ছাত্রদের স্বার্থে স্বতন্ত্র জোট সহযোগিতা করতে প্রস্তুত: অরণি
অরণি সেমন্তি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী। মাস্টার্স শেষ করার আগ দিয়ে এবছর স্বতন্ত্র জোট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। স্বতন্ত্র জোটের ভবিষ্যৎ, কিসের অনুপ্রেরণায় ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সর্বোপরি ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সবিস্তার কথা বলেছেন অরণি।
ডিনস এওয়ার্ড পাওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে দেখা যায় না। কীসের টানে আপনি গেলেন?
অরণি: এখন আমি যা সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত করের টাকায় আমার পড়ালেখার খরচ চলেছে। জনগণের কাছে আমি ঋণী। আমার প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে জনগণের জন্য কথা বলতে পারি আর সবসময়ই আমি দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছু করতে চেয়েছি।
অবশ্যই মা-বাবাই আমার অনুপ্রেরণার উৎস। অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলাটা হয়ত আমার রক্তেই রয়েছে—আমার বাবা ও দাদু দুজনেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আমার প্রপিতামহ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। জনগণের ক্ষমতা আমাকে চমৎকৃত করে, এর পেছনেই জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
ডাকসু নির্বাচনের দিন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে শোভনকে উদ্দেশ্য করে আপনাকে বলতে দেখা যায় “এর সঙ্গে ছবি তুলব না। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ছবি তুলি না।” সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল?
অরণি: সেদিন রোকেয়া হলে গিয়ে দেখি ছাত্রীরা হল সংসদ অফিসের দরজা ভেঙে ব্যালট পেপার উদ্ধার করেছে। অফিসের কাছে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শোভন, রাব্বানী একটু দূরে ছিলেন। মোবাইল থেকে ফেসবুকে তখন লাইভ চলছিল। শুনতে পেলাম শোভন বলছেন, “এদের মার, মার, ধর”। (লাইভ) ভিডিওটিতেও শোভনের কথা শোনা যাচ্ছিল। শোভন এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমার আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়। আর একটু হলে চশমাটাও ভেঙে যেতো।
শোভনের সঙ্গে ছবি তুলতে অস্বীকৃতি জানানোর পর ইন্টারনেটে আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
অরণি: টিএসসির অডিটোরিয়ামের ভেতরে তার কিছুক্ষণ আগেই নুরের সঙ্গে কোলাকুলি করেছিলেন শোভন। নুরের সঙ্গে এই ব্যবহারে আমি খুশি হলেও মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই যিনি আমার ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তার সঙ্গে ছবি তুলতে সম্মত হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ইন্টারনেটে আমার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অনলাইনে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। আমার ফেসবুক আইডিতে এত বেশি রিপোর্ট করা হয় যে কিছু সময়ের জন্য একাউন্ট ডিএকটিভেট হয়ে গিয়েছিল। আমার আশা মানুষের ওপর হামলে পড়ার এই সংস্কৃতি থেকে ছাত্রলীগ একদিন বেরিয়ে আসবে। তারা অন্তত আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন।
আপনার (স্বতন্ত্র জোটের) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে অনেকেই ধন্দে ছিলেন বলে মনে হয়েছিল। একটু পরিষ্কার করুন।
অরণি: আমাদের কোনো পিতৃ সংগঠন নেই। তাই হাসিল করারও কিছু নেই। আমরা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই সক্রিয়। যদিও আমি নিজেও এমন অনেক আন্দোলনেই ছিলাম যেখানে রাজনীতিবিমুখ ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছাত্রদেরও অংশগ্রহণ ছিল। স্বতন্ত্র জোটের সক্রিয়তা শুধুমাত্র ক্যাম্পাসের ভেতরের সমস্যা-সংকট নিয়ে। আমরা জাতীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত না—স্বতন্ত্র জোট ছাত্রদের দিয়ে তৈরি, ছাত্রদের জন্য ও ছাত্রদের দ্বারা, ডাকসুর প্যানেলের ঠিক যেমন হওয়া উচিৎ।
আপনারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যখন বর্জনেরই ঘোষণা দিলেন তখন ফলাফলের বিরোধিতা করছেন কেন?
অরণি: নির্বাচনের দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করি। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেছিলাম কিন্তু সেটা বৃথা ছিল। যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচনটা হলো তার বিরোধিতা করেছি আমরা। শুরু থেকেই যেহেতু আমরা এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তাই এর বিরোধিতা করাটা আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কাজে কেমন সক্রিয়তা দেখলেন?
অরণি: শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তারা রাজনীতি সচেতন। ভোটের দিন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বিপুল উপস্থিতি ও ডাকসুর প্রতি তাদের যে আগ্রহ সেটি আমাকে বিস্মিত করেছে। প্রচলিত ধারার প্রার্থীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি আমি শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখছি।
ডাকসুর বর্তমান প্যানেলের বেশিরভাগ পদেই ছাত্রলীগের নেতারা। আপনি কি মনে করেন তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব?
অরণি: ছাত্রলীগের সঙ্গে আমাদের বিশাল ফারাক থাকলেও, নুরুলসহ প্যানেলের অন্যান্যদের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করব শুধুমাত্র যদি তারা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেন। কিন্তু তারা তাদের পিতৃ সংগঠনের এজেন্ডা ক্যাম্পাসে বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে আমি প্রতিবাদ করব। বিরোধী পক্ষ হিসেবে স্বতন্ত্র জোট শিক্ষার্থীদের পক্ষে থেকে কাজ করে যাবে।
স্বতন্ত্র জোট নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা।
অরণি: স্বতন্ত্র জোট থাকবে। আরও শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে স্বতন্ত্র জোটের পরিসর বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমান বিরোধী পক্ষ হিসেবে এবং আগামী বছরের নির্বাচনের প্রার্থী কারা হবে সেই পরিকল্পনাও আমরা তৈরি করে ফেলেছি।
Comments