সিনেমার মতো সে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দিলেন পাইলট
দুইজন খেলোয়াড় বাদে পুরো দল জুম্মার নামাজ আদায় করতে গেলেন স্থানীয় মসজিদে। যখন পৌঁছালেন তার মিনিট পাঁচ আগে ঘটে গেছে ভয়ানক এক ঘটনা। সন্ত্রাসী হামলায় মসজিদে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে নয় জন। একটু আগে পৌঁছালে মৃতের তালিকায় নাম থাকতে পারতো কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারেরও। বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন তামিম-মুশফিকরা।
সে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা জানালেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট, ‘আমরা এ ধরণের ঘটনা কেউ আশা করি না। আমরা বাসে অনেকজন ছিলাম। অনেকজন বলতে ষোলো সতের জনের মতো। এর মধ্যে সৌম্য সরকারও ছিল। আমরা সবাই নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। দুইজন খেলোয়াড় হোটেলে ছিল। বাকী সবাই ছিলাম। আমরা খুবই কাছে ছিলাম। আমরা মসজিদ বাস থেকে দেখছিলাম। এবং খুব বেশি হলে ৫০ গজের মতো দূরে ছিলাম। বলবো খুবই ভাগ্যবান। আর যদি তিন চার মিনিট আগেই চলে আসতাম তাহলে মসজিদের মধ্যে থাকতাম। তাহলে বিশাল বড় একটা ঘটনা ঘটে যেত।’
‘আমরা ভাগ্যবান যে আমরা ভিতরে ছিলাম না। বাইরে থেকে দেখেছি। আমরা ভিডিওর মতো দেখেছি। সিনেমার মধ্যে দেখলে যেমন দেখায় বাসের ভিতর বসে দেখেছি যে মানুষজন রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসছে। বেশ কিছু মানুষ বেরিয়ে আসতে পেরেছে। প্রায় আট দশ মিনিট বাসের মধ্যে মাথা নিচু করে ছিলাম। কোনো কারণে যদি গুলি এদিকেও ছুড়তে থাকে। যদি তারা বের হয়ে বাসের ভিতর এতো মানুষ দেখে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে এই ভেবে তখন সব খেলোয়াড়রা আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে মাঝের যে পেছনের দিকের গেট আছে সেটা দিয়ে চলে যাব। তারপর আমরা পার্ক দিয়ে পেছন দিয়ে চলে গিয়েছি।’ – যোগ করে আরও বলেন পাইলট।
মূলত সামরিক বাহিনীর পোশাক পড়ে এসে এক ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে আল নূর মসজিদে মুসল্লিদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুরো দলই আতঙ্কিত। দলের অবস্থার কথাও জানালেন ম্যানেজার, ‘আপনি ধরেন সামনে থেকে দেখেছেন সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে একেবারে জীবন্ত দেখেছেন রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষ বেরিয়ে আসছে। সব মানুষেরই তখন ভেঙে পড়ার কথা। নিজের গায়ে যে তখন এটা আসবে না, এমনটা কেউ জানত না। আমার মনে হয় খেলোয়াড়দের অনেকেই কান্নাকাটি করেছে, অনেকে কি করতে পারে, কি করলে কি হবে, কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারে, এসব আলোচনা চলেছে। আমার মনে হয় এটা খুবই কঠিন। (এসব ঘটনা) প্রত্যেককে মানসিকভাবে আঘাত করে মনে হয়। এই মুহূর্তে আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই হোটেলে আছে। আমি ম্যানেজার হিসেবে চেষ্টা করেছি সবাই হোটেলে নিয়ে আসার। এখানে মিটিংয়ে নিয়ে এসেছিলাম এবং যারা যায়নি হোটেলে ছিল বেশ কিছু স্টাফও ছিলেন।’
এদিকে সন্ত্রাসীদের এ ঘটনায় বাতিল করা হয়েছে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। খুব শীগগিরই দেশে ফিরবেন ক্রিকেটাররা। কবে ফিরছেন তাও জানালেন পাইলট, ‘এখনও নিশ্চিত হয়নি। তবে যতো দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা করা হবে। এখানে টিকেটের ব্যাপার আছে। এতোগুলো টিকেট এক সাথে, উনিশ জন যাবো এখান থেকে ঢাকায়। এছাড়া অন্যান্য সহায়ক কোচ আছে কেউ হয়তো উইন্ডিজ যাবে কেউ হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা যাবে। তাদের জন্য হয়তো একটা টিকেট পেয়ে যাবো খুব শীগগিরই। তবে এই উনিশ জনের জন্য খুব তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা চলছে। যেভাবেই হোক। আগে পিছে করেও যেমন সাত জন এ ফ্লাইটে, নয় জন পরেরটায়। যেভাবেই হোক চলে যেতে চাচ্ছি।’
Comments