মায়েদের ভালোবাসাতেই ঢাকাকে মাটিতে নামালো রাজশাহী
মা দিবস নয় আজ। কিন্তু তারপরও মায়েদের সম্মান দেখাতে জার্সিতে মায়ের নাম লিখে মাঠে নামলেন রাজশাহী কিংসের খেলোয়াড়রা। তখন ধারাভাষ্যে ড্যানি মরিসন বললেন, মায়েদের জন্য আলাদা দিবসের কি দরকার হয়, প্রতিটা দিনই তো মা দিবস। আর রাজশাহীর পরিকল্পনা পুরোপুরিই কাজে দেয়। মায়েদের অনুপ্রেরণাতেই হয়তো এদিন উড়তে থাকা ঢাকা ডায়নামাইটসকে মাটিতে নামিয়ে আনে রাজশাহী কিংস। ম্যাচ জিতে নেয় ২০ রানে।
অথচ চলতি আসরে এর আগে কোন ম্যাচেই হার দেখেনি ঢাকা। এমনকি অধিকাংশ ম্যাচ তারা জিতে নিয়েছে দাপটের সাথেই। কিন্তু এদিন রাজশাহীর কাছে হারতে হয় দলটিকে। অথচ কাগজে কলমে তাদের ঢের এগিয়ে ছিল সাকিব আল হাসানের দল।
কাজে লেগেছে অভিজ্ঞদের একাদশে সুযোগ দেওয়াটাও। সিলেটের উইকেটে আগের দিন বেশ সংগ্রামই করেছেন ব্যাটসম্যানরা। তবে তার মাঝে ব্যতিক্রম ছিলেন অভিজ্ঞ সেনানী অলক কাপালী ও শামসুর রহমান। তাই দেখেই হয়তো এদিন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মার্শাল আইয়ুব ও শাহরিয়ার নাফীসকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করলেন। আর এ দুই ব্যাটসম্যানই ছিলেন এদিন রাজশাহীর ব্যাটিংয়ের চালিকা শক্তি।
নাফীস ও মার্শালকে দলে নেওয়ায় কপাল পোড়ে দুই তরুণ সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হকের। অবশ্য চলতি বিপিএলে এ দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের নামের প্রতি সুবিচারও করতে পারছিলেন না। আর একাদশে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন এ দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। নিজেদের কাজটা করলেন দারুণ ভাবেই। দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছেন ৭৫ রানের জুটি।
কিন্তু এ জুটি ভাঙার পর তরুণ জাকির হাসানকে ৩৮ রানের জুটি গড়েন রায়ান ডেসকাটে। তবে রানের গতি সে অর্থে বাড়াতে পারেননি। পারেননি নিজেদের ইনিংসকে লম্বা করতে। এমনকি তারা আউট হওয়ার পর কোন ব্যাটসম্যানও জ্বলে উঠতে পারলেন না। ফলে রাজশাহীর ইনিংস থামল ১৩৬ রানে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেছেন মার্শাল। ৩১ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের এ ইনিংস খেলেন এ ব্যাটসম্যান। অথচ এ ব্যাটসম্যানকেই কিনা টেস্ট ব্যাটসম্যান ট্যাগ লাগিয়ে রাখা হয় সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বাইরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন নাফীস। ঢাকার পক্ষে ১৯ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন নারিন।
১৩৬ রানের পুঁজি নিয়ে শুরু থেকেই দারুণ লড়াই করে রাজশাহী। ২৩ রানেই তুলে নেয় তিন উইকেট। এরপর রনি তালুকদার ও সাকিব আল হাসান ইনিংস গড়ার চেষ্টা করলেও পারেননি আরাফাত সানির ঘূর্ণিতে। এ দুই ব্যাটসম্যানকেই ফেরান এ স্পিনার। ফলে ৫৩ রানেই প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দারুণ চাপে পড়ে যায় ঢাকা।
সে চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করতে তরুণ নাঈম শেখকে নিয়ে জুটি বাঁধেন ক্যারিবিয়ান তারকা পোলার্ড। ৩১ রানের জুটিতে সে চাপ অনেকটাই সামলে নেন। কিন্তু এরপর খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি এ ক্যারিবিয়ান। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আউট হয়েছে সৌম্য সরকারের হাতে। অবশ্য এ আউটে পুরো কৃতিত্বই ছিল ডেসকাটের। ক্যাচ লুফে বাউন্ডারি লাইনে পার হওয়ার শেষ মুহূর্তে বল ছুড়ে দিয়েছিলেন সৌম্যর কাছে।
এরপর এক প্রান্তে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ফলে উড়তে থাকা ঢাকাকে আসরের প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দেয় রাজশাহী। দারুণভাবে আসরে টিকে থাকে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ঢাকার পক্ষে সর্বোচ্চ ২১ রানের ইনিংস খেলেন সোহান। মাত্র ৮ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়ে দিনের সেরা বোলার সানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৩৬/৬ (মিরাজ ১, নাফীস ২৫, মার্শাল ৪৫, ডেসকাটে ১৬, জাকির ২০, জঙ্কার ৯*, প্রসন্ন ২, উদানা ৩*; রাসেল ১/১৭, রুবেল ০/১৭, সাকিব ১/২৯, নারিন ৩/১৯, আসিফ ২/১৫, আলিস ১/২৯)।
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১১৬/৯ (জাজাই ৬, নারিন ১, রাসেল ১১, রনি ১৪, সাকিব ১৩, পোলার্ড ১৩, নাঈম ১৭, সোহান ২১, রুবেল ০, আসিফ ৬*, আলিস ০*; উদানা ১/৩৬, মিরাজ ২/১৮, সানি ৩/৮, রাব্বি ১/২৪, মোস্তাফিজ ১/১৯, প্রসন্ন ০/৯)।
ফলাফল: রাজশাহী কিংস ২০ রানে জয়ী।
Comments