‘পরীক্ষার দায়িত্বে যারা ছিলেন, দায় তাদের উপরই বর্তায়’

SSC Exam Photo
ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার ফাইল

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে চট্টগ্রামে সাতটি কেন্দ্রে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণীত প্রশ্নে ২০১৯ সালের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রগুলো হলো- নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় ও গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজারের পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও উখিয়া পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র।

চট্টগ্রামের এই সাতটি কেন্দ্রের পাশাপাশি মাদারীপুরের কালকিনিতে একটি, গাইবান্ধায় একটি, বাগেরহাটে একটি, সাতক্ষীরায় একটি, মুন্সীগঞ্জে একটি এবং নেত্রকোনার একটি কেন্দ্রেও এই ধরনের ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও, জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়ায় বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, বকশীগঞ্জ উপজেলার উলফাতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও ইসলামপুর  উপজেলার নেকজাহান মডেল হাই স্কুল কেন্দ্রে প্রথমে নিয়মিত পরীক্ষাদের ২০১৮ সালের অনিয়মিত প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। পরে ভুল বুঝতে পেরে কিছু সময় পর তা পরিবর্তন করে ২০১৯ সালের নিয়মিত প্রশ্ন দেওয়া হয়।

তবে, পরীক্ষা শেষে এই তিনটি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা এই পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও জানান।

অপরদিকে, শেরপুরের শ্রীবরদী মধুরানাথ বিনোদিনী পাইলট (এম.এন.বি.পি.) সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথমে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। তবে, পরীক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষাকক্ষে কর্তব্যরত পরিদর্শকদের জানালে ইউএনওর তত্ত্বাবধানে মূল প্রশ্নপত্র ফটোকপি করে পুনরায় সরবরাহ করা হয়।

ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহের এই গাফিলতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে ছড়িয়ে যাওয়ারও নজির দেখা গেছে। জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ও বাংলাদেশ দূতাবাস আবুধাবি এবং দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানীস্থ শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ও রাস আল খাইমা বাংলাদেশ ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। ৩০ মিনিট পর তা কর্তৃপক্ষের নজরে এলে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বিগত সালের প্রশ্ন এ বছর দেওয়ার মানে হলো চরম দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার পরিচয়। এমন গাফিলতি কেমন করে হয় তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। পরীক্ষার দায়িত্বে যারা ছিলেন এর দায় তাদের উপরই বর্তায়।”

তিনি বলেন, “আগে আমরা দেখেছি যে, পরীক্ষায় নকল হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। কিন্তু, এখন এও দেখতে হচ্ছে যে ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। এতেই বোঝা যাচ্ছে, গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থাটিই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পুরো বিষয়টিতেই এক ধরনের গাফিলতি ঢুকে গেছে। গোটা সিস্টেমটিই দুর্বল হয়ে গেছে, যার ফলে সেটি আর সঠিকভাবে কাজ করছে না।”

“তবে যাই হোক, এই বিশেষ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। হতভাগা শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতেই হবে। তাছাড়া, পরীক্ষা পদ্ধতিকে আরও শক্ত করা প্রয়োজন এবং কর্তা-ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার অধীনে আনা দরকার”, যোগ করেন তিনি।

এদিকে, এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের অভিযোগ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এ বিষয়ে গাফিলতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে রয়েছে কঠোর নজরদারী। পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ভুল ও বিতরণে গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এছাড়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সবচেয়ে বেশি নজরদারী করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দিপু মনি বলেন, “পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পর কোনো শিক্ষার্থী হল থেকে বের হতে চাইলে প্রশ্নপত্র রেখে বের হতে হবে। মূলত, পরীক্ষা শুরুর পর অনলাইনে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়া বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

এ সময় প্রশ্নফাঁস বন্ধে মিডিয়া ও অভিভাবকদের সহযোগিতা চান শিক্ষামন্ত্রী।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

26m ago