গণমাধ্যমে গুরুত্ব পায় না অমুসলিম সন্ত্রাসীদের হামলার খবর
সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতরা অমুসলিম সম্প্রদায়ের হলে সেই খবর গণমাধ্যমে কম গুরুত্ব পায় বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের হলে তুলনামূলকভাবে গণমাধ্যমে অধিক ফলাও করে প্রচার করা হয়।
“কিছু সন্ত্রাসী হামলার খবর কেন গণমাধ্যমে বেশি গুরুত্ব পায়?” শীর্ষক ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামা থেকে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলায় মুসলিমদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে গণমাধ্যমে যত খবর প্রকাশিত হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি ছিল এই হামলাগুলো সম্পর্কে।
যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের ধর্মীয় পরিচয়ের এই চিত্র তুলে ধরে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি যে সন্ত্রাসী হামলায় মুসলিমরা জড়িত থাকলে গণমাধ্যমে সেই খবর অমুসলিমদের সন্ত্রাসী হামলার খবরের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পায়।”
মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন যুক্ত ছিল এমন একটি সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় খবরের সংখ্যা ৩৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
গণমাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলার খবর উপস্থাপনের দুই রকম প্রবণতা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিয় আরা নাসরীন বলেন, সন্ত্রাসী হামলায় কোনো মুসলিম যুক্ত থাকলে তার কাজের জন্য পুরো সম্প্রদায়কেই দায়ী করা হয়। কিন্তু একই রকম ঘটনায় ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ জড়িত থাকলে গণমাধ্যমে শুধুমাত্র হামলাকারীকেই তুলে ধরা হয়।
“আমরা সবসময়ই দেখি, হামলাকারী অমুসলিম হলে, গণমাধ্যম তার ধর্মীয় পরিচয়ের দিকে জোর দেয় না। হামলাকারীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বা উন্মাদ হিসেবে দেখানো হয়,” যোগ করেন তিনি।
গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা আগে থেকেই বলছেন, হামলার পর জড়ির ব্যক্তি সম্পর্কে গণমাধ্যমে কী বলা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই হামলাকারীর একটা পরিচয় পাওয়া যায়। শুরু থেকেই যদি ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায় যে হামলাকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ হবে।
কিন্তু হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে যখন খবরে নির্দিষ্ট করে বলা হয় না অথবা “সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে উল্লেখ করতে দ্বিধা দেখা যায় তখন বুঝে নিতে হয় যে হামলাকারী অমুসলিম ককেশীয় কোনো ব্যক্তি।
তবে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরকারিভাবে বলা হয়, দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার ঘটনাটি সন্ত্রাসী হামলা ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রেও হামলাকারীর চেহারা ঝাপসা করে দেখানো ও তার পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু হামলাকারী কৃষ্ণাঙ্গ বা ইসলামের সংযোগ থাকলে ভিন্ন অবস্থা দেখা যায় গণমাধ্যমে। এরকম ঘটনায় হামলাকারীর ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় বা সে কোন দেশের নাগরিক তা কিছুক্ষণের মধ্যেই শিরোনামে চলে আসে।
ক্রাইস্টচার্চের ব্রেন্টন ট্যারেন্টের কথা এক্ষেত্রে একটি চমৎকার উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। হামলার পর তাকে কোথাও “শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী” বা “খ্রিষ্টান সন্ত্রাসী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। যদিও তার ৭৪ পৃষ্ঠার ইশতেহারের তার বর্ণবাদী আদর্শ ও ধর্মীয় ঘৃণার কথা সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সকল পশ্চিমা গণমাধ্যমের মালিক অমুসলিম ব্যক্তিরা। বিশেষ করে ইহুদিদের মালিকানায় রয়েছে বেশ কিছু বড় গণমাধ্যম।
“মিডিয়া রেসিজম সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। মুসলিম ও অমুসলিমদের সন্ত্রাসী হামলার উপস্থাপনায় ভিন্নতা মিডিয়া রেসিজমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।” অধ্যাপক ইমতিয়াজের ভাষ্য।
Comments