ডাকসু নির্বাচন: অভিযোগ আছে, প্রচারণাও চলছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ, বাকি আছে আর মাত্র ছয় দিন। তিন মার্চ চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র হাতে পাওয়ার পর থেকেই জমজমাট প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা।
Dacsu
৫ মার্চ ২০১৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে বাদ্যের তালে তালে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য প্যানেলের একটি মিছিল। ছবি: স্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ, বাকি আছে আর মাত্র ছয় দিন। তিন মার্চ চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র হাতে পাওয়ার পর থেকেই জমজমাট প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। 
 

এতোদিন ক্যাম্পাসে কেবল ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের পদচারণা চোখে বেশি পড়লেও, এখন ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্র জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকটা পাশাপাশি অবস্থানে থেকেই ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরণের সমস্যায় না পড়লেও, হলে গিয়ে প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ এনেছে ছাত্রদলসহ অন্যান্য প্যানেলের সদস্যরা।

আজ (৫ মার্চ) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে প্রার্থীদের পুরোদমে প্রচারণা চালানোর দৃশ্য নজরে এলো। প্রথমেই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দেখা হলো ডাকসু নির্বাচনে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানের (স্বতন্ত্র) সঙ্গে। সেখানে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে লিফলেট বিলি করে ভোট চাইছিলেন। প্রচারণা কেমন চলছে জানতে চাইলে বলেন, “ক্যাম্পাসে ভালোই প্রচারণা চালাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। তবে, ছাত্রলীগ হলগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে এবং এর আগে কয়েকটি হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার চাপ দিয়েছিলো বলে শুনেছি।”

Chatradal
ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী মো. খোরশেদ আলম সোহেল। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

সেখান থেকে ডাকসু ভবনের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই দেখা পাওয়া গেলো ছাত্রদলের। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। তার কাছে প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “শুরু থেকেই নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। এখন পর্যন্ত হলগুলোতে প্রচারণায় যেতে পারিনি আমরা। ক্যাম্পাসে এখন যে সহাবস্থান দেখছেন সেটি ছাত্রলীগের অনুকম্পার সহাবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ক্ষমতাসীনদের সুরেই কথা বলছে। বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তাদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও যেখানে কোনো প্রতিকার পাইনি, সেখানে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।”

এছাড়া, ছাত্রদল প্যানেলের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান ও কবি জসিমউদ্দীন হল সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী তৌহিদুর রহমানের অভিযোগ, ছাত্রদলের মতাদর্শী হওয়ায় তাদেরকে হলে থাকতে দেওয়া হয়নি। হলে ঢুকলেই পেটানো হবে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে এমন হুমকি আসার কারণে তারা হলে গিয়ে প্রচারণা চালাতে সাহস পাচ্ছেন না বলেও জানান।

Neutral Aliance
স্বতন্ত্র জোট প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী শাফী আব্দুল্লাহ, এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী অমিত প্রামানিক। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষ হতেই লিফলেট বিলিরত অপর একদল শিক্ষার্থীকে দেখা গেলো। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন অরণি সেমন্তি খান। তিনি ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র জোট মনোনীত প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী। দলীয় মতাদর্শের বাইরে থেকে জোটের হয়ে গত পরশু থেকে প্রচারণা চালালেও এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়েননি বলে জানান। তবে বলেন, “হলগুলো ছাত্রলীগের ঘাঁটি। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানাভাবে চাপে রাখা হচ্ছে।” ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না উল্লেখ করে বলেন, “এই নির্বাচনটিকে সুষ্ঠু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনেকেই অনেক সুপারিশ করেছে, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডে আশানুরূপ স্বচ্ছতা দেখতে পাচ্ছি না। রিটার্নিং কর্মকর্তারাও বলছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে সমন্বয় করেই যেনো হলগুলোতে প্রচারণা চালাতে যাই।”

Pro Student Aliance
প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী লিটন নন্দী, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী ফয়সাল মাহমুদ সুমন, এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী সাদেকুল ইসলাম সাদিক। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

সেখান থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দিকে এগুতেই ব্যানার, ফেস্টুন হাতে বাদ্যের তালে তালে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য প্যানেলের একটি মিছিল আসতে দেখা গেলো। মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া এই প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী লিটন নন্দীর কাছে প্রচারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সম্মুখীন না হলেও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতিবাচক চর্চা অব্যাহত রয়েছে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক চার জনের মধ্যে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দুই জনকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে তারা। তবে যাইহোক, রড, হাতুড়ি ও হেলমেট বাহিনীর এসব চোখ রাঙানির জবাব শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমেই দিবে।”

Qouta
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী নুরুল হক নুর, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী মোহাম্মদ রাশেদ খান, এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী ফারুক হোসেন। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, “আগের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কিছুটা ভালো। গতকাল থেকে আমাদের প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমেছেন। তবে, সবার বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগ এক ধরনের নীরব চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাতে সরে দাঁড়ায়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।”

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী শাকিকুল ইসলাম, সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী মমিনুল ইসলাম এবং সদস্য পদপ্রার্থী আমির হোসেনকে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা হুমকি-ধমকি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্যার এ এফ রহমান হল সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা শোভনের অভিযোগ, তার নির্বাচনী প্রচারণার কাজে বাধা দিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

Chatraleague
ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী রেজওয়ানুল হক শোভন, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী গোলাম রাব্বানী, এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী সাদ্দাম হোসেন। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) পদপ্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, “দলমত নির্বিশেষে সবাই সুষ্ঠুভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। সবার সঙ্গে আমরা আগে থেকেই পরিচিত। এক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”

হলগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর হুমকি ও প্রচারণায় বাধাদানের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এগুলো ভিত্তিহীন। সুনির্দিষ্ঠভাবে এরকম কোনো অভিযোগ পাইনি।”

ছাত্রদলের প্রার্থীদের হলে থাকতে না দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “সাংগঠনিক দুর্বলতা লুকানোর জন্যই তারা এসব অভিযোগ করেছে।”

Comments

The Daily Star  | English

Mob beating at DU: Six students confess involvement

Six students of Dhaka University, who were arrested in connection with killing of 35-year-old Tofazzal Hossain inside their hall on Wednesday, confessed to their involvement in the crime before a magistrate

2h ago