পদ্মাসেতুর ১১তম স্প্যান বসেছে
![Munshiganj Padma Bridge Munshiganj Padma Bridge](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/munshiganj_padma_bridge-1.jpg?itok=AW18F5hA×tamp=1555998359)
পদ্মাসেতুর ১১তম স্প্যান বসে গেছে। সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর খুঁটির ওপর ‘৬সি’ নম্বর স্প্যানটি আজ (২২ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে বসানো হয়েছে। তাই এখন সেতু দৃশ্যমান হলো ১,৬৫০ মিটার।
সকাল ৭টা থেকে স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা খুব সহজেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি বসিয়ে দেন। স্প্যানটির এক পাশ ৩৪ নম্বর খুঁটিতে লিফটিং ফ্রেম (ঝুলিয়ে রাখার যন্ত্র) এটি ধরে রেখেছে। এখন স্প্যান ‘৬সি’ এবং ‘৬ডি’ এর সাথে জোড়া লাগানো হচ্ছে। স্প্যানটি বসে যাওয়ার পর এস আকৃতির সেতুটির বাঁক আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। আর এই মাহেন্দ্রক্ষণটি প্রত্যক্ষ করেছে পদ্মার চরের বহু মানুষ।
বিশাল ওজনের এই স্প্যানটি এতো সহজে খুঁটিতে বসিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে?- জানালেন পদ্মাপারের মুজিবুর মিয়া। বললেন, “এই দৃশ্য এখন ক’ দিন পরপরই দেখতে পাই। সেতু হইতে আর বেশি দিন লাগবে বলে মনে হয় না। যেভাবে কাজ হইতেছে তাতে মনে হয় আগামী বছরই সেতু দিয়া চলতে পারুম।”
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে পদ্মাসেতু চালু করা সম্ভব হবে।
এর আগে গতকাল সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি ৩৩ এবং ৩৪ নং খুঁটির সামনে অবস্থান নেয়। তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ নামের ভাসমান ক্রেবাহী জাহাজটি যথাস্থানে নোঙ্গর করানো হয়। এরপর ক্রেন পাজা করে ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া হয়।
এ মাসে এই নিয়ে দুটি স্প্যান বসলো। এই প্রথম খুব অল্প সময় অর্থাৎ ১৩ দিনের ব্যবধানে দুটি স্প্যান উঠলো। এর আগে ১০ম স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তে গত ১০ এপ্রিল বসানো হয়।
এছাড়াও, পরবর্তীতে চলতি মাসেই ১২ নম্বর স্প্যানটিও বসানোর কথা জানিয়েছেন ওই প্রকৌশলী। তবে স্প্যানটি বসানো হবে অস্থায়ীভাবে। এই স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসবে ৩২ এবং ৩৩ নম্বর খুঁটির ওপর। কিন্তু, ৩২ নম্বর খুঁটিটি পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় এটি ৩২ এবং ৩৩ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি কোনও খুঁটিতে অস্থায়ীভাবে বসানো হবে। কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ১২ নম্বর স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে খুঁটির ওপর রাখার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
এদিকে মূল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৫৫টি পাইল সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি ৩৯টি পাইল খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্থাপন করা হবে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২৩টি খুঁটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি ১৯টি খুঁটির কাজও চলছে।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, সেতুর ২, ৩, ৪, ৫, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২৩, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ নম্বর খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। স্ত্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতিতে সাতটি করে পাইল বসেছে বা বসছে ১১টি খুঁটিতে। এগুলো হলো ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ নম্বর খুঁটি।
তিনি আরও জানান, চীন থেকে এখন পর্যন্ত ২১টি স্প্যান এসেছে। এর মধ্যে ১১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এখনও ১০টি স্প্যান আছে মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে। এর মধ্যে পদ্মাসেতুতে তিনটি হ্যামারের মধ্যে ১৯০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হ্যামার সার্ভিসিংয়ে রয়েছে। অপর দুটি হ্যামার কাজ করছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং নদী শাসনের কাজ করছে সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি প্রতিষ্ঠানই চীনের।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। তবে দুই প্রান্তের সংযোগ সেতুসহ সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ। সংযোগ সেতুর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
Comments