‘বিরোধী নেতা-কর্মী বা সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেপ্তারের কোনো ইনফরমেশন আমাদের নলেজে নেই’
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নামের অতিথি পাখির দেখা মেলা না মেলার মধ্যেই দেশের দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের একদিন আগেও বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের একের পর এক অভিযোগ, গণহারে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও সম্ভাব্য এজেন্টদের খুঁজে খুঁজে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এ সংক্রান্ত খবরে গণমাধ্যম সয়লাব।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টি কিভাবে দেখছে?
দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন আজ (২৯ ডিসেম্বর) কথা বলেছে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এবং নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “এরকম কিছু যদি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জানাতে হবে। আমরা আমাদের বিধি অনুযায়ী কাজ করবো। আমাদের কাছে অভিযোগ না করলেও, স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি আছে, সেখানে অভিযোগ করতে হবে। যদি অভিযোগ করে থাকেন, তাহলে পরে উনারা ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের কাছেও যদি অভিযোগ করেন, আমরাও সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে অ্যাকশন নেবো।”
বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্ট খুঁজে না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের এজেন্ট খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারবো না। বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজারের মতো প্রার্থী আছেন, একেকজন প্রার্থীর কম করে এজেন্ট হচ্ছেন ছয়শো-সাতশো জন। এখন আমরা কি তাদের সবাইকে খুঁজে দিতে পারি?”
ভোটকেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থীদের প্রতিনিধিশূন্য করতেই তাদের সম্ভাব্য এজেন্টদের আটক করছে পুলিশ- এমন অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, “এই ধরনের ফাঁকা অভিযোগের কী সমাধান আমরা করতে পারবো? তারপরও কোনো প্রার্থীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
আপনারা বরাবরই বলে আসছেন যে- সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন, আর তো মাত্র একদিন বাকি, তাহলে কখন সেই ব্যবস্থা নেবেন? এই প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই আজকে থেকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। তাদের কাছে অভিযোগ জানালে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।”
সংবাদমাধ্যমে বিরোধী প্রার্থীদের যেসব অভিযোগের খবর প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো আপনারা আমলে নিচ্ছেন কী না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখন উনাদের কাছে অভিযোগ না করে যদি সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন, তাহলে সংবাদমাধ্যমও কিছু দিতে পারবে না, আমরাও কিছু করতে পারবো না। এটি শুধুমাত্র পাবলিসিটির মতো হবে। উনারা অভিযোগ করবেন, এটি প্রচারিত হবে। কিন্তু, অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে ব্যবস্থা, সে ব্যবস্থা তো নিতে পারবো না।”
যার যার নির্বাচনী এলাকায় ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিসহ নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য প্রতিনিধিদের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, “স্থানীয়ভাবে যদি প্রার্থীদের এসব অভিযোগ আমলে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা দেখবো।”
বিরোধীদল অভিযোগ করছে, তাদের নেতা-কর্মী এবং সম্ভাব্য এজেন্টদের গণহারে গ্রেপ্তার চলছেই। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “বিরোধীদলের নেতা-কর্মী বা সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেপ্তারের কোনো ইনফরমেশন তো আমাদের নলেজে নেই। কেউই তো বলছেন না যে নির্বাচনী এজেন্ট খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রার্থীরা তো আমাদের কাছে কমপ্লেইন করবেন। আমাদের কাছে না করুন- জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে কমপ্লেইন করতে পারেন। ওখানে স্থানীয় প্রশাসন আছে। আমাদের যতো ধরনের বাহিনী আছে- সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গ্রাম চৌকিদার পর্যন্ত, সবাই এখন নির্বাচনী মাঠে। ওখানে আমরা কয়েক হাজার ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গেছে। তাদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন, আপনাদের কী সমস্যা? সচিবালয়ে কিন্তু এখন কিছু নেই। সব কিছু আমরা ডেলিগেট করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
সম্ভাব্য এজেন্টদের আটকের ব্যাপারে পুলিশের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, “পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার, সবাই কি তাদের হোস্টাইল। সবাই হোস্টাইল হলে কেমনে হবে? আপনাকে তো চিন্তা করতে হবে। রিটার্নিং অফিসারও ঠিক না, সেনাবাহিনীও ঠিক না, পুলিশও ঠিক না, কেউই যদি ঠিক না হয়ে থাকে, এটা তো মিথ্যে কথা। প্রার্থীরা ওখানে গিয়ে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন। কে হতে দিচ্ছে না নির্বাচনী এজেন্ট? নির্বাচনী এজেন্ট খুঁজে না পেলে তো কারও কিছু বলার নেই।”
“তাছাড়া, নির্বাচনী এজেন্ট সবাইকে দিতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক প্রার্থী আছেন যারা নির্বাচনী এজেন্ট দিতে পারেন না। ভোট দিবে জনগণ। এজেন্টরা মূলত সনাক্ত করেন। এজেন্টরা ভোট দেন না। এখন শনাক্ত করার বিষয়টাও কিন্তু অনেকটা উঠে গেছে। যেহেতু ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থাকে, পোলিং অফিসাররাই এটি শনাক্ত করতে পারেন,” যোগ করেন হেলালুদ্দীন।
সচিব বলেন, “ইভিএম কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টও দরকার হবে না। কারণ- সেখানে ভোটাররা আঙ্গুলে ছাপ দেবেন, আঙ্গুলে ছাপ দিলেই তারা সনাক্ত হয়ে যাবেন। তিনি আঙ্গুলে ছাপ না দিলে তো মেশিনই ওপেন হবে না। প্রার্থীকে নেতা-কর্মীদের মধ্য থেকে নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ করতেই হবে। তিনি যদি না পান, এটা উনার ব্যর্থতা।”
Comments