স্বীকারোক্তিতে যা বললেন নুসরাতের ২ ‘হত্যাকারী’

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দায় ‘স্বীকার করে’ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নূর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম।
Nusrat Murder Accused
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নূর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম। ছবি: স্টার

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দায় ‘স্বীকার করে’ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নূর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম।

তারা দুজনই স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, কারাগার থেকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পরামর্শ ও নির্দেশেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয়েছিলো।

গতকাল (১৪ এপ্রিল) ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত তাদের দুজনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

জবানবন্দি প্রদান শেষ হলে রাত ১টা ৫ মিনিটের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় পিআইবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা-পিআইবি‘র পরিদর্শক মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।

তিনি জানান, পিবিআই এ মামলার দায়িত্ব পাওয়ার চারদিনের মধ্যে (১০-১৪ এপ্রিল) ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছেন তাদেরকে আইনের আমলে নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের দুজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

দুই আসামী স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালতের নিকট জবানবন্দি দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, দুই আসামি পুরো বিষয়টি খোলাসা করেছেন। কারা কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, কী প্রক্রিয়ায় ঘটিয়েছেন তা বিস্তারিত বলেছেন। কিন্তু মামলার তদন্তের স্বার্থে সবকিছু এখনই বলা যাবে না।

তিনি বলেন, আসামিরা অপরাধ স্বীকার করেছেন। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তারা জেলখানা থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার হুকুম পেয়েছেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ১৩ জনের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়াও, বিক্ষিপ্তভাবে আরও কিছু নাম এসেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবো।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত যে চারজন তাদের সবাইকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। যেকোনো সময় আপনাদের একটি ভালো খবর দিতে পারবো।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে নূর উদ্দিন ও ১২ এপ্রিল সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। নূর উদ্দিন নুসরাত হত্যা মামলার ২নং ও শাহাদাত হোসেন শামীম ৩নং আসামি।

সোনাগাজীর চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ছয় আসামি ছাড়াও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে ৯ এপ্রিল জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালত নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শহিদুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন।

১০ এপ্রিল অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলাকে সাতদিন, আবছার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন একই আদালতের বিচারক। এছাড়াও, ১১ এপ্রিল উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের হোসেনকে পাঁচদিন করে রিমান্ড আদেশ দেওয়া হয়।

১৩ এপ্রিল মামলার আরেক আসামি জাবেদ হোসেনকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন।

গত ১০ এপ্রিল রাত ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। পরদিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকালে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের তিনতলায় যান। সেখানে মুখোশরা ৪/৫ জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন:

নুসরাত হত্যা: নূরুদ্দিন, শামীমের ‘স্বীকারোক্তি’

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago