লিটন-ওয়ার্নারের ঝলকে জিতল সিলেট
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে অফস্পিনারদের সাফল্য বরাবরই বেশি। তাই বুঝে হয়তো ১৯তম ওভারেও পার্টটাইম স্পিনার ক্রিস গেইলের হাতে বল দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম তিন বলে পেলেন মাত্র ২ রান। সুবিধা করে উঠতে না পারায় ডানহাতি ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন ওয়ার্নার। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় পরের তিন বলে মারলেন তিনটি বাউন্ডারি। ১টি ছক্কা ও ২টি চার। আর ঠিক এভাবেই যেন এদিন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সিলেট সিক্সার্স। তার আগে অবশ্য সিলেটের বড় ইনিংসের সুর বেধে দিয়ে ঝড় তুলেন লিটন দাস। এই দুজনের ঝলকের দিনে মাশরাফি মর্তুজার দলকে পাত্তা দেয়নি সিক্সার্স।
শেষ পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটি জয়। আর আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতা তো ভয়াবহ। রান তুলতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছিল দলের ব্যাটসম্যানদের। হঠাৎ বদলে যাওয়া দলের ব্যাটসম্যানরা এদিন শুরু থেকেই ছিলেন চেনা ছন্দে। রংপুরের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে করলেন ১৮৭ রানের বিশাল স্কোর। আর লক্ষ্য তাড়ায় রংপুর রাইডার্স থেমেছে ১৬০ রানে। ফলে ২৭ রানের জয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সিলেট।
দিনের শুরুটা করেছিলেন ছন্দ হারিয়ে নিজেকে খুঁজে ফেরা দুই ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস ও সাব্বির রহমান। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। আর তাতেই জ্বলে উঠলেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ২০ রানের গড়পড়তার এক ইনিংস হয়তো খেলেছেন সাব্বির। কিন্তু লিটনের সঙ্গে গড়েছেন ৭৩ রানের দারুণ এক জুটি। তাতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় দলটি।
তবে মূল পার্থক্যটা গড়েছেন লিটনই। সাবলীল ব্যাটিং করে মাত্র ৪৩ বলে খেলেছেন ৭০ রানের ইনিংস। ৯টি চারের সঙ্গে ১টি ছক্কাও মেরেছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। রানআউটে কাটা না পড়লে ইনিংসটা হয়তো লম্বা হতে পারতো আরও। তবে শুরুর নায়ক লিটন হলেও শেষের নায়ক নিঃসন্দেহে অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। ৩৬ বলে খেলেছেন ৬১ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। ৬টি চারের সঙ্গে ২টি বিশাল ছক্কাও মেরেছেন তিনি। ১৬ বলে ২৬ রান করেন নিকোলাস পুরান।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই বিপদে পড়ে রংপুর। দলীয় ১১ রানে ৩টি উইকেট হারায় তারা। মেহেদী মারুফ, আলেক্স হেলসের পর গেইলও আউট হলে বড় চাপেই পড়ে যায় দলটি। তবে চতুর্থ উইকেটে দারুণ ছন্দে থাকা দুই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন ও রাইলি রুশো উদ্ধারকাজে নামেন। ৮৯ রানের দারুণ এক জুটিও গড়েন। কিন্তু বড় ক্ষতি করার আগেই রুশোকে বোল্ড করে এ জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ।
শুধু রুশোকে আউট করেই ক্ষান্ত হননি তাসকিন। আরেক সেট ব্যাটসম্যান মিঠুনকেও ফেরান তিনি। তাতেই আবারও চাপে পড়ে যায় রংপুর। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। সিলেটের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে এরপর আর প্রয়োজনীয় বাউন্ডারির দেখা পায়নি তারা। যদিও শেষ দিকে চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু তার ব্যাটিং কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন রুশো। ৩২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন মিঠুন। এছাড়া অধিনায়ক মাশরাফি শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে করেছেন অপরাজিত ৩৩ রান। সিলেটের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান রানা ও তাসকিন আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সিক্সার্স: ২০ ওভারে ১৮৭/৫ (লিটন ৭০, সাব্বির ২০, ওয়ার্নার ৬১*, পুরান ২৬, আফিফ ৬, জাকের ০, কাপালী ০; মাশরাফি ০/৪৩, শফিউল ৩/৩১, গাজী ০/৩৮, হাওয়েল ১/২২, রেজা ০/৯, গেইল ০/৩৫, নাহিদুল ০/৭)।
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬০/৬ (গেইল ৭, মারুফ ৩, হেলস ০, রুশো ৫৮, মিঠুন ৩৫, মাশরাফি ৩৩*, হাওয়েল ১৩, নাহিদুল ৫*; তানভির ১/২২, রানা ২/৪০, তাসকিন ২/৩৪, আফিফ ০/২২, লামিচানে ১/১৮, কাপালী ০/২৩)।
ফলাফল: সিলেট সিক্সার্স ২৭ রানে জয়ী।
Comments