সুপার ওভারের ইতিহাস গড়া ‘সুপার আনন্দ’ মুশফিকদের

শেষ পাঁচ ওভারের আগে ম্যাচে ছিল না কোন উত্তেজনা। কিন্তু শেষের জন্যই যেন জমা থাকল সব বারুদ। খুলনা টাইটান্স-চিটাগাং ভাইকিংসের লড়াই হঠাৎই তুমুল জমে উঠে হয়ে গেল টাই। পরে বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম সুপার ওভারের রোমাঞ্চে মিলল ফয়সালা। টাইটান্সকে টানা চতুর্থ হারের হতাশায় পুড়িয়ে সুপার ওভারে সুপার আনন্দে মেতেছে মুশফিকুর রহিমের দল।

শেষ পাঁচ ওভারের আগে ম্যাচে ছিল না কোন উত্তেজনা। কিন্তু শেষের জন্যই যেন জমা থাকল সব বারুদ। খুলনা টাইটান্স-চিটাগাং ভাইকিংসের লড়াই হঠাৎই তুমুল জমে উঠে হয়ে গেল টাই। পরে বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম সুপার ওভারের রোমাঞ্চে মিলল ফয়সালা। টাইটান্সকে টানা চতুর্থ হারের হতাশায় পুড়িয়ে সুপার ওভারে সুপার আনন্দে মেতেছে মুশফিকুর রহিমের দল।

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বারবার রঙ বদলেছে ম্যাচের চেহারা। কখনো হেলেছে চিটাগাং ভাইকিংসের দিকে, এরপরই আবার পড়িমরি করে এসে তাদের টেক্কা দিয়েছে খুলনা টাইটান্স। বিপিএলে প্রথমবার টাই হওয়া ম্যাচ তাই গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে মাত করে উৎসব করেছে মুশফিকুর রহিমরা।

সুপার ওভারে আগে ব্যাট করে ভাইকিং করেছিল ১১ রান। জবাবে ১০ রান করতে পেরেছে টাইটান্স।

এর আগে শেষ দুই ওভারে জেতার জন্য ২৩ রান দরকার ছিল চিটাগাং ভাইকিংসের। জুনায়েদ খানের করা ১৯তম ওভার থেকে এল মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে ভাইকিংসের সমীকরণ হয়ে যায় তাই কঠিন। আরিফুল হকের করা ওই ওভারে কঠিন কাজ সহজ করে ফেলেন নাঈম হাসান আর রবি ফ্র্যাইলিঙ্ক।

আরিফুলের প্রথম বল ডট, পরের বলে নাঈমের ছক্কা, পরের বলে নাঈম আউট। এরপর দুই বলে ফ্র্যাইলিঙ্কের টানা দুই ছয়। ম্যাচ তখন টাই। এক বল এক রানের সহজ সমীকরণ আবার মেলাতে লেগে যায় গোলমাল। শেষ বলে রান আউটে কাটা পড়েন ফ্রাইলিঙ্ক।

বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম কোন ম্যাচ টাই। সেখানেই বাজিমাত ভাইকিংসের। এই নিয়ে তিন ম্যাচের দুইটিতে জিতল ভাইকিংস। 

শেষের উত্তেজনার আগে এই ম্যাচও এগুচ্ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে গতিতেই। ১৫২ রান তাড়ায় মোহাম্মদ শেজহাদ ফেরেন দ্রুতই। তবে বিপদে পড়েনি চিটাগাং। মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় একাদশে এসে ইয়াসির আলি দেন ছন্দে থাকার প্রমাণ। গত কদিন থেকে সব পর্যায়েই রানে ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। এবার তৃতীয় ম্যাচে সুসযোগ পেয়ে একাদশে জায়গা পাকাপোক্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

দ্বিতীয় উইকেটে ক্যামেরন ডেলপোর্টের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটিতেই রানই অবদান বড়। ১৭ রান করে ডেলপোর্ট ফিরলে মুশফিকের সঙ্গে গড়ে উঠে ৩৫ রানের আরেক জুটি। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও আত্মাহুতিতেই শেষ হয়েছে ইয়াসিরের ইনিংস। ৩৪ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ৪১ করা ইয়াসির শরিফুলকে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ স্কয়ার লেগে।

