স্যাটেলাইট ছবিতে বালাকোট স্থাপনা অক্ষত
পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের বিমান হামলার ছয়দিন পর স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেখানে অবস্থিত জইশ-ই-মোহাম্মদের স্থাপনাগুলো অক্ষত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে আসা উচ্চমানসম্পন্ন সেই ছবিগুলোতে সংগঠনটির স্থাপনাগুলোর অস্তিত্ব আগের মতোই দেখা যায়।
গত ৪ মার্চ ছবিগুলো তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্লানেট ল্যাবস ইনকরপোরেশন নামের একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, ভারত যেখানে দাবি করেছে তারা ইসলামপন্থি সংগঠনটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আঘাত করেছে এবং বিপুল সংখ্যক জঙ্গিকে হত্যা করেছে সেখানে হামলার ছয়দিন পর তোলা ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে জইশ-ই-মোহাম্মদ পরিচালিত মাদরাসার ছয়টি ভবন অক্ষত রয়েছে।
এর আগে গত বছর এপ্রিলে সেই স্থাপনাগুলোর ছবি তোলা হয়েছিলো। এই মার্চে তোলো ছবিতে দেখা যায় যে বিমান হামলার পরও সেসব ভবনে কোনো আঁচড়ই পড়েনি।
স্যাটেলাইট ছবিগুলো প্রকাশিত হওয়ায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহর ও জাবা গ্রামের কাছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান হামলার সফলতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সেসব ছবি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
লক্ষ্যভ্রষ্ট হামলা?
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর ইস্ট এশিয়া ননপ্রলিফেরাশন প্রকল্পের পরিচালক জেফরি লুই স্যাটেলাইট ছবিগুলো পর্যালোচনা করে বলেন, “বোমা হামলার কোনো চিহ্ন উচ্চমানসম্পন্ন এই ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে না।… সেখানে হামলাটি যদি সফল হতো আমার মনে হয় তাহলে ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে যেতো।”
পাকিস্তানে হামলার পর ভারত সরকারের সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানায়, সেই অভিযানে ১২টি মিরেজ ২০০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছে। বিমানগুলোতে ১,০০০ কেজি বোমা বহন করা হয়েছিলো। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিমানগুলো ইসরাইলের তৈরি স্পাইস ২০০০ গ্লাইড বোমা দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিলো।
এ বিষয়ে জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফেরাশন স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক সহকারী ডেভ শেমেরলের জানান, এতো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মারণাস্ত্র ব্যবহারের পরও কোনো ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য স্যাটেলাইটে তোলা ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক ফায়দা
বিতর্কিত কাশ্মীরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হামলায় ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানির পর পাকিস্তানের ভেতরে বিমান অভিযান চালিয়ে তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি- এমন ভাবনা এখন শুধু মোদি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোই নয়। এই ভাবনা এখন ছড়িয়ে পড়ছে আমজনতার মধ্যেও।
আগামী মে মাসে ভারতে জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তার সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চাই না। নির্বাচনে জেতার উদ্দেশে আমরা যুদ্ধ চাই না।”
তবে মোদি তার বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করে গত ৩ মার্চ এক নির্বাচনী জনসভায় বলেন, “সেনারা যখন জঙ্গিদের ধ্বংস করতে দেশের ভেতরে ও বাইরে কাজ করছে তখন দেশের ভেতরে কিছু ব্যক্তি সেনাদের মনোবল ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। তারা আমাদের শত্রুদেরকেই আনন্দের খোরাক যোগাচ্ছে।”
Comments