রোমাঞ্চকর জয়ে গাজীকে হারিয়ে সেমিফাইনালে দোলেশ্বর
কোনো মতে ১ পয়েন্ট কিংবা বড় হার এড়াতে পারলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যেতো গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের। আর প্রতিপক্ষকে ১৪৬ রানে আটকে রাখার পর প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের সমীকরণ দাঁড়ায় জিততে হবে ১১ বল হাতে রেখে। আর তাতে শেষ পর্যন্ত জয় হয় দোলেশ্বর। ১২ বল হাতে রেখেই গাজী গ্রুপকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট কাটে দলটি।
সি গ্রুপের তিন ম্যাচ শেষে গাজী গ্রুপ, দোলেশ্বর ও বিকেএসপি তিনটি দলের পয়েন্ট ২ করে। তবে রান রেট বিবেচনায় সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পায় দোলেশ্বর। তাদের নেট রান রেট ০.৩৬৩। গাজী গ্রুপের রান রেট ০.২৯। বিকেএসপির -০.৯।
১৮তম ওভারে জয়ের জন্য দোলেশ্বরের প্রয়োজন ছিল ১৩ রানের। প্রথম ৩ বলে মাত্র ৪ রান দিয়েছিলেন রাব্বি। তাই হারলেও রান রেটে সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ তখনও উজ্জ্বল ছিল গাজী গ্রুপের। কিন্তু চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসে দোলেশ্বর। তবে পরের বলেই আউট হতে পারতেন সৈকত। মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে ক্যাচ ফেলে দেন ফিল্ডার। ২ রান পেয়ে যায় দোলেশ্বর। শেষ বলে ফিল্ডারদের মাথার উপর দিয়ে সিঙ্গেল নিয়েই জয় নিশ্চিত করেন সৈকত।
তবে দোলেশ্বরের জয়ের মূল কৃতিত্বই ছিল অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজার। ১২তম ওভারে ফরহাদ হোসেন যখন আউট হলেন তখনও জিততে প্রয়োজন ছিল ৭৩ রানের। প্রথম সারির পাঁচ উইকেট তখন সাজঘরে। কিন্তু এরপর উইকেটে নেমেই হাত খুলে ব্যাট করতে লাগলেন ফরহাদ রেজা। মাত্র ১৫ বলে সমান ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েই দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে কাটা পড়েন এ অলরাউন্ডার।
কামরুল ইসলাম রাব্বির করা ১৪তম ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে ১৯ রান নেন রেজা। মেহেদী হাসানের করা আগের ওভারটিতেও দারুণ এক ছক্কা হাঁকান তিনি। তবে দারুণ খেলেছেন সৈকত আলীও। ২১ বলে ২৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে রেজার সঙ্গে সৈকতের ৫১ রানের জুটিই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। তবে ২৫ বলে ফরহাদ হোসেনের ৩২ রানের ইনিংসটিও ছিল বেশ কার্যকর।
অথচ এদিন লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই ওপেনার মোহাম্মদ আরাফাতকে হারিয়ে চাপে পরে দোলেশ্বর। এরপর আরেক ওপেনার সাইফ হাসানের সঙ্গে ফরহাদ হোসেনের ৩৬ রানের জুটিতে চাপ সামলে নেয় দলটি। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। স্কোরবোর্ডে ৩৬ রান যোগ করতেই চার উইকেট হারিয়ে বসেছিল দলটি। এরপর ফরহাদ রেজা ও সৈকত আলী ম্যাচের চিত্র বদলে দেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনা পায় গাজী গ্রুপ। ৫১ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন দুই ওপেনার মেহেদী হাসান ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ওয়ালিউল করিম। তবে এ জুটি ভাঙার পর দ্রুতই তিনটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দলটি। তবে চতুর্থ উইকেটে তৌহিদ তারেককে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন শামসুর রহমান শুভ। গড়েন ৫৬ রানের দারুণ এক জুটি। তাতেই লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় দলটি।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন মেহেদী। ২৪ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে এ রান করেছেন তিনি। ৩০ বলে ৪টি চারের সাহায্যে এ রান করেন শামসুর। এছাড়া তারেক ২৬ রান করেন। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান করে গাজী গ্রুপ। দোলেশ্বরের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ফরহাদ রেজা ও আরাফাত সানি।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৬টায় দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ফাইনালের লড়াইয়ে মাঠে নামবে দোলেশ্বর। একই দিনে দুপুর ২টায় প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (মেহেদী ৩৯, ওয়ালিউল ১২, রনি ৮, শামসুর ৩৬, তারেক ২৬, মাইশুকুর ৫*, সাজ্জাদুল ১৫, আবু হায়দার ০*; মানিক ০/২৩, আরফাত ১/২৩, সানি ২/৩৭, এনামুল ১/২৮, রেজা ২/১৮, মাহমুদুল ০/১৫)।
প্রাইম দোলেশ্বর: ১৮ ওভারে ১৪৬/৭ (সাইফ ১৭, আরাফাত ০, ফরহাদ ৩২, মার্শাল ৮, মাহমুদুল ৭, সৈকত ২৮*, রেজা ৩৬, আসলাম ৮, মানিক ৩*; আবু হায়দার ২/৩০, রুবেল ১/২৪, রাব্বি ০/৪৩, রিহানুদ্দিন ২/১৫, মেহেদী ০/৩০)।
ফলাফল: প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী।
Comments