হেলস-রুশোর তাণ্ডবের দিনে রেকর্ড গড়ে জিতল রংপুর

চট্টগ্রামের সাগরিকা মাঠের খুব কাছেই সমুদ্র। এই সমুদ্র পাড়ের মাঠে এদিন যেন হানা দিল সাইক্লোন। তাতে চট্টগ্রাম উপকূল ভেসে গেল রান বন্যায়। সেই সাইক্লোন বইয়ে দিয়ে বিপিএলে ইতিহাস গড়লেন অ্যালেক্স হেলস আর রাইলি রুশো। এমন ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের হেরে যাওয়া হতো আরেক ইতিহাস। সেটা হয়নি। রেকর্ডময় ম্যাচে উৎসব করেছে মাশরাফি মর্তুজার দল।
Hales-Rossouw
বিস্ফোরক জুটিতে হেলস-রুশো। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চট্টগ্রামের সাগরিকা মাঠের খুব কাছেই সমুদ্র। এই সমুদ্র পাড়ের মাঠে এদিন যেন হানা দিল সাইক্লোন। তাতে চট্টগ্রাম উপকূল ভেসে গেল রান বন্যায়। সেই সাইক্লোন বইয়ে দিয়ে বিপিএলে ইতিহাস গড়লেন অ্যালেক্স হেলস আর রাইলি রুশো। এমন ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের হেরে যাওয়া হতো আরেক ইতিহাস। সেটা হয়নি। রেকর্ডময় ম্যাচে উৎসব করেছে মাশরাফি মর্তুজার দল।

সাত ম্যাচের ছয়টা জিতে ঘরের মাঠে খেলতে এসেছিল চিটাগং। ছিল পয়েন্ট টেবিলের উপরে। ছুটির দিনের সন্ধ্যায় স্বাগতিকদের হয়ে গলা ফাটাতে তাই গ্যালারিও ছিল ভরপুর। তবে তারা গলা ফাটানোর ফুরসত পেলেন খুব কমই। তাদের স্তব্ধ করে আগে ব্যাট করে রংপুর করে রেকর্ড ২৩৯ রান। পর্বতসম ওই রান তাড়ায় শুরুর দিকে কিছুটা তেতে থাকলেও শেষে কুলিয়ে উঠতে পারেনি চিটাগং। তাদের হয়ে কেবল লড়েছেন ঘরের ছেলে ইয়াসির আলি রাব্বি।

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভাইকিংসরা হেরেছে ৭২ রানের বড় ব্যবধানে। এই জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে উঠে এল রংপুর। হারলেও চিটাগং থাকছে শীর্ষেই।

আগের ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সকে বড় রান করতে দেখেও টস জিতে রংপুরকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ভাইকিংস কাপ্তান মুশফিকুর রহিম। পরে হয়ত ভেবেছেন কি ভুলটাই না করলাম!

ক্ষুদার্থ বাঘের সামনে হরিণ ছানা ছুঁড়ে দিলে যেমন হওয়ার কথা হয়েছে যেমন তেমনই। ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলকে শুরুতেই ফেরান আবু জায়েদ রাহি। ওই উৎসব তাদের বেশিক্ষণ টেকেনি।

এরপরে তাণ্ডব শুরু করেন হেলস। ইংলিশ ব্যাটসম্যানের ব্যাটের সামনে অসহায় ভাইকিংস বোলাদের যেন মুখ লুকানোর দশা। এক পাশের তাণ্ডব তবু সয়ে নেওয়া যায়। অন্য দিকে যখন রুশোও শুরু করেন চার-ছক্কার ধামাকা তখন পালিয়ে যেতে পারলেই যেন বাঁচে চিটাগং। বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১৭৬ রানের জুটি গড়েন দুজনে। তাও কি! মাত্র ৭৮ বলে ওই রান তুলে ফেলেন দুজন। দুজনেই করেছেন সেঞ্চুরি। বিপিএলের ইতিহাসে সেটাও প্রথম। গোটা বিশ্বের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেই এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরির মাত্র তৃতীয় নজিরও এটি।

তিন অঙ্কে যাওয়ার পরই থামেন হেলস। তার ৪৮ বলের ইনিংসে ছিল ১১ চার আর ৫ ছক্কা। অন্যদিকে আর আউট হননি রুশো। টুর্নামেন্টে পাঁচশোর বেশি রান করে ফেলা এই দক্ষিণ আফ্রিকান অপরাজিত থাকেন ঠিক ১০০ রানে। বাঁহাতি রুশো মেরেছেন হাফ ডজন ছক্কা আর ৮ চার।

বিপুল রান তাড়ায় মোহাম্মদ শেহজাদের পাগলাটে শুরুর পর (১২ বলে ২০) দলকে টেনেছেন ইয়াসির।  চারে নামা অধিনায়ক মুশফিক ১১ বলে তিন ছক্কায় ২২ করার সময় কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন রংপুরের। তিনি ফিরতে সব অস্বস্তি দূর।

ইয়াসির পরেও চালিয়ে গেছেন। তবে তাতে রংপুরের বড় চিন্তা ছিল না। একা অমন এভারেস্ট ডিঙানো তার পক্ষে সূদুর পরাহত ব্যাপার। তবু ৪৮ বলে সর্বোচ্চ ৭৮ রানের ইনিংস খেলে তিনি দিয়েছেন সামর্থের প্রমাণ। রেখেছেন বড় কিছুর ছাপ।

ভাইকিংসের জন্য এদিন দুর্ভাগ্যও ছিল সঙ্গী। পেশিতে টান পেয়ে তাদের অন্যতম সেরা তারকা রবি ফ্রাইলিঙ্ক মাত্র ২ ওভার বল করেই মাঠ ছাড়েন। সবচেয়ে হতাশার বিষয় তিনি আর ব্যাট করতেই নামতে পারেননি। এবার বিপিএলে শেষ দিকে ঝড় তুলে আলাদা পরিচিতি পাওয়া ফ্রাইলিঙ্ক না থাকায় ম্যাচের অল্প বিস্তর রোমাঞ্চের সম্ভাবনাও মিইয়ে যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ২৩৯/৪ (গেইল ২, হেলস ১০০, রুশো ১০০*, ভিলিয়ার্স ১, মিঠুন ১৫, নাহিদুল ১১; ফ্রাইলিঙ্ক ০/১৪, জায়েদ ২/৩৫, খালেদ ০/৫০, সানজামুল ০/৩৭, রবিউল ১/৫৪, রাজা ১/৪৮)

চিটাগং ভাইকিংস:  ২০ ওভারে ১৬৭/৮ ( শেহজাদ ২০, ইয়াসির ৭৮ , রাজা ৩, মুশফিক ২২, জাদরান ১, মোসাদ্দেক ১৪, সানজামুল ৪ , রবিউল ৭, জায়েদ ১০*, খালেদ ৬*; নাজমুল ১/৩১, মাশরাফি ৩/৩৪, ফরহাদ, শফিউল ০/৩৫, নাহিদুল ০/৯ , শহিদুল ১/২৮)

ফল: রংপুর রাইডার্স  ৭২ রানে জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English
Why university rankings should matter

Why university rankings should matter

While no ranking platform is entirely comprehensive or flawless, it is better to participate in reliable ones.

7h ago