দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে জয়ী কুমিল্লা

ছবি: ফিরোজ আহমেদ।

এইতো বছর খানেক আগেও অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক ছিলেন স্টিভ স্মিথ। আর তার ডেপুটি ডেভিড ওয়ার্নার। তবে বল টেম্পারিং কাণ্ডে নিষিদ্ধ হয়েছেন দুই জনই। এমনকি দুই তারকার সম্পর্কেও লাগে ফাটল। এক ফ্রেমে দুইজনকে আর দেখা যায়নি। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সুবাদে আবারো একই ফ্রেমে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এ দুই তারকা।

এদিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে টস করতে এসেছিলেন স্মিথ। আর সিলেট সিক্সার্সের হয়ে ডেভিড ওয়ার্নার। টসে আগে হাত মেলালেন। এক ফ্রেমে বন্দীও হলেন। টস ভাগ্য জিতলেন স্মিথ, তেমনি দিনশেষে ম্যাচও জিতে নিলেন। কুমিল্লাকে ১২৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি ওয়ার্নারের দল। ১ বল বাকি থাকতেই হার মানতে হয় ৪ উইকেটে।

কাগজে কলমে চলতি আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি দল কুমিল্লা ও সিলেটই। অস্ট্রেলিয়ার দুই সেরা তারকা ছাড়াও দুই দলে রয়েছেন দারুণ সব বিদেশী খেলোয়াড়। তেমনি দারুণ দেশী খেলোয়াড়ও রয়েছে দলদুটিতে। তাই দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে কে শেষ হাসি হাসেন তা নিয়ে ছিল তুমুল আগ্রহ। আর এদিন হাসিটা হেসেছেন সালাহউদ্দিনের শিষ্যরা।

তবে জয় পরাজয় ছাপিয়ে এ ম্যাচে সবচেয়ে বড় আলোচনায় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ওয়ার্নারের আউট। তাকে আউট করে দিলেন বিপিএলে অভিষেক ম্যাচ খেলতে আসা তৌহিদ হৃদয়। তাও ভাগ্যের জেরে টিকে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু আম্পায়ারের বড় ভুলের বলি হলেন তিনি। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে যতক্ষণে ঢুকলেন হৃদয়, তার আগেই ঢুকেছেন ওয়ার্নার। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে ওয়ার্নারকেই আউট দিলেন টিভি আম্পায়ার।

ওয়ার্নার তখন আউট না হলে হয়তো তাদের সংগ্রহটা আরও বড় পারতো। হয়তো না। তবে প্রশ্ন উঠেছে অনেক। এদিন ৫৬ রানেই প্রথম পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে সিলেট। তাতে শঙ্কা জেগেছিল একশ রানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার। তবে সে শঙ্কা দূর হয় ষষ্ঠ উইকেটে অলক কাপালীর সঙ্গে নিকোলাস পুরানের করা ৫৫ রানের জুটিতে। ইনিংস মেরামত তো করেছেনই সঙ্গে দলকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রানের ইনিংস খেলেন পুরান। ২৬ বলের ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কাও মেরেছেন এ ক্যারিবিয়ান। ২০ বলে ১৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন কাপালী। এছাড়া আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। কুমিল্লার পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ শহীদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

স্বল্প পুঁজি নিয়েও লড়াইটা ভালোই করে সিলেট। লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে নেমেছিলেন ক্যারিবিয়ান তারকা এভিন লুইস। তবে বরাবরের মতো ঝড় তুলতে পারেননি তিনি। তাকে থামালেন আল-আমিন হোসেন। বড় দুশ্চিন্তা ছিলেন স্টিভ স্মিথ। তাকেও আউট করলেন আল-আমিন। যদিও তার আউটে রয়েছে বড় বিতর্ক। হটস্পট তো দূরের কথা, স্নিকোমিটার কিংবা আল্ট্রাএজ ছাড়াই আল-আমিনের নেওয়া রিভিউতে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কটবিহাইন্ড আউট দিয়েছেন তৃতীয় আম্পায়ার।

এরপর নেপালের লেগি সন্দিপ লামিচানের জাদু। ৪ ওভার বোলিং করে ২টি উইকেট তো নিয়েছেনই, খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। তাতেই কুমিল্লাকে চেপে ধরে তারা। তবে এক প্রান্তে অনড় ছিলেন তামিম ইকবাল। ৩৫ রানের ইনিংসে তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছিলো কুমিল্লা। কিন্তু তাকে দারুণ এক থ্রোতে রানআউট করে থামালেন পুরান। ফলে স্বপ্ন চওড়া হয় সিলেটের।

কিন্তু পাকিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের ব্যাটেই ফিকে হয়ে যায় সে স্বপ্ন। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংই যার মুল অস্ত্র তিনি কিনা শেষ পর্যন্ত ব্যাট করলেন দেশে শুনে। দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। খেলেন হার না মানা ৩৯ রানের ইনিংস। ২৫ বলের এ ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে রয়েছে ২টি বিশাল ছয়। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট সিক্সার্স: ২০ ওভারে ১২৭/৮ (লিটন ১, ওয়ার্নার ১৪, হৃদয় ৮, আফিফ ১৯, সাব্বির ৭, পুরান ৪১, কাপালী ১৯, তাসকিন ৪, লামিচানে ১*, আল-আমিন ১*; রনি ০/১০, মেহেদী ২/২৪, মালিক ০/২০, শহীদ ২/২২, আফ্রিদি ১/২৯, সাইফউদ্দিন ২/১৩)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৫ ওভারে ১৩০/৬ (তামিম ৩৫, লুইস ৫, ইমরুল ০, স্মিথ ১৬, মালিক ১৩, বিজয় ৫, আফ্রিদি ২৯*, সাইফউদ্দিন ৫*; তাসকিন ০/৩১, ইরফান ১/১৯, আল-আমিন ২/২৭, আফিফ ০/৭, কাপালী ০/২৪, লামিচানে ২/১৬)।

ফলাফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

What are the five charges against Hasina at ICT?

Former home minister Kamal and ex-IGP Mamun have also been accused

42m ago