‘৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারিনি’

DUCSU poll line
১১ মার্চ ২০১৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য। ছবি: স্টার

জগন্নাথ হলে ভোট দিতে এসেছিলেন শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী মেঘমাল্লার বসু। জানান, তিনি প্রায় ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভোট দিতে সক্ষম হননি।

আজ (১১ মার্চ) দুপুরে মেঘমাল্লার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি হলে থাকি না। থাকি মোহাম্মদপুরে। ভোট দেওয়ার আসায় গতরাতে ভূতেরগলিতে এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। সকাল ৮টার আগেই ভোট দিতে এসে দেখি লাইনে তিনশর মতো শিক্ষার্থী।”

“ঘণ্টা দুয়েক পর লাইনটি একটু এগিয়ে যায়। কিন্তু, তারপর আর আগায় না। আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে লাইন ছেড়ে বের হয়ে এক শিক্ষকের কাছে জানতে চাই- স্যার, লাইন এগুচ্ছে না কেনো? তিনি উত্তরে বলেন- ধৈর্য্য ধরো। আস্তে আস্তে হবে।”

“এমন সময় ছাত্রলীগের প্যানেল-পরিচিতি কার্ড ধারনকারী একজন বলে বসে, ‘গলা নিচে নামা। লাইনে দাঁড়িয়ে থাক।’ অবশেষে, প্রায় ৫ ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করে বেলা পৌনে ১টার দিকে লাইন ছেড়ে চলে আসি,” যোগ করেন সেই শিক্ষার্থী।

প্রধান প্যানেলগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ মনোনীত প্যানেল ছাড়া সবাই অনিয়মের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন বর্জন করে। আজ ভোট চলাকালে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন হল ঘুরে শিক্ষার্থীদের কাছেও শোনা যায় বিভিন্ন অনিয়মের কথা।

গলায় ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের প্যানেল-পরিচিতির কার্ড বহনকারী মাস্টারদা সূর্যসেন হলের আবাসিক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারের এই সংবাদদাতাকে জানান, “গতকাল (১০ মার্চ) রাতেই সাত-আটটি গ্রুপ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ১৫জন রয়েছেন। তাদের কাজই হচ্ছে লাইনের ভেতরে দাঁড়ানো। যাতে অন্য শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে না পারে।”

সেই শিক্ষার্থী আরও জানান, “দলের কর্মীরা যখন ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢোকে তখন তারা বিভিন্ন উছিলা দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়ায়। এভাবে তারা সময় নষ্ট করে।”

সেই কর্মীরা সকাল ৯টার মধ্যে ভোট দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সেই শিক্ষার্থী আরও জানান যে, তিনি ছাত্রলীগের প্যানেল পরিচিতি কার্ড গলায় দিতে বাধ্য হয়েছেন হলের বড়ভাইদের নির্দেশে।

সেই হলের অপর এক শিক্ষার্থী জানান, “ছাত্রলীগের কর্মীরা ভোট দেওয়া শেষে আবারো লাইনে এসে দাঁড়াচ্ছে। ফলে লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। কেউ ভোট দিতে পারছে না। সেই কর্মীরা লাইনের কাছাকাছি চলে এলে সেখান থেকে সরে গিয়ে তারা আবার লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় অথবা লাইনের মাঝখানে ঢুকে যায় যাতে অন্যদের ভোট দেওয়া প্রলম্বিত হয়।”

তিনি জানান তার কার্ড অনাবাসিক হওয়ার কারণে তাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো। “পরে হলের পরিচিত বড়ভাইদের সহযোগিতায় ভোট দিতে পেরেছি,” যোগ করেন তিনি।

তার মতে, যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে এসেছে তাদেরকে বার বার লাইনের পেছনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এস এম হলের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “শুধুমাত্র হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অথবা হলে থাকেন অথচ অনাবাসিক কিংবা যারা পরিচিত শুধুমাত্র তাদেরকে হলের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।”

সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই এস এম হলের মূল ফটকের বাইরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা দাঁড়িয়েছিলেন। তারা ভোট দিতে আসা শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখছিলেন। ‘সাদা কার্ড’-ধারী অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তারা লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখছিলেন। কাউকে আবার লাইনের শেষে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন।

সেসময় শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা যাবৎ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপরও লাইন এগোচ্ছিলো না। অর্থাৎ, তারা যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানেই রয়েছেন। বুথ তো দূরের কথা ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছিও যেতে পারেননি।

ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে ছাত্রদের প্রতিটি হলের চিত্র প্রায় একই রকম দেখা গেছে। ছাত্রলীগের একই কর্মীরা বার বার ফিরে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে লাইনটি দীর্ঘ করছে এবং যারা ভোট দেয়নি তাদেরকে সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ভোট দিতে আসা এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে একই জায়গায় প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পরে তিনি ভোট দিতে পেরেছেন বলে জানান।

ভোটকেন্দ্রে ঢুকে অনেকেই কালক্ষেপণ করতে দেখা গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago