রোমাঞ্চকর ম্যাচ শেষে সিলেটের জয়
কাগজে কলমে শক্তির বিচারে চিটাগং ভাইকিংসের চেয়ে অনেক এগিয়ে সিলেট সিক্সার্স। তবে আসরের শুরুটা কাগজে কলমের হিসেবে হয়নি। সিলেট হার দিয়ে শুরু করলেও জয় দিয়ে শুরু করেছিল চিটাগং। তাও আবার গত আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। আত্মবিশ্বাসটা তাই টগবগ করে ফুটছে। মাঠেও দেখালেন তার প্রতিফলন। দারুণ লড়াই করে শেষ পর্যন্ত সিলেটের কাছে ৫ রানের ব্যবধানে হারতে হয় মুশফিকুর রহিমের দলকে।
শেষ দিকে একাই ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক। আগের ম্যাচের মতো এদিনও বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। এরপর ব্যাট হাতেও খেলেছেন বিধ্বংসী এক ইনিংস। শেষ ওভারে যখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৪ রানের তখন আল-আমিন হোসেনকে মারলেন দুটি ছক্কা। তাতে টানা হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল সিলেট। তবে শেষ রক্ষা করতে পারেননি চিটাগং। ম্যাচে সমতা আনতে শেষ বলে দরকার ছিল ছক্কার। ঠিকভাবে না লাগাতে পারায় ১ রান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। আসরে প্রথম জয় পায় সিলেট।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই আফগান রিক্রুট মোহাম্মদ শাহজাদকে হারায় চিটাগং। তবে দ্বিতীয় উইকেটে মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে প্রাথমিক চাপ সামলে নেন আরেক ওপেনার ক্যামেরুন ডেলপোর্ট। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। তবে বড় ক্ষতি করার আগেই দারুণ এক থ্রোতে ডেলপোর্টকে রানআউট করে এ জুটি ভাঙেন সন্দিপ লামিচানে। আর এ জুটি ভাঙতেই আবার এলোমেলো। স্কোরবোর্ডে ৩১ রান যোগ করেই হারিয়ে ফেলে চার বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে।
তবে ষষ্ঠ উইকেটে ফ্রাইলিঙ্ককে নিয়ে আবার প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন সিকান্দার রাজা।৩৭ রানের জুটিতে দলকে স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন তারা। তবে রাজার বিদায়ের পর আর পেরে ওঠেনি দলটি। তবে এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন ফ্রাইলিঙ্ক। খেলেন হার না মানা ৪৪ রানের ইনিংস। ২৪ বলের ইনিংসে ১টি চারের সঙ্গে ছিল ৪টি ছক্কার মার। এছাড়া ডেলপোর্ট ৩৮, সিকান্দার রাজা ৩৭ ও আশরাফুল ২২ রান করেন। সিলেটের পক্ষে ২৮ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ২টি উইকেট পেয়েছেন অলক কাপালী।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এদিন টস জিতেছিল সিলেট সিক্সার্সই। আসরে প্রথমবারের মতো কোন অধিনায়ক ফিল্ডিং না নিয়ে নিলেন ব্যাটিং। তবে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল ভয়ানক। আগের ম্যাচের মতো এদিনও শুরুতে বিধ্বংসী রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের রবি ফ্রাইলিঙ্ক। প্রথম দুই ওভারে ৫ রান খরচ করে তুলে নিলেন সিলেটের দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ওভারে উইকেট নিলেন নাঈম হাসানও। ফলে দলীয় ৬ রানে নেই প্রথম সারির ৩ উইকেট।
এরপর অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের হাত ধরে প্রতিরোধের গল্প। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ধারা ছাড়া দেখে শুনে খেললেন অধিনায়ক। সঙ্গী হিসেবে পেলেন আফিফ হোসেনকে প্রথমে, পরে নিকোলাস পুরানকে। চতুর্থ উইকেটে আফিফের সঙ্গে গড়লেন ৭১ রানের জুটি। আর পুরানের সঙ্গে করেছেন ৭০ রানের জুটি। এ দুটি জুটিতেই লড়াকু সংগ্রহ পায় সিলেট।
৪৭ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৯ রানের ইনিংস খেললেন ওয়ার্নার। তবে ওয়ার্নারকে ছাড়িয়ে দিনশেষে নায়ক হয়েছেন পুরান। ৩২ বলে সমান সংখ্যক ৩টি করে চার ও ছক্কায় খেলেছেন হার না মানা ৫২ রানের ইনিংস। দারুণ ব্যাটিং করেছেন আফিফ হোসেনও। ২৮ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৫ রান করেছেন এ অলরাউন্ডার। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৮ রানের স্কোর পায় সিলেট। চিটাগংয়ের পক্ষে ২৬ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন ফ্রাইলিঙ্ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সিক্সার্স: ২০ ওভারে ১৬৮/৫ (লিটন ০, ওয়ার্নার ৫৯, নাসির ৩, সাব্বির ০, আফিফ ৪৫, পুরান ৫২*, কাপালী ২*; ফ্রাইলিঙ্ক ৩/২৬, নাঈম ১/২০, রাজা ০/২৮, রাহী ০/৩৪, খালেদ ১/৩৩, মোসাদ্দেক ০/২৫)।
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৬৩/৭ (শাহজাদ ৬, ডেলপোর্ট ৩৮, আশরাফুল ২২, মুশফিক ৫, রাজা ৩৭, মোসাদ্দেক ৭, ফ্রাইলিঙ্ক ৪৪*, নাঈম ০, সানজামুল ২; তাসকিন ৪/২৮, ইরফান ০/৩৫, নাসির ০/১০, আল-আমিন ০/৫৭, আফিফ ০/৬, কাপালী ২/৬)।
ফলাফল: সিলেট সিক্সার্স ৫ রানে জয়ী।
Comments