‘গণমাধ্যমের ভেতর রাজনৈতিক রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে’

গণমাধ্যম সমাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিন্তু, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সংবাদ পরিবেশনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে।
Matiur Rahman And Kalimullah
মতিউর রহমান চৌধুরী এবং অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

গণমাধ্যম সমাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিন্তু, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সংবাদ পরিবেশনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে।

এ বিষয়টি নিয়ে আজ (২৩ ডিসেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, “বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু, নির্বাচনকালীন এই অবস্থায় আমাদের গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা একেবারেই প্রত্যাশিত নয়। তারপরও কিছু কিছু মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠতার চর্চা অব্যাহত থাকলেও, বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তা অনুপস্থিত।”

এর কারণ হিসেবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’কে দায়ী করে তিনি বলেন, “অন্যদেরকে দায়ী করার আগে নিজেদের দায়ও এড়ানো যায় না। এখন গণমাধ্যমে যারা কাজ করছেন, অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেন যে, এই খবরটি প্রচার করা হবে, অন্যটি নয়। অপরদিকে, ওপরের মহল থেকেও নানা ধরণের চাপ আসে।”

মতিউর রহমান চৌধুরী মতে, “স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতাও এখন দলীয়করণে আক্রান্ত হয়েছে। গণমাধ্যমের ভেতরও রাজনৈতিক রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো জাতীয় ইস্যুতে সাংবাদিকদের যেখানে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা, কিন্তু আজ আর তা দেখা যাচ্ছে না। সুবিধা, চাপ, ভয়সহ নানা কৌশলের মধ্যে তা বন্দী হয়ে গেছে।”

নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকদের মোটর সাইকেল ব্যবহারের জন্য কোনো স্টিকার ইস্যু করা হবে না, একইসাথে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না, নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জারি করা এ ধরণের নীতিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন যে নীতিমালা বেধে দিয়েছে, মিলিটারি শাসকেরাও এমনটি করেননি। এতে ডেমোক্রেটিক কোনো চিন্তাধারার প্রকাশ দেখছি না। আমি মনে করি- এর মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি এক ধরনের আঘাত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা ভালো শাসনের দিকে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদকে (জানিপপ) এর চেয়ারম্যান এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, “নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে যা দেখানো হচ্ছে আমাদের তাই বিশ্বাস করতে হচ্ছে। সর্বোপরি সেখান থেকে তাৎক্ষণিক খোঁজখবর পাচ্ছি আমরা।”

“দেশের অনেক জায়গায় বিশৃঙ্খলা ঘটছে। সেক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে এসব ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন চলে আসছে। সংবাদকর্মীরা মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তাই বলবো- গণমাধ্যমের ভূমিকা সো ফার সো গুড,” যোগ করেন তিনি।

সংবাদ সংগ্রহে মোটর সাইকেল ব্যবহার না করতে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনগুলোতে মোটর সাইকেলের অপব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া, আমাদের দেশে একটি প্রবাদও আছে এমন যে, ‘হোন্ডা গুণ্ডা’। সে কারণেই বোধ হয় নির্বাচনের দিন এই বাহনটি ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন।”

একইসঙ্গে একাধিক সাংবাদিকের একই ভোটকক্ষে প্রবেশ না করার নীতিমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্রের মূল উপলক্ষ তো ভোটগ্রহণ। সেক্ষেত্রে ভোটকক্ষে একইসঙ্গে একাধিক সাংবাদিক প্রবেশ করলে তো সেই উপলক্ষটি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকরা তো আর খবরের বিষয় হতে পারে না।”

“গণমাধ্যম কর্মীরা যদি তাদের পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে মনোনিবেশ করেন, তাহলে আমি মনে করি- ভোটের দিন সংবাদ সংগ্রহে কোনো ধরণের সমস্যা হওয়ার কথা নয়,” যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago