দুর্দান্ত তামিমে চড়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

Commilla Victorians
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দুর্ধর্ষ ব্যাটিংয়ে রাজকীয় সেঞ্চুরি করে দলকে চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন। রান আটকানোর সময়ে ভীষণ দরকারি দুই ক্যাচ জমিয়েছেন চিতার ক্ষিপ্রতায়। তামিম ইকবাল এদিন যেন যা করতে চেয়েছেন তাই করতে পেরেছেন। ফাইনালের মঞ্চে দলের সেরা তারকার রাজকীয় দিনে আসর মাত চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে আগে ব্যাটিং পেয়ে তামিমের ১৪১ রানে ১৯৯ করেছিল কুমিল্লা। রান তাড়ায় রনি তালুকদার আর উপুল থারাঙ্গার ব্যাটে দুর্দান্ত শুরুর পর ঢাকা থেমেছে    ১৮২ রানে। ১৭  রানে ম্যাচ জিতে দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

২০০ রান তাড়াতেও ১২ ওভার পর্যন্ত লাগাম ছিল ঢাকার হাতেই। আগ্রাসী ব্যাটে ঢাকাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন রনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত মিডল অর্ডারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, কাইরন পোলার্ড আর আন্দ্রে রাসেলের ব্যর্থতায় হতাশায় পুড়তে হয় তাদের।

এর আগে শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালের মঞ্চের প্রথম অর্ধ পুরোটাই রাঙিয়েছেন তামিম। তার তাণ্ডবে পুরো ২০ ওভার ব্যাট করে  ১৯৯ রান করে কুমিল্লা।

৬১ বলে ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। রাজকীয় ইনিংসে ১০ চারের সঙ্গে মেরেছেন ১১টি ছক্কা। ক্রিস গেইলের পর বিপিএলের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা কোন ক্রিকেটার এখন তামিম।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা অবশ্য একদম ভালো হয়নি কুমিল্লার।  রুবেল হোসেনের দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন লুইস। কিন্তু এরপরও সবটা আলো নিজের দিকে নিতে থাকেন তামিম। এনামুল হক বিজয় আর ইমরুল কায়েসের সঙ্গে তার বড় দুটি জুটে হয়েছে। জুটিতে প্রায় সব রানই যেন করেছেন তামিম। দ্বিতীয় উইকেটে ৯০ রানের জুটিতে এনামুলের অবদান ২৪। তৃতীয় উইকেটে ইমরুলের সঙ্গে ১০০ রানের জুটিতে ইমরুল করতে পেরেছেন কেবল ১৭। এই দুই পরিসংখ্যানই বলে দেয় কতটা দাপট ছিল তামিমের ব্যাটে। ৩১ বলে প্রথম ফিফটি করার পর বাকি ১৯ বলে তুলেছেন আরও পঞ্চাশ। শেষ ১১ বলে ৪১। পরিসংখ্যানে তো বটেই, সব দিক বিবেচনাতেই টি-টোয়েন্টিতে কোন বাংলাদেশির সেরা ব্যাটিং।

তামিমের ব্যাটের ঝাঁজ সবচেয়ে বেশি সহ্য করেছেন রুবেল হোসেন আর আন্দ্রে রাসেল। এই দুজনের দুই ওভার থেকে ২২ করে রান উঠিয়েছেন তামিম।

এদিন তার সামনে চুনোপুটি ছিলেন সব বোলারই। খেলেছেন দারুণ সব শট। অফ স্পিনারকে স্লগ সুইপে সীমানা পার করেছে, এগিয়ে এসে মেরেছেন। পেসারদের বাউন্সার তেঁড়েফুড়ে আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে। তামিমের দিনে যেন কারোরই করার ছিল না কিছু।

এমন দিনে দল হেরে বড্ড দুর্ভাগ্য হতো তামিমের। শেষ পর্যন্ত শঙ্কা জাগলেও তা হয়নি।

তামিমের তাণ্ডবে দু’শো রানের বিশাল লক্ষ্য পাওয়া পর নেমে প্রথম ওভারেই সুনীল নারাইনকে হারিয়েছিল ঢাকা। কিন্তু এরপর ঝড় তুলেন রনি তালুকদার। সঙ্গী উপুল থারাঙ্গাও ছিলেন তেতে। পাওয়ার প্লে পুরোটাই কাজে লাগিয়ে ৭১ রান তুলে ফেলে ঢাকা। দু’পাশ থেকে মারতে থাকেন তারা। তরতরিয়ে বাড়তে থাকে রান।

২৫ বলে ফিফটিতে পৌঁছান রনি। থারাঙ্গাও এগুচ্ছিলেন সেদিকে। স্বদেশী থিসারা পেরার বলে মারতে গিয়ে ৪৮ রানে কাটা পড়েন তিনি। তবে গড়ে দিয়ে যান ভিত। ৫৩ বলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১০২ রান। ফিফটির পরও রনি ছিলেন অগ্নিমূর্তিতে। আরেক পাশে সাকিবকে নিয়েও রান বাড়িয়েছেন। তার দাপটের মাঝেও অযতাই মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন সাকিব। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা তামিমই অনেকখানি দৌড়ে জমান সাকিবের ক্যাচ।

তবে রনি দেখাচ্ছিলেন বড় কিছুর আশা। খানিক পর পোলার্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে শেষ হয় তার ইনিংস।

৩৮ বলের ইনিংসে ছয় বাউন্ডারি আর চার ছক্কায় ৬৬ করে ফেরেন পুরো টুর্নামেন্টে ভালো করা এই ব্যাটসম্যান। আন্দ্রে রাসেলের উপর বড় আশা ছিল ঢাকার। পেরেরার বলে রাসেলও থেমে গেলে স্থব্ধ হয় ঢাকা। নিজের সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা পোলার্ড ছিলেন। তবে তিনি প্রচুর ডট বল খেলে বাড়িয়েছেন চাপ। করতে পারেননি কিছুই। পোলার্ডের ক্যাচও লঙ অন থেকে দৌঁড়ে গিয়ে ছোবল মেরে নিয়েছেন তামিম।  

এরপরে আর বাকি থাকেনি কিছু। নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসানরা কেবল কমাতে পেরেছেন ব্যবধান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স:   ২০ ওভারে ১৯৯/৩ (তামিম ১৪১*, লুইস ৬, এনামুল ২৪ , শামসুর ০, ইমরুল ১৭*;  রাসেল  ০/৩৭, রুবেল ১/৪৮, সাকিব ১/৪৫, নারাইন ০/১৮, অনিক ০/১৯, শুভাগত ০/১৪, মাহমুদুল ০/১২)

ঢাকা ডায়নামাইটস :  ২০ ওভারে ১৮২/৯   (থারাঙ্গা ৪৮, নারাইন ০, রনি ৬৬, সাকিব ৩, পোলার্ড ১৩ , রাসেল ৪, নুরুল ১৮, শুভাগত  ০, মাহমুদুল ১৫ , রুবেল ৫  , অনিক ১*; সাইফুদ্দিন ২/৩৮, মেহেদী ০/৩০, ওয়াহাব ৩/২৮, সঞ্জিত ০/১০, আফ্রিদি ০/৩৭, থিসারা ২/৩৫ )

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১৭  রানে জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English
NBR speeds up auction process of abandoned goods

NBR moves to speed up auction of abandoned goods

About 2 lakh tonnes of imported goods left abandoned at Chattogram port alone for years

1h ago