ভারত-পাকিস্তান: যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে ১৯৪৭ সালে উপনিবেশিক ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে তিনবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে তারা। তবে ১৯৯৯ সালে ‘কার্গিল যুদ্ধের’ পর গত ২০ বছরে বড় সংঘাতের দিকে এগোয়নি ‘চিরবৈরী’ দেশ দুটি।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ৪০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় বিতর্কিত অঞ্চলটিকে ঘিরে। সেই ঘটনার ১২ দিন পর পাকিস্তান ভূখণ্ডে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
ভারতের হামলার প্রতি-উত্তরে পাকিস্তান আজ (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও দুজন পাইলটকে আটকের দাবি করলে সেই আগুনের উত্তাপ যেনো আরও ছড়িয়ে যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতেও।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষদের মনে প্রশ্ন জেগেছে- আসলে কী ভাবছে দেশ দুটির সরকার।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, “নতুন দিল্লি চায় না এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হোক।”
একইভাবে পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি চললেও সেই পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
তবে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশেই চলছে উচ্চ-পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্তাব্যক্তিদের বৈঠক। সেসব বৈঠক থেকে আসছে দেশ রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়। দুই দেশেই রাজনৈতিক নেতারা দিয়ে যাচ্ছেন জ্বালাময়ী বক্তৃতা। তারা নিজ নিজ দেশের সরকারদের দিয়ে যাচ্ছেন পূর্ণ সমর্থন।
খবরে প্রকাশ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজ বৈঠক করেছেন ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির সঙ্গে। এই অথরিটি দেশটির পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
অন্যদিকে, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ঢুকে পড়ায় ভাঁজ পড়েছে মোদির কপালে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পাকিস্তান বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ আজ দেশটির আকাশসীমা বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্যে বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাবসহ দেশটির উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহরের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ঘটনায় জনমনে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করা যায়। কিন্তু, দেশ দুটির সরকারি বার্তায় পরিস্থিতির অবনতি না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তা কতটুকু কার্যকর হবে তা জানা যাবে তাদের আচরণের মাধ্যমেই।
বিগত কয়েক মাসের ভারতীয় এবং পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো পর্যালোচনা করে বোঝা যায় যে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর মতো সক্ষমতা কোনো দেশেই নেই। আর্থিকভাবে দুটি দেশই রয়েছে বেশ নাজুক অবস্থায়।
তবে ভারতে জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে চমক দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি নরেন্দ্র মোদি দিয়েছিলেন তা তিনি এই ‘পাকিস্তান অভিযানের’ মাধ্যমেই দেখালেন কী না সেই প্রশ্ন উঠেছে দুই দেশের গণমাধ্যমেই। দেশের ভেতরে মোদির অবস্থা সন্তোষজনক নয় বলেই কি তিনি এমন একটি ‘যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব’ দেখিয়ে জাগিয়ে তুলতে চাচ্ছেন ভোটারদের?- এমন প্রশ্ন তুলতে পারেন যে কেউই। দেশ দুটির সংবাদমাধ্যমগুলোতে যে সাজ সাজ রব উঠেছে তা কি আসলে রাজনৈতিক খেলা?- সেই সিদ্ধান্ত আসুক শুভবুদ্ধির মানুষদের কাছ থেকে।
Comments