ক্রিসেন্ট গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে বিধ্বস্ত জনতা ব্যাংক
রাজধানীতে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ৬৫৭টি ভুয়া রপ্তানি বিলের বিপরীতে ১ হাজার ২শ’ ৯৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ, দাবি কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের।
এছাড়াও, গত বছরের অক্টোবরে তদন্ত শুরু করার পর জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানির নাম করে জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমপক্ষে ৭৬৫ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।
গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জনতা ব্যাংক থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪শ’ ৪৩ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এই টাকা উত্তোলনের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটির কাছে নিজেদের নিলামে তোলার আবেদন করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।
কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও জনতা ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। অন্যদিকে, দুদকের অনুসন্ধানে জনতা ব্যাংক ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১৭ জন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের ২০৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, ওই ১৫ ব্যক্তির ১৩ জনই জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা।
দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এদের প্রত্যেকের নাম রয়েছে, কিন্তু তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে আর্থিক অনিয়মের জন্য জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম আজাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, কাস্টমস গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে আজাদের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের উভয় প্রতিবেদনে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফখরুল আলমের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। ফখরুল বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্তব্যরত রয়েছেন।
অপরদিকে দুদক বলছে, এ ঘটনায় ফখরুল ও আজাদ জড়িত কী না সে ব্যাপারে তাদের তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে।
কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ ও দুদকের দাবি, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টসের সভাপতি এম এ কাদের, পরিচালক সুলতানা বেগম ও ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যারের সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মিরা এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।
এ ব্যাপারে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টসের সভাপতি এম এ কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করে পুরো টাকাটিই দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
রপ্তানির নামে যে অর্থ প্রেরণ করা হয়েছে (যা ফিরিয়ে আনা হয়নি) সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই টাকা ফিরিয়ে আনতে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
Comments