আপডেট: গাপটিলের ব্যাটে উড়ে গিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

ক্রাইশ্চার্চে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
Martin Guptill
ছবি: এএফপি

সিরিজ হারল বাংলাদেশ 

আরও একবার টপ অর্ডারের ধসে পড়া, পরে মোহাম্মদ মিঠুনের লড়াইয়ে মাঝারি পূঁজি। এবং সেই পূঁজি টপকে যেতে আরও একবার দুর্বার মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরি। নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচের মতো অনেক কিছুরই মিল ছিল ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ম্যাচেও। ম্যাচের ফলেও হয়েছে হুবহু মিল। নিউজিল্যান্ডের এবারও কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই খুইয়ে বসেছে সিরিজও। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ : ৪৯.৪ ওভারে ২২৬   (তামিম ৫ , লিটন ১, সৌম্য ২২, মুশফিক ২৪, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ ৭, সাব্বির ৪৩, মিরাজ ১৬, সাইফুদ্দিন ১০, মাশরাফি ১৩, মোস্তাফিজ  ৫* ; হেনরি ১/৩০,  বোল্ট ১/৪৯, গ্র্যান্ডহোম ১/২৫, ফার্গুসেন ৩/৪৩, অ্যাস্টল ২/৫২, নিশাম ২/২১)

নিউজিল্যান্ড :    ৩৬.১ ওভারে ২২৯/২ (গাপটিল ১১৮, নিকোলাস ১৪, উইলিয়ামসন ৬৫* , টেইলর ২১* ; মাশরাফি ০/৩৭, সাইফুদ্দিন ০/৪৪, মিরাজ ০/৪২, মোস্তাফিজ ২/৪২, সাব্বির ০/২৮, সৌম্য ০/১০, মাহমুদউল্লাহ ০/২৫)

ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।

এবার গাপটিলের ঝড়ো সেঞ্চুরি 

আগের ম্যাচেও সহজ লক্ষ্য তাড়ায় সেঞ্চুরিতে দলকে জিতিয়েছিলেন মার্টিন গাপটিল। এবারও হলো একদম তাই। এবার লক্ষ্য আগের চেয়ে আরও খানিকটা কম। তবে গাপটিল ধারণ করলেন আরও রুদ্রমূর্তি। মাত্র ৭৫ বলে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। তার ব্যাটে ম্যাচে আর নেই কোন সংশয়। ২২৭ রানের লক্ষ্য ২৭ ওভারেই ১ উইকেটে ১৭৬ রান তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা। আছে জয় থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে। 

কিউইদের ভালো শুরুর পর মোস্তাফিজের আঘাত অতঃপর গাপটিল ঝড় 

২২৭ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় এদিনও দারুণ শুরু পায় নিউজিল্যান্ড। দুই ওপেনার শুরু থেকেই খেলেন সাবলীল। ইনিংসের অষ্টম ওভারে গিয়ে আসে বাংলাদেশের সাফল্য। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ রান করার পর হেনরি নিকোলাসকে আউট করেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজের বলে লিটন দাসের হাতে জমা পড়া নিকোলাস করেন ১৪ রান। আগের দিন সেঞ্চুরি করা মার্টিন গাপটিল রয়েছেন তেতে। দ্রুত রান তুলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন জয়ের দিকে। 

মাত্র ৩৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ম্যাচকে সহজ বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার ব্যাটে প্রথম ১১ ওভারেই ৭০ রান করে ফেলেছে স্বাগতিকরা। 

বাংলাদেশের মামুলি পূঁজি

প্রথম ওয়ানডের মতই আবারও ভুগল বাংলাদেশের টপ অর্ডারে। মিডল অর্ডারে আরও একবার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন মোহাম্মদ মিঠুন, রান পেলেন সাব্বির রহমানও। তবু ঠিক জুতসই পূঁজি পায়নি মাশরাফি মর্তুজার দল। ক্রাইশ্চার্চে শেষ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২২৬ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজ জিততে তাই কিউইদের সামনে সহজ লক্ষ্য। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ৪৯.৪ ওভারে ২২৬   (তামিম ৫ , লিটন ১, সৌম্য ২২, মুশফিক ২৪, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ ৭, সাব্বির ৪৩, মিরাজ ১৬, সাইফুদ্দিন ১০, মাশরাফি ১৩, মোস্তাফিজ ৫*; হেনরি ১/৩০,  বোল্ট ১/৪৯, গ্র্যান্ডহোম ১/২৫, ফার্গুসেন ৩/৪৩, অ্যাস্টল ২/৫২, নিশাম ২/২১)

ফিফটির আগে থামলেন সাব্বির

মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে বেশ ভালো এক জুটি পেয়েছিলেন সাব্বির রহমান। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দকে। মন্থর এগিয়ে চলা তার ইনিংস শেষ হয় লুকি ফার্গুসেনের বলে। পয়েন্ট নিশাম ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে থামেন সাব্বির। ৬৫ বলের ইনিংসে ৭ চারে ৪৩ করেন তিনি। তার আউটে ২০৬ রানে বাংলাদেশ হারায় অষ্টম উইকেট।

বাজে শটে  শেষ মিরাজ 

আগের ম্যাচের মতো এদিনও শুরুটা মন্দ ছিল না। কিন্তু জিমি নিশামের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে বিদায় নেন ১৬ রান করা মিরাজ। ১৯০ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

