রোহিঙ্গা পরিবার প্রতি ৬ হাজার ডলার দিতে চায় চীন

মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার জন্য চীন রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে ইন্দোনেশিয়ার বেনারনিউজ নামের একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়েছে, ফিরে গেলে প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ সহায়তা দিতে চেয়েছে চীন।
Rohingya refugee camps
মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার কারণে গত বছরের আগস্ট থেকে নতুন করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার জন্য চীন রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে ইন্দোনেশিয়ার বেনারনিউজ নামের একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়েছে, ফিরে গেলে প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ সহায়তা দিতে চেয়েছে চীন।

গতকাল প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়, চীন সরকারের এশিয়া বিষয়ক দূত সুন গোজিয়াং গত ৩ মার্চ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারীর সঙ্গে বৈঠক করেন। খবরের সূত্র হিসেবে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস নামের একটি বেসরকারি সংস্থার মহাসচিব ছৈয়দ উল্লাহকে উদ্ধৃত করেছে বেনারনিউজ।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেনারনিউজ অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। ইংরেজির পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলা ভাষাতেও খবর প্রকাশ করে তারা।

সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ফিরে যেতে রাজি হলে চীনের পক্ষ থেকে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত অর্থ সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুন। তবে রোহিঙ্গারা তার এই অর্থ-সহায়তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা হিসাবে নাগরিকত্ব না দিলে এবং প্রত্যাবাসনের আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে তারা রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি নন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “চীনা সরকারের প্রতিনিধির সাথে রোহিঙ্গাদের সভা সম্পর্কে আমরা অবগত। আমরাই সভাটি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

চীন সরকারের বিশেষ দূত সুন গোজিয়াং সভায় চীনের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করেছেন।”

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের পরিচালক আলাউদ্দীন ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, সুনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের চীনা প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন মিয়ানমারে চীনা দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা এবং ঢাকা দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।

“প্রতিনিধিদলটি ২ মার্চ রাতে ঢাকায় আসে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা ও অন্যান্যদের সাথে সভা করে মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করে,” বলেন তিনি।

খবরে বলা হয়, এই বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চীনের ঢাকাস্থ দূতাবাসে ই-মেইল পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে বেনারনিউজের কাছে সভার একটি ভিডিও রয়েছে। ভিডিওতে চীনা প্রতিনিধিদলটিকে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ব্যানারে তারা এ বৈঠকে অংশ নেয়। সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন, “চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পের ২৯জন নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলাম।”

“শুরুতেই তারা আমাদের কাছে জানতে চান, আমরা সবাই নতুন রোহিঙ্গা কিনা এবং আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী কিনা। আমরা বলেছি, আমরা এখনই চলে যেতে রাজি, যদি আমাদের সব দাবি পূরণ করা হয়। অন্যথায় যেতে রাজি নই,” বলেন তিনি।

মুহিব বলেন, “প্রতিনিধিদলের প্রধান আমাদের বলেছেন- তারা আমাদের ভিটে দেবেন, রাখাইনে বসবাসের জন্য বাড়ি-ঘর তৈরি করে দেবেন এবং ফিরে যেতে রাজি হলে প্রতি পরিবারকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার অর্থ সহায়তাও দিবেন।”

একই সংগঠনের সেক্রেটারি ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, “তারা প্রথমেই এসে আমাদের কাছে জানতে চান, প্রতি পরিবারকে পাঁচ-ছয় হাজার ডলার দিলে মিয়ানমারে ফিরে যাব কিনা।”

তিনি বলেন, “তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে আমরা বলেছি, আমাদের স্বীকৃতি এবং নাগরিকত্ব দেওয়াসহ সকল দাবি পূরণ না হলে আমরা কোনোভাবেই ফিরে যাব না। টাকা দিয়ে আমাদের কেনা যাবে না।”

ছৈয়দ উল্লাহ আরও বলেন, “মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। আমরা এখন তাদের আর বিশ্বাস করতে পারি না। তাই আমরা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কথা বলেছি। প্রয়োজনে চীনও সেখানে থাকতে পারে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা বেনারকে জানান, বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে দুই লাখ ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে। তবে খুব দ্রুত এত ঘরবাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

“মূলত এ কারণে চীনা প্রতিনিধি অর্থ দেওয়ার কথা বলেছেন যাতে রোহিঙ্গারা নিজেরা তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে নেয়,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের শতকরা ৫০ ভাগ পরিবারে কোনো পুরুষ নেই বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, “তাদের টাকা দেওয়া কোনো বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নয়। বরং দ্রুত বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণে চীনের দক্ষতা আছে। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিতে পারে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা আশা করি আঞ্চলিক শক্তিশালী দেশ হিসাবে এবং মিয়ানমারের সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণে রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে চীন। “যাতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে,” যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago