, খাবারে পলিথিন ব্যাগ ব্যাবহার করলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার আরও বাড়বে যদি এর লাগাম টেনে ধরা না হয়। তখন পরিবেশ আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।”
নির্বাচনের সময় পোস্টার মোড়ানোর কাজে ব্যবহারের জন্য পলিথিনের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে- যা পরিবেশের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যবহার না করার বিষয়টি নির্বাচনী নীতিমালায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন পরিবেশবাদী।
Comments