ফিফটির পর থামলেন মিঠুন

ঠিক যেন আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। ফের ব্যর্থ হলো টপ অর্ডার, মিডল অর্ডারে রান মেলেন না দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের বিপর্যয়ে এই অবস্থায় ফের হাল ধরলেন মোহাম্মদ মিঠুন। তুলে নিলেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। ৬৫ বলে টেড অ্যাস্টলকে ছক্কা মেরে ফিফটি করার পরের বলে মারেন চার। দেখাচ্ছিলেন দাপট। কিন্তু খানিক পর অ্যাস্টলেরই স্লাইডারে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৬৯ বলের ইনিংসে ৭ চার আর ১ ছক্কায় ৫৭ করে ফেরেন তিনি। তার ব্যাটেই দল পায় কিছুটা স্বস্তি। সাব্বিরের সঙ্গে ৬ষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৭৫ রানের জুটি। অবশ্য ইনিংসের শুরুতে ভাগ্যও পক্ষে ছিল তার। ৫ রানে কলিন গ্র্যান্ডহোমের বলে স্লিপে মিঠুনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন রস টেইলর। 
 
১৬৮ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

লেগ স্পিনে শেষ মাহমুদউল্লাহ 

দলের বিপদে হাল ধরার কাজটা এই সিরিজে করতে পারছেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকের আউটের পর তার দিকে ছিল সবার নজর। কিন্তু লেগ স্পিনার টেড অ্যাস্টলকে ঠিকমতো খেলতে পারেননি। ৭ রান করে শর্ট অব লেন্থের বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। তার বিদায়ে একশোর ভেতরই পাঁচ উইকেট খুইয়ে বসেছে বাংলাদেশ। (বাংলাদেশ ৯৩/৫)

মুশফিকের বিদায়ে চাপে বাংলাদেশ 

লুকি ফার্গুসেনের বলেই ১ রানে স্লিপে তার ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন রস টেইলর। নিজের দুইশতম ওয়ানডেতে জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না মুশফিকুর রহিম। সেই ফার্গুসেনের বলেই স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ঠিক যেন আগের ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি। মুশফিকের আউটে ৮১ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। 

ভালো শুরুর পর সৌম্যের বিদায় 

বিরূপ কন্ডিশনে দলের বেহাল দশায় আবারও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। খেলছিলেন সাবলীল। কিন্তু আবারও ফিরলেন বাজে শটে। মিডিয়াম পেসার কলিন ডি গ্যান্ডহোমকে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন তিনি। বাড়তি বাউন্স পাওয়া বল সৌম্যের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় তৃতীয় স্লিপে রস টেইলরের হাতে। ২৩ বলে ২২ রানের ইনিংসে ৩ চার মেরে বিদায় নেন তিনি। ১৩তম ওভারে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ (৪৮/৩)

ম্যাট হেনরির বলে বিদায় তামিমের 

আরও একবার শুরুটা ভালো করতে পারল না বাংলাদেশ। লিটনের পর ফিরে গেলেন তামিম ইকবালও। ম্যাট হেনরির বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়েছিলেন। মিডল স্টাম্পের উপর পিচ করা বল লাগাতে পারেননি। আম্পায়ারের এলবিডব্লিওর আবেদনে সাড়া দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তামিম।  বাংলাদেশ, ৬.৫ ওভারে ১৬/২

শুরুতেই উচ্চবিলাসী শটে লিটনের বিদায় 

ক্রাইশ্চার্চে মাত্র ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শুরু হওয়া ম্যাচে আগে বল নেওয়ার ইচ্ছা ছিল দুই অধিনায়কেরই। এমন ঠাণ্ডায় বইছে কনকনে বাতাস। পেসাররা পাচ্ছেন স্যুয়িং। শুরুর সময়টা তাই দেখেশুনে ব্যাট করার দাবি ছিল। লিটন দাস করতে গেলেন উলটো। ক্রিজ থেকে কিছুটা এগিয়ে এসে ট্রেন্ট বোল্টকে লফটেড শটে পার করতে চাইলেন সীমানা। বল আকাশে উঠে থাকল সীমানার ভেতরেই। অনেকখানি দৌড়ে তা হাতে জমালেন লুকি ফার্গুসেন। চতুর্থ ওভারেই দলের ৫ রানে পড়ল প্রথম উইকেট। ৪.১ ওভারে বাংলাদেশ (১০/১)  

তার আউটের খানিক পর হুট করে নামা কয়েক মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। 

টস হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাশরাফি মর্তুজা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে দিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন।

বাংলাদেশ অধিনায়কও জানিয়েছেন টস জিতলে তিনিও আগে বল করার সিদ্ধান্ত নিতেন। প্রথম ওয়ানডেতে হেরে সিরিজে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে এই ম্যাচ জিততেই হবে। স্বাগতিকরা জিতে গেলে সিরিজের ফায়সালা হয়ে যাবে এখানেই। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে একাদশে একটা বদল এনেছে কিউইরা। বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের জায়গায় খেলছেন লেগ স্পিনার টেড অ্যাস্টল।

তবে আগের ম্যাচের একাদশই এই ম্যাচে খেলাচ্ছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান। 

নিউজিল্যান্ড একাদশ: মার্টিন গাপটিল, হেমরি নিকোলাস, কেইন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, টিম ল্যাথাম, জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রুম, টেড অ্যাস্টল, লুকি ফার্গুসেন, ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট।

মুশফিকের মাইলফলকের ম্যাচ 

মাশরাফি মর্তুজার পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে দুইশতম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছেন মুশফিকুর রহিম। বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন...

সিরিজ জিততেও আশাবাদী মিরাজ 

মেহেদী হাসান মিরাজ জানিয়েছেন, কেবল এই ম্যাচ নয়। টানা দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ জেতার বিশ্বাস আছে তাদের। বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন...

Comments