কনকনে শীতেও কানাইয়ার বক্তব্যে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
কলকাতার তাপমাত্রা তখন ১১.২ ডিগ্রি। কনকনে শীতে তাতিয়ে যাওয়ার মতো বক্তব্য দিয়ে গেলেন ভারতের অন্যতম আলোচিত যুব ছাত্রনেতা কানাইয়া কুমার।
গতকাল (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে কলকাতার রাণী রাসমনি রোডে আয়োজিত ভারতের কমিউনিস্ট পারটির (সিপিআই) ৯৪তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে অন্যতম বক্তাদের তালিকায় ছিলেন দিল্লির জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী।
হিন্দুত্ববিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতার তকমা পড়ে গিয়েছিলো ৩২ বছরের যুবকের গায়ে। সেই আন্দোলনের খবর দেশ-বিদেশের ঝড় তুলেছিলো। গোটা ভারতের যুব সমাজের সামনে অন্যতম দৃষ্টান্ত এই যুবনেতা।
কলকাতায় বামেদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কানাইয়া কুমার রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাম্প্রদায়িকতার তীরে বিদ্ধ করলেন।
এছাড়াও, ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি, তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলে দেশবাসীকে মোদি-মমতার নীতির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র বাঁচাতে লড়াইয়েরও আহবান জানালেন।
কানাইয়া কুমার মঞ্চে তার বক্তব্যে বললেন, বিজেপি’র সভাপতি অমিত শাহ রাজ্যের, মানুষের উন্নয়ন কিংবা গরীব মানুষের উন্নয়নের জন্য রথযাত্রা বের করতে চাননি। রথযাত্রা আসলে তাদের রাজনীতি। সেটা রাজ্যবাসীকেও বুঝতে হবে। রথযাত্রা নথুরামের যাত্রা বলেও তিরস্কার করেন কানাইয়া কুমার।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম করে জিএনইউ’র প্রাক্তন ছাত্রনেতা বলেন, দিল্লিতে বসে মোদি যা করছেন কলকাতায় বসে দিদি একই কাজ করছেন।
দিদি বলতে এখানে মমতা ব্যানার্জিকেই বুঝিয়েছে; সেটা পরিষ্কার করে দিয়ে কানাইয়া বলেন, বিজেপি একটি সম্প্রদায়কে বলছে তাদেরই পাশে আছে। আবার তৃণমূল বলছে আরেকটি সম্প্রদায়কে। দুটি রাজনৈতিক দলই- দুটো সম্প্রদায়কে তোষণ করছে।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আজ যা ভাবেন, গোটা দেশ ভাবে আগামীকাল। এখান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ-বপন হয়েছিলো। বাঙালিই এখানে মূল পরিচয়।
কিন্তু, বিজেপি এই বাঙালি পরিচয়ের মধ্যেই বিভাজন তৈরি করছে। হিন্দু-মুসলিম ভাগ করছে।
পাকিস্তান-ভারত স্বাধীন হয়েছে দ্বিজাতি তত্ত্বে, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ভাষার জন্য। বাঙালিদের শক্তি তাদের বাংলা ভাষা- বলেন কানাইয়া কুমার।
কানাইয়া কুমার আরও বলেন, এক লিটার দুধের জন্য কৃষকের ২৫ টাকা মিলছে, কিন্তু, আপনি বাজার থেকে দুধ কিনছেন ৪৫ টাকায়। বাকি ২০ টাকা যাদের পকেটে যাচ্ছে তাদের মেয়ের বিয়েতে কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর ওই লুটেরাদের হাত থাকে প্রধানমন্ত্রীর পিঠে।
কানাইয়া কুমারের মন্তব্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও পাল্টা বাক্যবাণ ছুঁড়েছেন। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের নগরউন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ওই একটা পুচকে নেতার কথার কী দাম আছে। না পশ্চিমবঙ্গ বুঝে, না মমতা বুঝে; কানাইয়া কুমার। ওর কথার কোনও মূল্য নেই।”
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতা রাহুল সিনহাও। বলেন, “দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই কানাইয়া কুমার এখন তার বাক-স্বাধীনতা দিয়ে এসব মন্তব্য করে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ জানেন, দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি করছেন।”
সব মিলিয়ে বছরের শেষে এই ছুটির মৌসুমে, বাম ছাত্রনেতার এহেন মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতি কিন্তু বেশ সরগরম বলা যায়।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলের সামনে প্রায় খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়া বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক সিপিআই নতুন করে জেগে উঠতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কানাইয়া অস্ত্রের মোক্ষম চাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে- তাতেও সন্দেহ দেখছেন না কলকাতার রাজনৈতিক মহল।
Comments