বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে আরও একটি বিদেশি এয়ারলাইন্স

আরও একটি বিদেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক বাজেট এয়ারলাইন্স স্কুট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের শেষ ফ্লাইটটি পরিচালনা করবে আগামী ২৯ এপ্রিল।
scoot airlines
স্কুট এয়ারলাইন্স। ছবি: সংগৃহীত

আরও একটি বিদেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক বাজেট এয়ারলাইন্স স্কুট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের শেষ ফ্লাইটটি পরিচালনা করবে আগামী ২৯ এপ্রিল।

স্কুট এয়ারলাইন্সের জেনারেল সেলস এজেন্ট নভো এয়ারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ কথা জানান। রুট রিশিডিউল এবং ঢাকা-সিঙ্গাপুর এর তুলনায় অন্য রুট বেশি লাভজনক হওয়ার কারণে স্কুট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্সটির একজন কর্মকর্তা।

এর আগে গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক ফ্লাই দুবাই এবং ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়।

এর আগেও বিভিন্ন সময় আর্থিকভাবে লোকসানসহ বিভিন্ন কারণে ওমান এয়ার, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কোরিয়ান এয়ার, আরএকে এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ব্যাংকক এয়ারওয়েজ, শ্রীলঙ্কা-ভিত্তিক মাহিন লঙ্কা, বাহরাইন-ভিত্তিক গালফ এয়ারওয়েজ এবং নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক কেএলএম বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

বেসরকারি বিমানচলাচল বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত- এতো অল্প সময়ে বাংলাদেশ থেকে এতোগুলো বিদেশি আকাশ পরিবহন সংস্থার ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া দেশটির বিমানচলাচল শিল্পে খারাপ প্রভাব ফেলবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আব্দুল মোমেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ঢাকার বিমানবন্দরটি এই অঞ্চলে একটি চমৎকার উড়োজাহাজ চলাচল কেন্দ্র হিসেব গড়ে উঠতে পারতো। এখান থেকে পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যেতো। কিন্তু, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খুব একটা নজর দেননি।”

তিনি জানান, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া নতুন আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রথম বছরে কোনো কর ধার্য করে না। এর মাধ্যমে তারা নতুন নতুন বিদেশি সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

এর বিপরীতে, বাংলাদেশে বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থাকে কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়া হয় না। উপরন্তু, বাংলাদেশে উড়োজাহাজ জ্বালানির দাম বেশি পড়ায় ঢাকাকে বিদেশি সংস্থাগুলো এড়িয়ে চলতে চায় বলে মন্তব্য করেন ড. মোমেন।

তিনি জানান, ঢাকায় বোর্ডিং ব্রিজের সংখ্যা কম থাকায় এবং লাগেজ ব্যবস্থাপনায় বেশি সময় লাগার পাশাপাশি বিদেশি সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন রকমের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়।

ড. মোমেন মনে করেন, দেশি সংস্থাগুলো এই শূন্যতা পূরণ করে নিজেদের ব্যবসার বিস্তার ঘটাতে পারে।

দেশের বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

তিনি বলেন, “অনেক সংস্থা তাদের বাজার কৌশলের কারণে অন্যত্র ব্যবসা সরিয়ে নেয়। কোনো সংস্থা আবার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেয়ে তাদের ব্যবসা গুটায়।”

বেসরকারি বিমান পরিবহন ক্ষেত্রে গত দুই দশক কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কামরুল বলেন, ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালানো ব্যয়বহুল। কেননা, এখানে ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশন, নিরাপত্তা এবং জ্বালানির খরচ অনেক বেশি।

বর্তমানে ঢাকা থেকে সরাসরি সিঙ্গাপুরে উড়োজাহাজ পরিচালনা করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, দেশি বেসরকারি সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ এবং দুটি বিদেশি সংস্থা- সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এবং স্কুট।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (অপারেশন ও প্লানিং) এয়ার কমোডর এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি নির্দিষ্ট রুটে ফ্লাইট না চালানো ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনায় আনতে হয়। যেমন, যথেষ্ট সংখ্যায় যাত্রী পাওয়ার বিষয়টি অন্যতম।

একটি আকাশ পরিবহন সংস্থা কেনো বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিচ্ছে তা জানা বেবিচকের কাজের মধ্যে পড়ে না বলেও মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার চলে যাওয়ায় দেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন না তিনি।

কোনো উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা তাদের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বেবিচককে অনেক আগে থেকেই লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়। স্কুটও তাই করেছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশ দুটির মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে যাত্রী চলাচলের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago