রিজার্ভ চুরি: ফিলিপাইনে একজনের দণ্ড, বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক এক শাখা ব্যবস্থাপককে আজ দোষী সাব্যস্ত করেছে দেশটির আদালত। অর্থ পাচারসহ আটটি অভিযোগে দণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে। প্রতিটি অভিযোগে সাত বছর করে মোট ৩২ থেকে ৫৬ বছরের সাজা ও সেই সঙ্গে তাকে আরও ১০৯ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এই ঘটনায় অর্থ স্থানান্তরের সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়েছিল। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি যাওয়ার পর প্রায় এক মাস ঘটনাটি চেপে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে মার্চ মাসে ফিলিপাইনে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের এ সংক্রান্ত খবর বের হলে ঘটনাটি স্বীকার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঘটনার জের ধরে সেসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য  হয়েছিলেন আতিউর রহমান। সেই সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুজন ডেপুটি গভর্নরকেও।

কারাদণ্ড পাওয়া রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো। ছবি: রয়টার্স

রিজার্ভ চুরির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠিত হয়, তারা যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন। এর পর কয়েক দফায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দিনক্ষণ জানানো হলেও সেই প্রতিবেদন আজও প্রকাশ করা হয়নি।

রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, যে ব্যাংক কর্মকর্তাকে সাজা দেওয়া হলো তিনি ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। তার নাম মায়া সান্তোস দেগুইতো। এর মাধ্যমে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাইবার চুরির ঘটনায় প্রথম কাউকে সাজা দেওয়া হলো।

রিজার্ভ চুরির পরের ঘটনা প্রবাহ

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন থেকে কিছু অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও বাকি অর্থ ফিরে পাওয়া এখনো অনিশ্চিত। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় এই ঘটনার কারা দায়ী সেটিও জানা সম্ভব হচ্ছে না।

ঘটনা তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে সেবছর ১৫ মার্চ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত কমিটি গত ৩০ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২২ সেপ্টেম্বর রিজার্ভের অর্থ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের ঘোষণা দিলেও মাত্র একদিন আগে জানিয়ে দেন যে প্রতিবেদনটি আপাতত প্রকাশ করা হবে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

তবে এর পর বিভিন্ন সময় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার ব্যাপারে কথা উঠলেও শেষ পর্যন্ত এর স্থান হিমাগারে হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

সর্বশেষ, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য গতকাল বুধবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।

Comments

The Daily Star  | English

Trump says Iran has 'maximum' two weeks, dismisses Europe peace efforts

Israel's war with Iran entered its second week on Friday with the Israeli military chief warning of a "prolonged campaign"

1h ago