পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস এক হচ্ছে!
পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসন সংখ্যা ৪২টি। তবে, এই আসনের অঙ্ক মেলাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্যালকুলেটর ভাঙার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় ৪২ আসনের অঙ্কটা বরাবর গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ নির্বাচনে তৃণমূল রাজ্যে ৩৪টি আসন পেয়ে ভারতের সংসদের দুই কক্ষেই প্রভাব বিস্তার করেছে।
এদিকে, রাজ্যের প্রধান দুটি রাজনৈতিক শিবির তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি তাদের প্রার্থী ঘোষণা না করলেও, এই দুই শিবিরের কট্টরবিরোধী বামফ্রন্টের আংশিক প্রার্থী ঘোষণা হওয়ায় রাজ্য জুড়ে লোকসভা নির্বাচনের নতুন করে জোট গঠনের জল্পনা তৈরি হয়েছে।
বিজেপি বিরোধী জোটের এক বৈঠকে রাহুল গান্ধী ও মমতা ব্যানার্জী ছিলেন। এমন কি মমতা বহুবার বলেছেন, জোটের বিষয়ে কংগ্রেসের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী হওয়ার রাজনৈতিক ছবিটি শুরু থেকেই অস্পষ্ট ছিলো। তারা কখনও বামফ্রন্টের দিকে ঝুকেছে আবার কখনো তৃণমূলের দিকে। যদিও এই ছবিটি এখন প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে বামফ্রন্টের দুটি আসানের প্রার্থী ঘোষণা করার পরপরই।
শুক্রবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মুর্শিদাবাদ এবং মালদার দুটি লোকসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন। মুর্শিদাবাদের প্রার্থী বাম নেতা বদরুদ্দোজা খান এবং মালদার রায়গঞ্জের সিপিএম পলিটব্যুারোর সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি বর্তমান সাংসদও। এই দুটি আসনে কংগ্রেস কোনও প্রার্থী দেবে না বলে দলীয় সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হচ্ছে। এমন কি কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরেও এমন ইঙ্গিত মিলছে।
ভারতের সর্বশেষ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কংগ্রেস ৪টি আসনে তাদের প্রার্থীকে জয়ী করতে পেরেছিলো। সেবারও কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক জোট হয়নি।
আসন সংখ্যার দিক থেকে বামফ্রন্টও সেবার জয়ী হয়েছিল মাত্র দুটো আসনে। দুটি রাজনৈতিক দলই রাজ্যের ৪২ টি আসনের প্রার্থী দিয়েছিলো এককভাবে।
এবার জোট-নিশ্চিত হলে দুই দলের জেতা আসনগুলো ছাড় দিয়ে বাকি আসনগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনে সবাই প্রার্থী দিতে চাইছে।
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বামদের সঙ্গে জোট নিয়ে যে জট দেখছেন আপনারা, সেটি আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের হাইকমান্ড (রাহুল গান্ধী অথবা সমকক্ষ নেতৃত্ব) ইতিবাচকভাবেই জোটের অঙ্ক মেলাচ্ছেন। আশাকরি বাকি আসনগুলোর মধ্যে জোটের ছবিটি দু’একদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
একইভাবে সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য, রায়গঞ্জ আসনের ঘোষিত প্রার্থী মো. সেলিম বলেন, “জোট হওয়ার সিদ্ধান্তটা প্রত্যাশিত। কিছু সমস্যা হয়েছিলো, তবে সেটি দ্রুত কেটে যাচ্ছে।”
বাম-কংগ্রেসের একজোট হওয়ার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত বলেও দাবি করেছেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলটির পশ্চিমবঙ্গে তাদের চারটি জেতা আসন- বহরমপুর, জঙ্গিপুর, উত্তর ও দক্ষিণ মালদা ছাড়াও আরও ১৪ থেকে ১৬ টি আসনের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে বামদের সমর্থন চেয়েছে। আবার একইভাবে বামও রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদের জেতা আসন ছাড়াও ২২ থেকে ২৫টি আসনের প্রার্থী দিতে চাইছে।
রবিবার নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে যতদ্রুত সম্ভব জোটের ঘোষণা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেসের বহু নেতার সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার এমন আভাস পেয়েছে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করেন, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস এক হলে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে মিলিত রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসকেও থামানো যাবে।
Comments