চবি ছাত্রলীগ: ২০ দিনে ৮টি সংঘর্ষ!

BCL CU
৭ এপ্রিল ২০১৯, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১৫ মাস হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখার কোনো কমিটি নেই। তাই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মাঝেমধ্যেই জড়িয়ে পড়েন অন্তর্দ্বন্দ্বে। অভিযোগ উঠছে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে চবির ছাত্রলীগ।

গত ২০ দিনে অন্তত আটটি সংঘর্ষে জড়িয়েছে চবির ছাত্রলীগ। সেসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। আহতের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন পুলিশ সদস্যও।

সর্বশেষ, গত ৭ এপ্রিল চার-দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় ছাত্রলীগ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর আলী আসগর চৌধুরীর পদত্যাগ এবং গত ৩ এপ্রিল বিভিন্ন হলে তল্লাশি চালানোর পর ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আটক ছয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর মুক্তি।

ক্যাম্পাস অচল করে রাখার দুদিন পর উপাচার্যের কাছ থেকে দাবি মেটানোর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ধর্মঘট তুলে নেয় ছাত্রলীগ।

গত ২৩ মার্চ, চাঁদা চেয়ে দুজন দোকানদারকে আটকে রাখেন এক ছাত্রলীগ নেতা।

২৭ মার্চ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষকের পদে মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মোহাম্মদ এমদাদুল হককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে।

৩১ মার্চ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধায় শাটলট্রেন-ভিত্তিক দুটি গ্রুপ ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার’ (সিএফসি) এবং ‘বিজয়’।

এরপর দিন, একই বিষয় নিয়ে গ্রুপ দুটি আরও অন্তত চারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সে রাতে হলগুলোতে অভিযান চালানোর সময় পুলিশ একটি হলের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি পাইপগান এবং ১২৮টি গুলি উদ্ধার করে।

২ এপ্রিল, আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে গ্রুপ দুটি। সেদিন আবারও হল তল্লাশি চালায় পুলিশ। ধারালো অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়।

মজার ব্যাপার হলো, ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপ দুটি ৭ এপ্রিল ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেদিন তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ছাত্রলীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার দাবি তুলেছেন।

সম্প্রতি, প্রক্টর আলী আসগর চৌধুরী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “তাদের (ছাত্রলীগের) অনৈতিক দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনে না নেওয়ায় তারা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।”

সূত্র জানায়, চাকরিতে নিয়োগ ও টেন্ডারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর দাবি মেনে না নেওয়া হলে তারা ক্যাম্পাসে অশান্তি সৃষ্টি করে। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় দলের নতুন সদস্যরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর টিপু বলেন, “এখন দলের সবাই নিজেকে নেতা মনে করে। তাদের আচরণও সে রকম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুনরা পুরনোদের সিদ্ধান্ত মানতেই চায় না।”

সিএফসি গ্রুপের নেতা রেজাউল হক রুবেলের মতে, কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগে অচলাবস্থা চলছে। বলেন, “যেহেতু অনেক দিন হলো ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই, তাই কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়েও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।”

বিজয় গ্রুপের নেতা তারেকুল ইসলামের অভিযোগ, সংগঠনের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্যে নতুনদের সংঘর্ষে উস্কে দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ মোট আটটি উপদলে বিভক্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র। অন্তর্দলীয় সংঘর্ষের কারণে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Freedom fighter’s definition: Confusion, debate over ordinance

Liberation War adviser clarifies that Sheikh Mujib, Tajuddin, others in Mujibnagar govt are freedom fighters

12h ago