বনানীর এফআর টাওয়ার: একটি নিয়মভঙ্গের ভবন

ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে গতকাল (২৮ মার্চ) আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। ২২-তলা সেই ভবনটির অনুমতি ছিলো ১৮-তলার। এতে ছিলো না আগুন-রক্ষিত সিঁড়ি। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা।
Banani fire scene
ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে ২৮ মার্চ আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। ২২-তলা সেই ভবনটির অনুমতি ছিলো ১৮-তলার। ছবি: প্রবীর দাশ

ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে গতকাল (২৮ মার্চ) আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। ২২-তলা সেই ভবনটির অনুমতি ছিলো ১৮-তলার। এতে ছিলো না আগুন-রক্ষিত সিঁড়ি। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা।

রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৯৬ সালে ১৮-তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়েছিলো ভবনটির মালিক।

তিনি বলেন, “তবে, ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারা ভবনের নকশার একটি ফটোকপি আমাদেরকে দেওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় ভবনটি ২২-তলা। কিন্তু, এর সপক্ষে কোনো তথ্য ছিলো না।”

গতকালের আগুনে ২৫ জনের মৃত্যু হলে নড়েচড়ে বসে রাজউক। গঠন করে তদন্ত কমিটি। কীভাবে বাড়তি চারতলা নির্মাণ করা হলো এবং ভবনটির অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কেমন ছিলো তা খুঁজে বের করবে সেই কমিটি।

ভবনটির প্রকৃত নকশায় জরুরি সিঁড়ি রয়েছে। তবে রাজউকের চেয়ারম্যান নিশ্চিত করে বলতে পারেননি যে ভবনটির জরুরি নির্গমনপথটি নকশা মেনে তৈরি করা হয়েছিলো কী না।

ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত ভবনটির প্রতিটি তলায় বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে জায়গা রয়েছে ৬ হাজার বর্গফুট।

দমকল বাহিনীর পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, কিন্তু, ভবনটিতে কোনো আগুন-রক্ষিত গমনপথ নেই। অথচ, ভবনটিতে রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, একটি কফি শপ, রাষ্ট্রায়াত্ত পূবালী ব্যাংকের শাখা, একটি বাইং হাউজ, একটি আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অফিস।

ভবনের আগুন নেভানোর পর গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এই ভবনের মালিকসহ এই রাস্তার সব ভবন মালিকদের আমরা আগুন থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার বলেছি। কিন্তু, কেউই তা মানেননি।”

তবে এসব বিষয়ে এফআর ভবনের মালিক এসএমএইচআই ফারুকের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দমকল বাহিনীর মতে, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যভিনিউয়ের অনেক ভবনেই আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো সুব্যবস্থা নেই। এসব ভবনের মধ্যে রয়েছে বনানী সুপার মার্কেট, হোটেল সুইট ড্রিম এবং হাদি টাওয়ার।

নিয়ম অনুযায়ী আগুন-রক্ষিত জরুরি নির্গমন পথ এবং আগুনে কয়েকঘণ্টা টিকে থাকার মতো পুরু দেয়াল থাকার কথা। যাতে মানুষ আগুন থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

দমকল বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ জানান, এফআর টাওয়ারে আগুন নির্বাপক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা ছিলো। এর সিঁড়ি লোকজনদের আগুন থেকে রক্ষা করা মতো উপযুক্ত ছিলো না।

তিনি বলেন, “যেহেতু লোকজন সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো, বিশেষ করে সিঁড়িপথ, সেহেতু জীবন বাঁচাতে অনেকে ভবনটি থেকে লাফ দিয়েছিলেন।”

ধোঁয়ার কারণে একজনের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায় যে আগুন লাগা ভবনটির ভেতরে লোকজন জানালার কাঁচ ভেঙ্গে সাহায্যের জন্যে আর্তনাদ করছেন। আগুন থেকে বাঁচার জন্যে সেসময় কয়েকজন ব্যক্তি ভবন থেকে লাফ দেন। অনেকে রশি ও তার বেয়ে নিচে নেমে আসরে চেষ্টা করেন। অনেককে বিভিন্নস্থানে ঝুলে থাকতেও দেখা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

‘A green, clean Dhaka by 2050’

Aiming to reduce greenhouse gas emissions by up to 70.6 percent, Dhaka north and south city corporations have initiated first-ever Climate Action Plans towards 2050.

13h ago