কলকাতা-ঢাকা রুটে ভারত সরকারের ‘সৌহার্দ্য’ বাস বন্ধ

কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে ভারত সরকারের সৌহার্দ্য পরিবহনের পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। গত ১৯ মার্চ থেকে ভারতীয় মালিকানাধীন শ্যামলী পরিবহন লিমিটেড এবং শ্যামলী যাত্রী পরিবহন লিমিটেডের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
Souharda
ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে ভারত সরকারের সৌহার্দ্য পরিবহনের পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। গত ১৯ মার্চ থেকে ভারতীয় মালিকানাধীন শ্যামলী পরিবহন লিমিটেড এবং শ্যামলী যাত্রী পরিবহন লিমিটেডের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ ১৯৯৯ সালে শুরু হওয়া কলকাতা-ঢাকার মধ্যে সরাসরি বাস পরিষেবা ‘সৌহার্দ্য’-এর পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া কলকাতা-আগরতলা ভায়া ঢাকা রুটের সরাসরি বাস পরিষেবাও।

তবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ সরকারের সৌহার্দ্য পরিবহন পরিষেবাটি চালু রয়েছে।

জানা যায়, শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেড এবং শ্যামলী যাত্রী পরিবহন দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আপন দুই ভাই। প্রথমটির কর্ণধার অরুণ কুমার ঘোষ এবং পরেরটির মালিকানা রয়েছে অবণী কুমার ঘোষের। তারা দুজনেই ভারতের নাগরিক।

১৯৯৯ সালের পর থেকে এ যাবৎ অবণী ঘোষের পারিবারিক মালিকানায় এই পরিবহণ ব্যবসা চলে আসছিলো। কিন্তু, সম্প্রতি অরুণ কুমার ঘোষ পৃথক একটি সংস্থা খুলে কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটের সৌহার্দ্য পরিবহনের লিজ নেন।

এই রুটের স্বাভাবিক লিজের দর গাড়ি প্রতি প্রতি মাস হিসাবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ রুপি। কিন্তু, এখানে অরুণ কুমার ঘোষের শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেড গাড়ি প্রতি ৬ লাখ রুপি (প্রতি মাসে) দিয়ে লিজ সংগ্রহ করে।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতরের কাছে সেই লিজের টাকা নিয়মিত পরিশোধ না করায় গত ১৯ মার্চ থেকে রাজ্য সরকার এই রুটের লিজটি স্থগিত করে। যেহেতু সরকারের ক্লিয়ারেন্স নেই তাই ১৯ মার্চ একটি গাড়ি সীমান্তে গিয়েও তা সীমান্ত পার হতে পারেনি।

গত কয়েক দিন ধরে পরিবহন বিভাগ, শ্যামলী পরিবহনের দুই পক্ষের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা এবং কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে মূলত শ্যামলী পরিবহনের মালিকানা নিয়ে পরিবারের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বটি এখন বিশাল এই প্রতিষ্ঠানটির ধংসের কারণ হিসেবে সামনে এসেছে।

শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের দুটি চার কোটি রুপির গাড়ি পরিষেবা দিতে না পেরে এখন গ্যারাজে পড়ে রয়েছে। একই সঙ্গে গাড়ির চারজন চালক এবং ৮জন সুপারভাইজারসহ ১০ হেল্পারও বসে রয়েছেন।

অন্যদিকে শ্যামলী পরিবহনের একেকটি ৪০ আসনের করে দুটি গাড়ি পড়ে আছে টার্মিনালে।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের কর্ণধার অবণী ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, “অসুস্থ প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে আমার নিজের ভাই আমাদের এতো বড় পারিবারিক ব্যবসার ক্ষতি করলো।”

এই রুটে যেখানে মাত্র ১ লাখ রুপি করে দেওয়া হতো সেখানে কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই অন্য একটি সংস্থা ৬ লাখ রুপি করে দেওয়ায় এই রুটের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়ে যায় বৈকি- যোগ করেন অবণী কুমার ঘোষ।

এদিকে কথা হয় শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার অরুণ কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে এই রুটটি লাভবান ভেবে এতো টাকা দিয়ে টেন্ডারে জিতেছিলাম। কিন্তু, কিছুদিন চালিয়ে বুঝতে পারি আসলে রুটটি অলাভজনক। তাই ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি আরও জানান যে তার কাছে সরকারের পাওনা টাকা তিনি চেক মারফত আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিচ্ছেন।

এই মুহূর্তে কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটসহ কলকাতা-আগরতলা ভায়া ঢাকা রুটও বন্ধ রয়েছে। কলকাতা-আগরতলা-ঢাকা (ভায়া) রুটের বাসটি ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে উদ্বোধন করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক এই রুটের বাসটি বন্ধ থাকার বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি গত দুদিনেও। তবে পরিবহন দফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, (ভারতে) নির্বাচনের কারণে নতুন করে ই-টেন্ডার দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এই রুটের বাস পরিষেবা আপাতত নির্বাচনের পর ছাড়া শুরু হচ্ছে না।

এছাড়াও, খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটের সরাসরি সৌহার্দ্য পরিবহনের বাইরে কলকাতা-খুলনা-ঢাকা-কলকাতা রুটের বাস দিয়ে এখন ঢাকা-কলকাতার যাত্রী সেবা অব্যাহত রেখেছে শ্যামলী যাত্রী পরিবহন।

শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সৌমিক ভৌমিক জানান, রোজ দুটি বাস যাচ্ছে। ওই দুটি বাস কলকাতা থেকে ছেড়ে খুলনা হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। যাত্রীরা অতিরিক্ত টাকা না দিলেও খুলনা হয়ে ঢাকা পৌঁছতে তাদের অতিরিক্ত সময় লাগছে। আর সেটা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। নিয়মিত কর্তৃপক্ষকে এ ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

কলকাতা-ঢাকা রুটের একজন যাত্রী সুজন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন, “আন্তর্জাতিক এই রুটটি বন্ধ আছে সেটা দেখে অবাক লাগছে। এই ধরনের একটি ঘটনা সরকারের নজরদারি করা প্রয়োজন রয়েছে।”

দ্য ডেইলি স্টারের তদন্তে জানা গিয়েছে, শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেড এবং শ্যামলী যাত্রী পরিবহন দুটোই ভারতীয় নাগরিকদের সংস্থা। আর এই দুটোই ভারতের দিকের ‘যাত্রী বাহক’ হিসেবে সরকারের চুক্তি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের বিআরটিসি এবং ভারতের ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন মূল সরকারি সংস্থা। তাদের মাধ্যমেই লিজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সরকারের চুক্তি অনুযায়ী, এই দুটি সরকারি সংস্থার নিযুক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলো যে যার দেশের সরকারের কাছ থেকে লিজ প্রাপ্ত। ফলে এই বেসরকারি সংস্থাগুলো যে যার দেশের সরকারকেই লাইসেন্স ফি বাবদ অর্থ প্রদান করে।

জানা গিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী দুটো বাস দুদিক থেকে যাওয়া-আসা করে। একটি ঢাকা থেকে ছাড়ে। অন্যটি কলকাতা থেকে ঢাকার দিকে ছেড়ে যায়। সপ্তাহের তিনদিন এই রুটের বাস চলে। ঘুরেফিরে দুই দেশের বাস শ্যামলী এবং বিআরটিসি ‘সৌহার্দ্য’ নামে যাতায়াত করে।

যদিও এই মুহূর্তে কলকাতা-খুলনা-ঢাকা-কলকাতা রুটের শ্যামলী যাত্রী পরিবহনের দুটি বাস চলাচল করছে। তবে কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে তাদের পরিষেবা বন্ধ রয়েছে।

রোজ দুটো বাসে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ১৬০ জন যাত্রী কলকাতা-ঢাকা রুটে চলাচল করেন। আর কলকাতা থেকে ঢাকা ভায়া হয়ে আগরতলা রুটে একটি গাড়িতে ৬০ জন আসা-যাওয়া করেন। এতে সব মিলিয়ে ২২০ যাত্রীর পরিবহন পরিষেবা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কারণে এখন বন্ধ।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago