৩০০ জঙ্গি নিহত, ভারতের দাবির প্রমাণ মিলছে না

pakistan
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় ভারতীয় বিমান হামলার পর পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন (আইএসপিআর)-এর পক্ষ থেকে এই ছবিটি প্রকাশ করা হয়। ছবি: এএফপি

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে খাইবার-পাখতুনখোয় প্রদেশের বালাকোট শহরে হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি- সেই হামলায় অন্তত ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। ভারতের সেই দাবি খারিজ করে দেয় পাকিস্তান। তখন জনমনে প্রশ্ন জাগে- আসলে কী ঘটেছিলো বালাকোটে?

ঘটনার পরদিন ইসলামাবাদ থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একদল সাংবাদিককে বালাকোটে নিয়ে যায় পাকিস্তান সরকার। তবে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা নিজ উদ্যোগেই সেখানে চলে গিয়েছিলেন খবর সংগ্রহ করতে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বালাকোট থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গ্রামবাসীরা বলেছেন, তারা চারবার বিকট শব্দের আওয়াজ শুনতে পান। এ ঘটনায় একজন সামান্য আহত হয়েছেন।

গ্রামবাসীরা আরও জানান যে, পাহাড়ের চূড়ায় একটি মাদরাসা রয়েছে। সেটি পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। তবে ভারতীয় বিমানবাহিনী যে স্থানে বোমা ফেলেছে তা মাদরাসা থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে।

ঘটনাস্থলে যাওয়া মোহাম্মদ আজমল নামের ২৫ বছর বয়সী একজন গ্রামবাসী বলেন, “সেখানে গিয়ে দেখি কিছু গাছ পড়ে রয়েছে। একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের ফলে চারটি বড় গর্ত হয়ে রয়েছে।”

রয়টার্সের বরাত দিয়ে এই খবরটি ছেপেছে দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল এবং হাফিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। পরে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর সে খবর নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করে ভারতের কোনো কোনো গণমাধ্যমও।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, সেখানে বড় আকারের জঙ্গি প্রশিক্ষণ থাকার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমের কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তারা বলেন, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এখন এধরনের প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করে না। জঙ্গিরা এখন ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশটির বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ভারতীয়দের বোমা হামলার পরপরই বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছুটে যান বালাকোটে। তারা সেখানে কয়েকটি বড় গর্ত ও ভাঙ্গা গাছ দেখতে পান। তাদের ওপর হামলা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সেখানকার গ্রামবাসীরা।

৪৫ বছর বয়সী একজন গ্রামবাসী তাহির খান সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে কেউ মারা যাননি। কেউ আহতও হননি। জানতে চাই- আমরা এমন কী অপরাধ করেছি যে আমাদের ওপর হামলা করা হলো?”

নিজস্ব সংবাদদাতার বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ভারতীয়দের বোমা গিয়ে পড়েছে জনবসতিহীন পাহাড়ি এলাকায় এবং একজন কৃষকের ফসলের ক্ষেতে। সেখানে কোনো দালানের ধ্বংসাবশেষ বা কোনো হতাহতের দৃশ্য দেখা যায়নি।

কপালে পাথর বা গোলার খণ্ডাংশের আঘাতে সামান্য আহত কৃষক নূরান শাহ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “প্রথম শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানা থেকে উঠে যাই। দ্বিতীয় বোমাটি পড়ে যেনো আমার দরজার কাছেই।” তারপর, দরজা খুলে বাইরে আসতেই তার কপালে আঘাত লাগে বলে তিনি জানান।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো যে খবরই প্রচার করুক না কেনো, অন্তত ৩০০ জঙ্গি নিহত হওয়ার যে দাবি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, তার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

10h ago