এরপরই যেন ছন্দপতন। সিকান্দার রাজা ব্র্যাথওয়েটের বলে বোল্ড হন শূন্য রানেই। মুশফিকের সঙ্গে যোগ দিয়ে মোসাদ্দেক পরিস্থিতি করে দেন কঠিন। দ্রুত রান তুলার দাবির মধ্যে ১২ বলে ১২ করে ইনিংস থামান তিনি। আশা ভরসা হয়ে থাকা মুশফিক ব্র্যাথওয়েটকে স্কুপ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে তুলে দেন ক্যাচ। তখনো ১৬ বলে জিততে ৩১ দরকার ভাইকিংসের।

টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে এদিনও সেই পুরনো নিয়মেই ছুটেন খুলনার দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। প্রথম দুই-তিন ওভার মেরেটেরে বিশের ঘরে গিয়েই কুপোকাত। পুরো টুর্নামেন্টের এই ধারা বজায় রেখেছেন এবারও। ১০ বলে ১৮ করে স্টার্লিং আর ১৫ বলে ২০ করে বিদায় নেন জুনায়েদ।

এরপরই গড়ে উঠে বড় জুটি। মিডল অর্ডার থেকে রান আসছিল না খুলনার। এই ম্যাচে সেই দশা কেটেছে। তৃতীয় উইকেটে ৭৬ রানের জুটিতে ডেভিড মালান আর মাহমুদউল্লাহ দেখান বড় রানের দিশা।

তবে এই দুজন ফেরাতে সেটা আর হয়ে উঠেনি তাদের। ৩ চার আর এক ছক্কায় ৪৩ বলে ৪৫ করা মালান ফেরেন রান বাড়ানোর তাড়ায়। আবু জায়েদ রাহিকে তুলে মারতে গিয়ে তার ক্যাচ যায় লঙ অনে সিকান্দার রাজার হাতে।

চোট কাটিয়ে ফিরে কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ঝড় তুলার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সানজামুল ইসলামের স্পিনে কাটা পড়েন তিনি। সানজামুলকে মারতে গিয়ে পরের বলে দৌড় থামান মাহমুদউল্লাহও।

আরিফুল হক শেষের ঝড় তুলতে পারেননি, নাজমুল হোসেন শান্ত বরাবরের মতই ব্যর্থ। কোনরকমে দেড়শ পেরিয়েই তাই থামতে হয় টাইটান্সকে। তবে ওই রান নিয়েই বোলারদের দৃঢ়তায় তুমুল লড়াই করে ম্যাচ টাই করে ফেলে মাহমুদউল্লাহর দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইটান্স:  ২০ ওভারে ১৫১/৬ (স্টার্লিং ১৮, জুনায়েদ ২০, মালান ৪৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, ব্র্যাথওয়েট ১২, শান্ত ৬, আরিফুল ৭*, মাহিদুল ৪*; ফ্রাইলিঙ্ক ১/৩০, সানজামুল ২/৩৭, নাঈম ১/১৬, মোসাদ্দেক ০/৭, খালেদ ১/২৮, রাহী ১/২৯)

চিটাগাং ভাইকিংস:   ২০ ওভারে ১৫১/৮ (শেহজাদ ১০, ডেলপোর্ট ১৭, ইয়াসির ৪১, মুশফিক ৩৪ , সিকান্দার ৪, মোসাদ্দেক ১২, ফ্রাইলিঙ্ক ২৩, নাঈম ৮, সানজামুল ০*  ; জুনায়েদ ১/২৪, ব্র্যাথওয়েট ২/৩০, শরিফুল ২/৩১, স্টার্লিং ০/৯, তাইজুল ১/২৩, মালান ০/১৪, আরিফুল ০/১৮)

সুপার ওভার

চিটাগাং ভাইকিংস: ১১/১  (ডেলপোর্ট,  ফ্র্যাইলিঙ্ক ৪, মুশফিক ১*  ; জুনায়েদ ১/১১)

খুলনা টাইটান্স:  ১০/১ ( ব্র্যাথওয়েট ১, মালান ৬ , স্টার্লিং ৩ ; ফ্র্যাইলিঙ্ক ০/১০  )

ফল: চিটাগাং ভাইকিংস সুপার ওভারে ১ রানে জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago