কলকাতায় ১৬ কুকুরছানা হত্যাকাণ্ডে তোলপাড়

এএফপি ফাইল ছবি

কলকাতার ১৬টি কুকুরছানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী, সঙ্গীত শিল্পী, সাহিত্যিক সবাই হতবাক এমন নৃশংস পাশবিক ঘটনায়। স্তম্ভিত গোটা সমাজ।

ইতিমধ্যেই ১৬ টি কুকুরছানার মৃতদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সৌজন্যে দেশ-বিদেশের অনেকেই দেখেছেন।

রোববার খুন হওয়া শিশু কুকুর গুলোর মৃতদেহের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। আর আজ সোমবার আবার নতুন ভিডিও।

সেখানে দেখা যাচ্ছে, হাতে গ্লাভ পরা এক তরুণী ও মধ্যবয়স্কা নারী নির্মমভাবে কুকুরছানাগুলোকে পিটিয়ে মারছেন। নতুন এই ভিডিও দেখে ঘৃণায় ফুঁসছেন যারা ভিডিও দেখছেন তারা।

কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যে কুকুরছানা খুনের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। নীল রতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কমিশনের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যার কিছু আগে কলকাতার শিয়ালদাহ এলাকার নীল রতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (এনআরএস হাসপাতাল নামে পরিচিত) নার্সিং হোস্টেলের পাশের একটি রাস্তা দিয়ে প্লাস্টিকে জড়ানো অবস্থায় কুকুরছানাগুলোর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

মৃতদেহগুলোর পাশে নিথর অবস্থায় পড়ে ছিল আরও কয়েকটি পূর্ণবয়স্ক কুকুরও। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুটি কুকুর বাচ্চা কুকুরগুলোর মা হতে পারে। বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ওই দুটি কুকুরকে উদ্ধার করে দ্রুত বেল গাছিয়া পশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বাকি শিশু কুকুরগুলোর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ওই হাসপাতালের মর্গে। আজ সোমবার সেগুলোর ময়না তদন্ত করা হবে।

আসলে কী ঘটেছিল সেটা নিয়েই কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে এতোগুলো কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর। কিন্তু সোমবার যখন নতুন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল দুজন ওই কুকুরগুলোকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে সেই ভিডিও দেখে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত যারা যায়, নীল রতন হাসপাতালের নার্সিং হোস্টেলের একজন নারী কেয়ারটেকার এবং একজন নার্সিং স্টাফ মিলে এই কুকুরছানাগুলোকে প্রথমে ইঁদুর মারার বিষ খাওয়ায়। বিষ খেয়ে যখন কুকুরছানাগুলো নিস্তেজ হয়ে গেলে পিটিয়ে মারা হয়।

যেখানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার পাশে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ছাত্রবাসা। ওই ছাত্রাবাস থেকে তোলা ভিডিও থেকে পুরো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এন আর এস হাসপাতালের একজন চিকিৎসক সুবিমল মজুমদার বলেন, এটা অত্যন্ত কষ্টের ঘটনা। যা বলে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আমরা সকাল থেকেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।

যে ছাত্রাবাস থেকে এই খুনের দৃশ্য ভিডিও করা হয়েছে সেই ছাত্রাবাসের একজন ছাত্র (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। প্রথমে আমরা ভিডিও করেনি। কেননা এই দৃশ্য শুধু ভিডিও করে মজা নেওয়ার জন্য নয়। যখন আমরা চিৎকার করে ওই খুনি দু’জনকে থামাতে পারিনি তখনই আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নেই যে, এই খুনিদের মুখ সবার সামনে উন্মোচন করব।

“কুকুরগুলোকে কি নৃশংসভাবে খুন করা হলো আমাদের চোখের সামনে, আমরা কেউ বাঁচাতেই পারলাম না। কারণ নার্সিং হোস্টেল এবং ছাত্রদের হোস্টেলের মাঝে বড় একটা দেওয়াল আছে সেটা টপকানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না”- এই কথা বলতে বলতে চোখে পানি এসে যায় প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রের।

কুকুর হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশু প্রেমী দেবশ্রী রায়। তিনি জানান, আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এভাবে চলতে পারে না।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, এই দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। এটা খুবই অন্যায় কাজ এবং মানবিকতা বিরুদ্ধ।

প্রতিবাদ জানিয়েছেন সঙ্গীত শিল্পী সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত প্রমুখ। তাদের বক্তব্য, কুকুরগুলো যদি কারো বিরক্তির কারণ হয় তবে আরও অনেক উপায় ছিল। কিন্তু তাই বলে এইভাবে খুন করা হবে অবুঝদের।

ওই খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন তাদের মতো আরও অনেকেই।

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

17h ago