‘দেশের স্বার্থে যেকোনো সময় তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি আছি’

পরিবারিক নাম মো. পলাশ আহমদ হলেও মাহিবি জাহানসহ আরও অনেক ছদ্মনামে তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষদের কাছে নিজের পরিচয় দিতেন। গত রোববার চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন তিনি। তবে, ওই সময় চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমানের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয় যে, বিমান ছিনতাইকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন পলাশ।
shimla
চিত্রনায়িকা সামসুন নাহার সিমলা। ছবি: স্টার

পরিবারিক নাম মো. পলাশ আহমদ হলেও মাহিবি জাহানসহ আরও অনেক ছদ্মনামে তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষদের কাছে নিজের পরিচয় দিতেন। গত রোববার  চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন তিনি। তবে, ওই সময় চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমানের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয় যে, বিমান ছিনতাইকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন পলাশ।

সেই ঘটনার সূত্র খুঁজতে গিয়েই বেরিয়ে আসে চিত্রনায়িকা সামসুন নাহার সিমলার নাম। অবশেষে পলাশ আহমেদকে নিয়ে গতকাল (২৫ ফেব্রুয়ারি) দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তার সাবেক স্ত্রী সিমলা।

পলাশ আহমদের সঙ্গে আপনার যে সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে, এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

সিমলা: ২০১৭ সালে আমি ‘নাইওর’ নামের একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলাম। ছবিটির পরিচালক ছিলেন রাশিদ পলাশ। তার ১২ সেপ্টেম্বর জন্মদিন ছিলো। তিনি আমাকে সেদিন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি অতিথি হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে অনেকেই ছিলেন। সেখানে মাহিবি জাহান নামের একজনকে প্রযোজক হিসেবে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পরিচয়ের পর তার সঙ্গে আমার ফোনালাপ হয়। তখন থেকেই একজন প্রযোজক এবং মাহিবি জাহান নামেই উনাকে আমি চিনি। তারপর ২০১৮ সালের ৩ মার্চ আমাদের বিয়ে হয়। আবার ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর আমাদের ডিভোর্সও হয়ে যায়। এখন ডিভোর্সের তিন মাস পার হয়ে চারমাস চলছে। ডিভোর্সের পরে তো আর কোনো কথা থাকতে পারে না। এই সময়ে তার সঙ্গে আমার কোন কথা বা যোগাযোগ হয়নি। তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে গত ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে। শেষ কথায় যা হয় তাহলো- উনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন, উনি ইংল্যান্ডে থাকেন এবং সেখানে কোনো একটা চাকরি করেন। চার থেকে পাঁচ মাস পর তিনি দেশে ফিরবেন, এইটুকুই। তারপর উনি যখন ফের আমাকে ফোন করেছেন আমি তা রিসিভ করিনি।

গতকাল (রোববার) কি উনি আপনাকে কোনো ফোন করেছিলেন?

সিমলা: না, গতকালকে কোনো ফোনকল পাইনি। বললাম তো, গত ঈদুল আজহার আগে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।

পলাশের মানসিক অবস্থা আপনার কাছে কেমন মনে হয়েছে?

সিমলা: আমার কাছে অটিস্টিক লেগেছে, ভারসাম্যহীন লেগেছে। কারণ- একটা মানুষ এতো মিথ্যা কথা বলতে পারে না। এতো ছদ্মবেশ ধরতে পারে না। এতো নাম একজন সুস্থ মানুষের কীভাবে হয়। দেখতে সুস্থ লাগলেও উনি যে ভিতরে ভিতরে অটিস্টিক ছিলেন, এই ব্যাপারটা আমি বিয়ের দুই থেকে তিনমাস পর বুঝতে পেরেছি। আসলে আমার তো উনার সঙ্গে একসঙ্গে থেকে সংসার কন্টিনিউ করা হয়নি। যেটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাকে, ওইভাবে হয়ে উঠেনি। এই কারণে যে- আমার তো কাজের জন্য কখনও বাংলাদেশ কখনো ভারত থাকতে হতো এবং আমি আমার কাজের ক্ষেত্রটিকেই ফার্স্ট প্রেফারেন্স দিতাম। উনি এ ব্যাপারে আমাকে সব সময় এপ্রিশিয়েট করতেন। সুতরাং এই ব্যাপারে আমি পরিষ্কার ছিলাম। সেকারণে উনার সঙ্গে স্বামীর-স্ত্রীর মতো করে আমার বসবাস করা হয়নি। এছাড়াও, একসঙ্গে বসবাসের সুযোগও ছিলো না। উনি যে বিবাহিত ছিলেন, অনেক পরে আমি তা জেনেছি। আর ডিভোর্স তো স্বাভাবিকভাবে আমি দিতেই পারি। কারণ- আমার পছন্দ হচ্ছে না, ভালো লাগছে না। সেক্ষেত্রে উনার এবনরমালিটি দেখেই আমার মনে হয়েছে যে, আসলে এটি দীর্ঘায়িত করা ঠিক হবে না। সুতরাং আমি ডিভোর্সটা দিয়ে দিই।

উনার পরিবারের সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগ হয়েছিলো?

সিমলা: হ্যাঁ। যোগাযোগ বলতে কী, আমি বিয়ের পর দুইবার উনার বাবা-মা ও তিনবোনকে দেখেছি। উনার তিনটা বোন, তবে উনি একাই, এক ছেলে ছিলেন। তাছাড়া তেমন কোনো কথা বা খুব বেশি যোগাযোগ ছিলো না।

পলাশকে দেখে কি কখনো মনে হয়েছে যে, উনি আন্ডারগ্রাউন্ডের লোক বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত?

সিমলা: না, এটি কখনোই মনে হয়নি। কারণ- উনি একজন চলচ্চিত্র প্রয়োজক আর আমি একজন নায়িকা। সেখানে কীভাবে একজন প্রযোজককে আমি মনে করবো যে, তিনি একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড বা কোন ওয়ার্ল্ডের লোক। সেটি তো আমি আসলে মনে করতে পারি না।

পলাশ যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, এর প্রেক্ষিতে আপনার বক্তব্য কী?

সিমলা: অবশ্যই এতে আমি ঘৃণ্যভাষ্য জানাবো। আমার দেশ আগে। এই জঘন্যতম কাজের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আমাদের দেশের নামকে এতো ছোট করলো, এর জন্য আমি খুবই নিন্দা জানাই। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে কখনোই চাইবো না, সে আমার বাবা হোক আর যেই হোক। সেটি আমার কাছে বড় ব্যাপার না, বড় ব্যাপার হচ্ছে আমার দেশের নাম নষ্ট করাটা, এটি আমি কখনোই মানবো না। তো যাইহোক, যেহেতু উনাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি। সেহেতু উনার ব্যক্তিজীবন নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কোন অধিকার আমার নেই। উনি তার এবনরমালিটি নিয়ে কী করবেন না করবেন, সেটি তার ব্যক্তিগত জীবন ছিলো। তো আমি এইটুকুই বলবো যে, উনি যে কাজটি করেছেন, আমি ডিভোর্স দিয়েছি বলেই বলছি না, একজন বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে বলছি- দেশের স্বার্থের জন্য আমার রাইট মনে হচ্ছে যে, তিনি যে জঘন্যতম কাজটি করেছেন, এমনটি উনার প্রাপ্য ছিলো।

এ ঘটনার কোনো তদন্তে যদি আপনার সহায়তা চাওয়া হয়, আপনি সারা দেবেন কী না?

সিমলা: আমি একদম প্রস্তুত আছি। আমার দেশের স্বার্থে যেকোনো সময় তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি আছি।

Comments