কেউ জেগে ওঠে না

Fire fighters
ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে আগুন নেভানোর পর ভবনটির সামনে অবস্থান নেওয়া দমকল বাহিনীর সদস্যরা। ছবি: স্টার

আমাদের দেশ একটি জ্বলন্ত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। চোখ খুললেই দেখি পোড়া লাশ আর আগুনের লেলিহান শিখা। পুরান ঢাকা, নতুন ঢাকা, উঁচু দালান, বস্তি কোথায় নেই অগ্নিকাণ্ড!

২৮ মার্চের বনানীর অগ্নিকাণ্ডে ছয়জন উপর থেকে লাফ দিয়েছেন। তারা জানতেন সেখান থেকে লাফ দিলে মৃত্যু নিশ্চিত, কিন্তু তারা হয়তো চেয়েছেন তাদের লাশ আগুনে পুড়ে ছাই না হয়ে একটি লাশ হোক। তারা হয়তো ভেবেছেন তাদের লাশটি বিকৃত না হয়ে একটি স্বাভাবিক লাশ হোক। তারা হয়তো বুঝেছেন- এই সমাজ তাদেরকে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, কিন্তু তারা তাদের লাশের স্বাভাবিকতার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চান।

এরকম মৃত্যু কতো কষ্টের! কতোটা দুর্ভাগ্য যে একজন মানুষ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বাঁচার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। চারদিকে হাজার হাজার মানুষ আছেন, কিন্তু তাদেরকে কেউ সাহায্য করতে পারছেন না। এর চেয়ে নির্মম অসহায়ত্ব মানুষের জন্য আর কী হতে পারে?

আগে ডাক্তারি এবং শিক্ষকতা পেশাগুলোকে মনে করতাম মহান পেশা। আমার নিজের পেশা নিয়ে অনেক গর্ববোধ করতাম, গর্ববোধ করার অনেক কিছুই রয়েছে। যেমন, একটি মৃতপ্রায় মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার মতো স্বস্তি আর কোন পেশাতেই বা আছে। আমার পেশার চেয়ে মহান পেশাও যে রয়েছে তা আমার জানা ছিলো না।

নিজের জীবন বাজি রেখে যারা অন্যের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যুদ্ধ করেন তারাই প্রকৃত যোদ্ধা।  নিজের জীবনের পরোয়া না করে অন্যের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া যাদের পেশা, সেই পেশার চেয়ে মহান অন্য কোনো পেশা হতে পারে না। আমাদের দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ফায়ার ফাইটার্সদের ভূমিকা বীরের সমতুল্য। তারা নিজেদের জীবনটা হাতে নিয়েই মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যান।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন থেকে রোগীদের রক্ষা করা, পুরান ঢাকায় আগুন নির্বাপণে তথা আজকে বনানীর আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার ফাইটার্সরা যে ভূমিকা পালন করেছেন সেটির জন্য তাদের ধন্যবাদ না দিলে তা জাতি হিসেবে আমাদের কৃপণতার পরিচায়ক হবে।

আজকে ফায়ার ফাইটার্সদের একটি ছবি দেখলাম। যেখানে একজন নারীকে একজন ফায়ার ফাইটার্স উদ্ধার করেছেন, তিনি অনবরত কেঁদে যাচ্ছেন। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে একজন মানুষকে নতুন জীবন দেওয়া সেই ফায়ার ফাইটার্সরা তার কাছে সাক্ষাৎ দেবতা। একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের জীবন রক্ষা করার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?

আমাদের ক্রিকেট টিম যখন কোনো সিরিজ জিতে বা কোনো স্পেশাল জয় লাভ করে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের পুরস্কৃত করেন। তাদের পুরস্কৃত করা মানে তাদের পরবর্তীতে আরও ভালো পারফরম্যান্স করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা। আমাদের এই ফায়ার ফাইটার্সদের কী এতো বড় অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত করা যায় না? শুধু পুরস্কার দিয়ে আপনাদের ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো না কিন্তু, আপনাদের সম্মান না দেখালে আমরা মানুষ হিসেবে অনেক অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।

আগুন লেগে মানুষের মৃত্যু আর কতো হবে? এই মৃত্যুর মিছিল কি আর থামবে না? এখানে কি সচেতনতার অভাব নাকি মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা- তা ভেবে দেখার সময় এখনো হয়নি? পাঞ্জেরিরাও একসময় জেগে উঠেন কিন্তু, আমাদের দেশে মৃত্যুর মিছিল থামানোর জন্য কেউ জেগে ওঠে না।

লেখক: ডাঃ কাওসার আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ও রেসিডেন্ট

Comments

The Daily Star  | English
Curfew in Gopalganj after clash

Curfew in Gopalganj after 4 die in clash

The curfew will be in effect until 6:00pm tomorrow

6h ago