শ্রীলঙ্কায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯
শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের সকালে চার্চ ও হোটেলে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯-তে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার কারণে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থার মধ্যেই অনেকে মারা যাচ্ছেন। হামলায় কমপক্ষে ৫০০ ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।
গতকাল (২৩ এপ্রিল) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
তবে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনে দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেছেন, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধ হিসেবে শ্রীলঙ্কায় ‘ইস্টার সানডে’ পালনরতদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তার বিশ্বাস, হামলায় দেশীয় দুটি ইসলামিক গোষ্ঠী জড়িত।
এই হামলার জন্য স্থানীয় ইসলামপন্থী সংগঠন ন্যাশনাল তৌহিদ জামাতকে (এনটিজে) প্রাথমিকভাবে দায়ী করে এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সংযোগ রয়েছে কী-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও সরকারের মুখপাত্র রাজিতা সেনারত্ন।
এদিকে, আজ (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, “শ্রীলঙ্কার দাবির বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো সরকারি বা গোয়েন্দা তথ্য নেই।”
গত মঙ্গলবার রাতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দেশটির পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের পরিবর্তন করতে চাই।”
গতকাল সারারাত ধরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নতুন ১৮ জনকে আটক করেছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। এ নিয়ে গত রোববারের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৬০ জনকে আটক করা হয়েছে।
হামলার দুই ঘণ্টা আগে শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করে ভারত
শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সূত্র ও ভারত সরকারের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের পদমর্যাদার শ্রীলঙ্কান কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম হামলার দুই ঘণ্টা আগে যোগাযোগ করে দেশটির গির্জাগুলোতে হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন।
শ্রীলঙ্কার অপর এক সূত্র জানায়, ভারতের কাছ থেকে সতর্কবার্তা এসেছিলো গত শনিবার রাতেই। ভারতীয় সূত্র বলছে, হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কাকে ৪ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল দুই দিন সতর্ক করা হয়েছিলো।
তবে, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির দপ্তর ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বন্দ্বই কী হামলা না এড়ানোর কারণ?
রয়টার্স আরও বলছে, শ্রীলঙ্কায় ইসলামিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে হামলা হতে পারে, এমন আগাম সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও তা না এড়ানোর পেছনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে এবং রাষ্ট্রপতি মাইথ্রিপালা সিরিসেনার মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে দেশটির দুর্বল জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই তুলে ধরছে।
রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকায় গত অক্টোবরে রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে সিরিসেনা নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন, পরে সুপ্রিম কোর্টের চাপের মুখে বিক্রমাসিংহেকে পুনর্বহাল করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
দেশটির সরকারি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহে প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং প্রকাশ্যে একে অপরের বিষেদাগার করেন।
Comments