শেহজাদ, ইয়াসিরদের ঝড় থামিয়ে মিরাজ-মোস্তাফিজদের হাসি
আগে ব্যাট করে দু’শো ছুঁইছুঁই রানের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল রাজশাহী কিংস। বিশাল রান তাড়ায় নেমেই তাণ্ডব শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ শেহজাদ। পরে ঝড় তুলে দলকে জেতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ইয়াসির আলি রাব্বি। বোলিং মুন্সিয়ানায় দুজনের সব জারিজুরি থামিয়ে শেষ হাসি মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমানদের।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এদিনও হয়েছে রান বন্যা। রাজশাহী কিংসের ১৯৮ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ তাড়া করে দুর্বার গতিতেই ছুটল চিটাগং ভাইকিংস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিরাজ, মোস্তাফিজের কারণে কুলিয়ে উঠতে পারেনি তারা। পুরো ২০ ওভার খেলে ১৯১ রান করে ৭ রানে হেরেছে তারা। চার ওভার বল করে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। মিরাজ ২৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।
এই নিয়ে পাঁচ ম্যাচ জিতে টেবিলের পাঁচে রাজশাহী। হারলেও ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই মুশফিকুর রহিমের ভাইকিংস।
হাইস্কোরিং ম্যাচে শেষ দিকেও ছিল উত্তেজনা। ভাইকিংসের শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ২৭। ক্রিজে এসেই মেরেটেরে তেতে ছিলেন সিকান্দার রাজা। মোস্তাফিজের ওভার থেকে এল মাত্র ৬ রান। বাড়ল ভাইকিংসের চাপ। রাব্বি পরের ওভারে ৮ রান দিয়ে ছেঁটে ফেলেন নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। মোস্তাফিজের শেষ ওভার ১৩ রান নেওয়া দূরের কথা উলটো ২ উইকেট খুয়ালো ভাইকিংস।
রান তাড়ার শুরুতে অবশ্য ছিল অন্যরকম ইঙ্গিত। মাথার উপর পর্বত ডিঙানোর চ্যালেঞ্জ। শুরুতেই দরকার বিস্ফোরক কিছু। সেটাই এনে দেন মোহাম্মদ শেহজাদ। কামরুল ইসলাম রাব্বির প্রথম ওভার থেকেই নেন ২২ রান। তেড়েফুড়ে ব্যাট চালান পাওয়ার প্লের পুরোটা সময়। আরেক পাশে ক্যামেরন ডেলপোর্টকে মোস্তাফিজ তুলে নিলেও শেহজাদ চোখ রাঙাচ্ছিলেন ভালোই।
এগিয়ে যাচ্ছিলেন দ্রুত ঝড়ো ফিফটির দিকে। মিরাজ এসে থামান তাকে। ২২ বলে ৪৯ করা শেহজাদ ৩ চারের সঙ্গে মারেন পাঁচখানা ছক্কা।
তার গড়ে দেওয়া ভিত ধরে দলকে এগিয়ে নেন ইয়াসির আলি রাব্বি। পুরো আসরে দারুণ খেলতে থাকা এই ডানহাতি পেয়ে যান তার তৃতীয় ফিফটি। ভাইকিংস খেলায় থাকে তার ব্যাটেই। আরাফাত সানির বলে ৩৮ বলে ৫৮ রান করে তিনি বোল্ড হওয়ার পর পথ হারায় ভাইকিংস। খানিক পরই যে অধিনায়ক মুশফিকও ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
শেষ পাঁচ ওভারে ভাইকিংসের জিততে দরকার দাঁড়ায় ৫৬ রান। ওটা পরে নিতে পারেননি রাজা-মোসাদ্দেকরা।
এর আগে টস হেরে ভাইকিংসের এলোমেলো বোলিং আর সম্মিলিত প্রয়াসে বিশাল স্কোর গড়ে রাজশাহী।
এবার বিপিএলে একাদশে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন সৌম্য সরকার। দুই ম্যাচ বাদ পড়ার পর ফিরে এক ম্যাচ পর আবার বাদ যান। এই ম্যাচে ফেরেন আবার। একাদশে জায়গা পাকা করতে দরকার ছিল একটা ইনিংস। নড়বড়ে শুরুর পর সামলে নিয়ে সে পথেই এগুচ্ছিলেন। নাঈম হাসানের এক ওভারের তিন বাউন্ডারিতে দিচ্ছিলেন ছন্দে ফেরার ইংগিত। কিন্তু অতিরিক্ত অস্থিরতা কাল হয়েছে তার। ২০ বলে ৫ চারে ২৬ রান করে আকাশে ক্যাচ তুলে দেন। তবে এর আগে জনসন চার্লসের সঙ্গে গড়ে ফেলেন ৫০ রানের জুটি।
জুটিতে মন্থর ছিলেন চার্লস। সৌম্য ফেরার পর কিছুটা ডানা মেলেন এই ক্যারিবিয়ান। থেমেছেন ফিফটির পরই। ওয়ানডাউনে নেমে লরি ইভান্সও খারাপ করেননি। ২৯ বলে ৩৬ রান করে তিনি ফেরার পর এসেই ছক্কার ধামাকা শুরু করেন রায়ান টেন ডসকেট। নাঈমকে টানা তিন বলে মারেন তিন ছয়।
মূলত তার কারণেই উঠে শেষের তাণ্ডব। ওতে যোগ দেন ক্রিশ্চিয়ান ইয়ঙ্কার। আবু জায়েদ রাহির দুর্দান্ত ১৯তম ওভারে ডসকেট রান আউটে ফিরলেও শেষ ওভারে ইয়ঙ্কার রাখেন চমক। রবিউলকে তুলধুনো করতে থাকেন তিনি। এলোমেলো রবিউল ইনিংসে দ্বিতীয় বিমার মেরে ওভার পুরো করতে পারেননি। ডেলপোর্টকে দিয়ে পূরণ করতেন মুশফিক। ওই ওভারের শেষ বলে ইয়ঙ্কার আউট হলেও চলে আসে ২৪ রান।
রাজশাহী পৌঁছে যায় দু’শোর কিনারে। ম্যাচ শেষেও টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকল তা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৯৮/৫ (সৌম্য ২৬, চার্লস ৫৫, ইভান্স ৩৬ , টেন ডসকেট ২৭ , ইয়ঙ্কার ৩৭, ফজলে মাহমুদ ১* ; জায়েদ ১/২৪, খালেদ ২/৩২, নাঈম ০/৪৪, রবিউল ০/৪৭, ডেলপোর্ট ১/৩৫, রাজা ০/১০)
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৯১/৮ (শেহজাদ ৪৯, ডেলপোর্ট ৭, ইয়াসির ৫৮, মুশফিক ২২, মোসাদ্দেক ১, রাজা ২৯ , জাদরান ১১, নাঈম ০, রবিউল ৩, জায়েদ ১* ; কামরুল ২/৪৪, মিরাজ ২/২৫, মোস্তাফিজ ৩/২৮, সানি ১/৩৭, টেন ডসকেট ০/৩২, সৌম্য ০/২৩)
ফল: রাজশাহী কিংস ৭ রানে জয়ী।
Comments