বিভ্রান্তিতে মোড়া ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রতিরোধ
ভোরের আলো ফোটার আগেই যে খবরটি ফুটলো তা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটলো না সারাদিনেও। পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি আস্তানায় হামলার দাবি করা হলো ভারতের পক্ষ থেকে আর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হলো সেই হামলা প্রতিরোধের। তবে আসলে কী ঘটেছিলো তা জানা গেলো না কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে।
আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সরকারের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানায়- কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আকাশপথে অভিযান চালিয়েছে ভারতের বিমানবাহিনী। সেই অভিযানে অংশ নেয় ১২টি মিরেজ ২০০০ যুদ্ধবিমান। পাকিস্তানে ভূখণ্ডে অবস্থিত বালাকোট, মুজাফফরাবাদ এবং চকোটিতে বিমান হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কাশ্মীরি জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলো।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, অভিযানে হত্যা করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জঙ্গিকে।
সকালে নতুন দিল্লিতে নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রীসভা কমিটির বৈঠক বসেছিলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। বিবৃতি দেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। কিন্তু, নীরব থাকেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজস্থানে এক জনসভায় পাকিস্তান অভিযানের কথা উল্লেখ না করে ভারতের বিজয়বার্তা শুনিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন মোদি। জনতার কাছে ভোট চান আবারো কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্যে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকারের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানায়- কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিলো ঠিকই, কিন্তু পাকিস্তানি জেট বিমানের তাড়া খেয়ে সেগুলো পালিয়ে যায়। এতে কোনো হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করা হয়।
দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের বার্তায় বলা হয়, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সদস্যদের তাড়া খেয়ে ‘পেলোড’ ফেলে পালিয়ে যায় অনুপ্রবেশকারীরা। পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর সেই ছবি টুইট করে প্রকাশ করেন।
Payload of hastily escaping Indian aircrafts fell in open. pic.twitter.com/8drYtNGMsm
— Maj Gen Asif Ghafoor (@OfficialDGISPR) February 26, 2019
আজ সকালে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের দাবি উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি মন্তব্য করেন, “এই হামলা চালানোর মাধ্যমে ভারত নিজ দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠক থেকে হুমকি আসে- সীমান্ত অতিক্রম করার জন্যে ভারতকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে।
সরকারি ভাষ্যে সত্য খবর পাওয়া দুষ্কর তা কম-বেশি সব দেশের পাঠকরাই মনে করেন। তাই নিরপেক্ষ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত এ দেশের পাঠকদেরও থাকতে হবে বিভ্রান্তির মধ্যে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪৪ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ১২ দিনের মাথায় পাকিস্তান ভূখণ্ডে এই অভিযান চালালো ভারত।
Comments