জনসংখ্যা বৃদ্ধি যে দেশে সুখবর!

Japan children
জাপানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি সুখবর বটে। ছবি: রয়টার্স

বর্তমান পৃথিবীতে অধিকাংশ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এক ধরণের আতঙ্কের খবর। এমন পরিস্থিতিতে অল্পকিছু দেশ রয়েছে যেখানে জনসংখ্যা প্রতিবছর কমছে। সে দেশগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্যে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দেওয়া হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সংবাদ সেসব দেশে একটি সুখবর হিসেবে বিবেচিত। এশিয়ার তেমন একটি দেশের নাম জাপান।

যখন কাৎসুনোরি এবং কাউরি ওসাকা দম্পতি তাদের প্রথম সন্তান নিলেন, তখন তারা বসবাস করছিলেন মধ্য জাপানের ২০ লাখের বেশি লোকের শহর নাগোয়ার একটি ছোট্ট ঘিঞ্জি অ্যাপার্টমেন্টে। আরও অনেক নব দম্পতির মতো তারাও চেয়েছিলেন এই শহরেই তাদের সন্তানকে বড় করে তুলবেন। কিন্তু, এমন ঘনবসতি ও ব্যয়বহুল শহরে যখন শিশুদের যত্ন নেওয়ার সুব্যবস্থার অভাব তাদের ভাবিয়ে তুললো, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন শহর ছাড়ার।

সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে কাৎসুনোরি বলেন, “নতুন দম্পতি বিশেষ করে, ২০ বা ৩০ বছরের মানুষগুলো এই শহরে বড় বাসা নিয়ে বসবাস করার সামর্থ্য রাখে না। তাই ভাবলাম যে আমরা যদি আরও সন্তান নেই তাহলে তাদেরকে এই শহরে রেখে মানুষ করা সম্ভব হবে না।”

তাই তারা চলে আসেন নাগি শহরে। পশ্চিম জাপানের এই শহরটিতেই কাৎসুনোরি বেড়ে উঠেছিলেন। এই শহরেই তারা সৃষ্টি করলেন এক সাফল্যের গল্প- যা জাপানের নিম্নমুখী জন্মহারের মুখে এনেছে ফেলেছে আশার আলো।

বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক মহাশক্তি জাপানে জনসংখ্যা কমছে সেই ১৯৭০ এর দশক থেকে। এরপর থেকে দেশটির সরকার কতো রকম চেষ্টাই না করেছে দম্পতিদের সন্তান নিতে আগ্রহী করতে।

নাগোয়া শহরের মতো ব্যস্ততা নেই নাগি শহরে। এই শহরটির জনসংখ্যা মাত্র ৬ হাজার। চারদিকে রয়েছে শান্ত পরিবেশ। সন্তানদের সুন্দর মতো গড়ে তোলার একটি আদর্শ শহর হিসেবে নাগির নাম আজ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।

শহরটির পরিবেশ শুধু নয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্য একটি বিষয়। অর্থাৎ, নাগি শহরে দম্পতিদের তাদের সন্তানদের জন্যে দেওয়া হয় নগদ অর্থ।

দম্পতিরা তাদের প্রথম সন্তানের জন্যে এককালীন পেয়ে থাকেন ১ লাখ ইয়েন বা ৮৭৯ মার্কিন ডলার। দেড় লাখ ইয়েন (১,৩৩৫ ডলার) দেওয়া হয় দ্বিতীয় সন্তানের জন্যে। পরিবারের পঞ্চম সন্তানের জন্যে দেওয়া হয় ৪ লাখ ইয়েন বা সাড়ে ৩ হাজার ডলার।

নাগি শহরে সন্তানদের জন্যে এই আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে ২০০৪ সাল থেকে। শহরটির জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্যে হাতে নেওয়া হয়েছে আরও বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প। যেমন, বাড়ি ভাড়ায় ভর্তুকি, ছুটি, শিক্ষা ও চিকিৎসা ভাতা। আর এসব সুযোগ-সুবিধা শহরটির জন্যে এনে দিয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুখবর।

ওসাকা দম্পতি যে মহল্লায় থকেন সেখানে অধিকাংশ দম্পতির রয়েছে তিন বা তারও বেশি সন্তান। এমন চিত্র জাপানের অন্যান্য জায়গায় সাধারণত দেখা যায় না।

এদিকে, দ্য জাপান টাইমস এক প্রতিবেদনে আজ (২ জানুয়ারি) বলা হয়, ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশটিতে ২০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২৫ হাজার। যা গত বছরের তুলনায় ২০ হাজার বেশি।

জাপানের জনসংখ্যার বর্তমান পরিস্থিতি

জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০১৭ সালে দেশটিতে জন্ম নেয় ৯ লাখ ৫০ হাজার শিশু। কিন্তু, সে বছর মারা যান ১৩ লাখ মানুষ যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১২ কোটির বেশি হলেও সেখানে শিশুদের সংখ্যা মোট জনগণের ১২.৩ শতাংশ।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০৬৫ সালে জাপানের জনসংখ্যা কমে এসে দাঁড়াবে ৮ কোটিতে।

যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার ১৮.৯ শতাংশ শিশু, বা চীনে ১৬.৮ শতাংশ এবং ভারতে ৩০.৮ শতাংশ, সেই তুলনায় জাপানে শিশুদের হার বেশ কম বৈকি। তাই সূর্যোদয়ের দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি সুখবর বটে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP hosts discussion on first anniversary of July uprising

Leaders recall sacrifices, call for unity at Dhaka gathering

19m ago