আজ দিনটি ভালোবাসা ও আবেগের

ভালোবাসার রঙে রাঙ্গা হোক পৃথিবী। ভালোবাসার এই দিনে প্রত্যেক ভালবাসাময় হৃদয় রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলুক- প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
ছবি: পলাশ খান

ভালোবাসা, নরম তুলোর মত আবেগে মোড়ানো, ভাষায় প্রকাশ না করতে পারা স্পর্শকাতর এক তীব্র অনুভূতির নাম। রঙ, রূপ, গন্ধবিহীন এই তীব্র অনুভূতির এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে, আর সেটি অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। এই আকর্ষণের শক্তি এতটাই প্রবল যার টানে অপরকে পাশে পেতে মানুষ ছুটে যায় বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, জয় করে সকল প্রতিকূলতাকে, পরিশ্রান্ত ক্লান্ত মানুষ ব্যস্ততা, ক্লান্তি ভুলে প্রিয়জনকে বলে “ভালোবাসি, ভালোবাসি...’’

কখন, কীভাবে, কোন মুহূর্তে ভালোবাসা মানুষকে ছুঁয়ে যায়, তা হয়তো সে নিজেও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে না। কোন বাধায়, শাসনে তাকে আটকে রাখা যায় না, ভালোবাসা আসবেই। কবি হেলাল হাফিজের কবিতার ভাষায়,“কোনদিন, আচমকা একদিন ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,-‘চলো যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই’,যাবে?’’ ভালোবাসা এমনই, বাঁধনহারা। রাজা-বাদশাহ, ধনি-গরিব, কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকের জীবনে ভালোবাসার মাতাল করা সুবাস ছুঁয়ে গেছেই। সারা  বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহাসমারোহে এদেশেও পালিত হয় “ভালোবাসা দিবস’’। প্রেমিক মনের কথা ভাষায়, উপহারে, চিঠিতে, লজ্জাবনত প্রিয়জনের কাছে প্রকাশ করার আজ সেই বহুকাঙ্ক্ষিত দিন।

একটু জেনে নেই কিন্তু কীভাবেই বা এলো এই দিনটি। ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উৎপত্তির ইতিহাস বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কাহিনীকে কেন্দ্র করে আলোচিত হয়েছে। এর একটি কাহিনী এমন-২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামের একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যে সে সময় খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তাঁকে বন্দী করেন। বন্দী অবস্থায় জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’সের সুনাম ও জনপ্রিয়তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউ ও প্রথম জুলিয়াস এই প্রেমিক পাদ্রী ও চিকিৎসকের স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। পালন হতে থাকে ভালোবাসা দিবস। পাশ্চাত্যের পাশাপাশি আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই ভালোবাসা দিবস পালনে। বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী এইসব পরিচয় ছাপিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা আলাদা করে তাদের দিন হিসেবে পালন করছেন আজকের দিনটিকে। তাই তরুণ-তরুণীদের কাছে আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন, বহুল প্রতীক্ষার। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার ভাষায়- “আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই বলে দেব স্ট্রেটকাট : ‘ভালোবাসি’। এরকম সত্য-ভাষণে যদি কেঁপে ওঠে, অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়, আমি নখাগ্রে দেখাবো প্রেম, ভালোবাসা, বক্ষ চিরে তোমার প্রতিমা।”

ভালোবাসার আবেগের পুরোপুরি প্রকাশ হয়তো করা সম্ভব নয়, তবুও নর-নারী তাকে চিরকাল বাঁধতে চেয়েছে ভাষায়, শব্দে, উপহারে, আলিঙ্গনে। আগে চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে আবেগের আদান প্রদান হতো, সেই চিঠি কখনো কোনও ব্যক্তি মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হতো নয়তো দূরের পথ হলে কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে উড়িয়ে দেয়া হতো গন্তব্যে। সময়ের পরিক্রমায় চিঠির স্থান দখল করেছে ই-চিঠি, মেসেঞ্জারসহ তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য মাধ্যম। উপহারের ক্ষেত্রে যেমন আছে প্রচলিত পদ্ধতি ঠিক তেমনিভাবে বিভিন্ন অনলাইন শপ পসরা সাজিয়ে বসেছে কার্ড, ফুল, খাবার, পোশাক,বই, অলঙ্কারসহ কতই না রকমারি উপহার। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের সময় ও পরিশ্রম দুটোই যেমন সাশ্রয় হয়েছে, ঠিক তেমনি আবেগের বাহ্যিক প্রকাশেও এসেছে পরিবর্তন। দূরের প্রিয় মানুষটিকে সামান্য চোখের দেখা দেখতে মানুষ কত পথ পাড়ি দিয়ে মুখোমুখি হতো প্রিয়জনের, কিন্তু এখন হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রিয়জনকে দেখা এবং তার কণ্ঠ শোনা এখন খুবই স্বাভাবিক।

ভালোবাসার রঙে রাঙা হোক পৃথিবী। ভালোবাসার এই দিনে প্রত্যেক ভালোবাসাময় হৃদয় রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলুক-

“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস,

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”

 

লেখক: সংবাদ পাঠক, বাংলাদেশ বেতার

ই-মেইল: [email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago