স্বাধীনতার সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে কাজ করছি: প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ মার্চ ২০১৯, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। ছবি: বাসস

দেশের স্বাধীনতার সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সরকার কাজ করছে বলে জনিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “স্বাধীনতার সুফলটা যেন বাংলার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারি, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি এবং আর্থসামাজিক ভাবে যেন আমরা উন্নত হতে পারি, উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে যেন একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যার সুফল দেশবাসী পেয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, “আজ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি-যেন এই দিনটা গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী দেশের ১৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গৌরবময় ও অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৯ এ ভূষিত করেন।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জ্বল হায়দার চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ এটিএম জাফর আলম (মরণোত্তর), এ কে এম মোজাম্মেল হক, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. কাজী মিসবাহুন নাহার, আব্দুল খালেক (মরণোত্তর) ও অধ্যাপক মোহাম্মাদ খালেদ (মরণোত্তর), শওকত আলী খান (মরণোত্তর), চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম, সমাজ সেবায় ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ, সংস্কৃতিতে মুর্তজা বশীর, সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অধ্যাপক ড. হাসিনা খাঁন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারকে (বিআইএনএ) এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

পুরস্কার হিসেবে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি পদক এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের পরিচিতি তুলে ধরেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিচারপতিগণ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিদেশী কূটনিতিকবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক দশকের প্রচেষ্টার ফলে এই অর্থবছরের শেষ নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি আমরা ৮ ভাগে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭শ ৫১ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯শ’ নয় মার্কিন ডলার হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে আজকে বাংলাদেশকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে। এটুকুই আমাদের তৃপ্তি। বিশ্বে বাংলাদেশকে আমরা এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিপুল ভোটে তার দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় নিয়ে আসায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, তারা আমাদেরকে আস্থায় নিয়েছেন, বিশ্বাস রেখেছেন, আমাদের ভোট দিয়ে আবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং সামনে আরও কিছুদিন আমরা সময় পাচ্ছি, দেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।”

তার এবং দলের চলার পথ সবসময়ই কণ্টকাকীর্ণ ছিল উল্লেখ কওে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের চলার পথ কখনই সহজ ছিল না।”

উদাহরণ টেনে বলেন, একটা দৃষ্টান্ত দিতে পারি যখন পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমার বা আমার পরিবারের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো তখন আমরা সেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম যে, দুর্নীতি কোথায় হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা না করতাম তাহলে কখনই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পরতাম না।

তিনি বলেন, “সততাই হলো সবথেকে বড় শক্তি। আর সেই শক্তি ছিল বলেই সকল ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছিলাম।”

স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আমরা স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে পেরেছি, সেজন্য আমরা নিজেরেকে ধন্য মনে করি। আমরা গুণীজনকে সম্মান জানাতে পেরেছি। তবে, আমাদের দেশ ও সমাজের আনাচে-কানাচে আরও এমনি বহু গুণীজন ছড়িয়ে রয়েছেন।”

জাতির পিতার কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ তথা বাকশাল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৩ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা দলগুলো ৯টি আসনে জয়লাভ করেছিল। যারা কখনও নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না সেসব রাজনৈতিক দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতির পিতা বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়াম লীগ গড়েছিলেন। এটি একটি জাতীয় ঐক্যভিত্তিক প্লাটফর্ম ছিল। যেখানে ঐক্যের মধ্যদিয়ে সকলেই দেশের কাজ করবে এবং সেখানে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে তিনি উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যেই ব্যবস্থাটা নিয়েছিলেন সেটা কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশে জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আর কেউ খেলতে পারতো না। নিজের মনের মতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জনগণ নির্বাচিত করতে পারতো।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা সেময় নির্বাচনের যে পদ্ধতি করেছিলেন সে অনুযায়ী যার যার নির্বাচন সে সে করতে পারবে। নির্বাচনের খরচ প্রতিটি প্রার্থীকে দিয়ে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের তরফ থেকে। প্রতি আসনের জন্য পৃথক একটি করে পোষ্টারে সকল প্রার্থীর নাম ছাপিয়ে দেওয়া হবে কাজেই জনগণের সাথে যার যোগাযোগ আছে, সম্পৃক্ততা আছে তারা নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ ভোটের অধিকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে যাতে পৌঁছায়, তাঁরা যেন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে সেই সুযোগ তিনি করে দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দু’টি নির্বাচন হয়েছিল সেসময়। এর একটি কিশোরগঞ্জে অপরটি পটুয়াখালীতে। সেখানে বড় কোন দলের কেউ নয়, সাধারণ একজন স্কুল মাস্টার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। অর্থাৎ অর্থ-বিত্ত দিয়ে কেউ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারেনি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার একটা কথা ছিল একটা বিপ্লবের পর সমাজে একটা বিবর্তন আসে। যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে সেসব দেশেই এমনটি হয়, পরিবর্তন বা বিবর্তনের পরে কিছু লোক আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে যায়। সেটা যেন সমাজে স্থান না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি এই বাকশাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সেইসাথে আমাদের জনসংখ্যা বেশি এবং চাষের জমি কম থাকায় সেখানে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন সমবায়ের মাধ্যমে দেশে উৎপাদন হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জমির মালিকানা মালিকের কাছেই থাকবে। কোন মালিকানা নেওয়া হবে না। কিন্তু জমিটি সমবায়ের মাধ্যমেই চাষাবাদ হবে। উৎপাদিত ফসলের একটা অংশ যারা শ্রম দেবে তারা পাবে, একটা অংশ মালিক পাবে আর একটা অংশ পাবে সমবায় এবং আধুনিক প্রযুক্তি কৃষিতে ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো হবে।

ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নকালেই ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করায় সে রিপোর্ট আর বাস্তবায়িত হতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি বেঁচে থাকলে আর ৫-৭ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী হয়ে গড়ে উঠতে পারতো।”

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

10h ago