ওহ, গরম!
‘কেমন আছেন?’- বাঙালির স্বাভাবিক প্রশ্নের স্থান দখল করে নিয়েছে, ‘ওহ, গরম! জান শ্যাষ। আর বইলেন না ভাই, কি যে অবস্থা! বাইরে যাওয়ার অবস্থা নাই। ঘামে শরীর জবজব করে। শরীর ঘামে, মেজাজ চড়ে।’
এপ্রিল মাসকে বলা হয় ‘দ্য হটেস্ট মান্থ অব দ্য ইয়ার’। সূর্য থাকে মাথার ওপর। বৈশাখের প্রথম দিনে নেচে গেয়ে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে। আমরা আহ্বান করি খরতাপে ধরাকে পুড়িয়ে শুদ্ধ করার। কিন্তু দিন যেতে না যেতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমন নয় যে, গরমের এই অনুভূতি এবারই প্রথম। তবে প্রকাশে মনে হয়, এমন গরমের দেখা এবারই প্রথম পাওয়া গেল। বাঙালির একটি স্বভাবগত বাক্য ‘এমন গরম জীবনে পড়ে নাই, এমন শীতের দেখা জীবনে পাই নাই!’
গরম নিয়ে ফেসবুক সরগরম। পত্রিকার পাতায় গরমে কতজন হাসপাতালে ভর্তি সেই খবর, অনলাইনে ডাক্তারের ছবক- গরমে সুস্থ থাকতে হলে কী খেতে হবে, ম্যাগাজিনে গরমের ফ্যাশনের কাপড়ের বিজ্ঞাপন।
হাটে, মাঠে, ঘাটে সব জায়গায় আলোচনা একটাই- গরম। কতদিন থাকবে এই গরম, তাপমাত্রা কততে গিয়ে ঠেকবে? তাই বলে গরমে কি সবাই বিরক্ত? না, সবাই না।
গরমে আপনি বিরক্ত হলে কি হবে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে যিনি লেবুর শরবত বা সালসা বিক্রি করেন, তিনি কিন্তু বেজায় খুশি। কারণ যত গরম তত বিক্রি তত লাভ। শুধু শরবত ওয়ালা না। গরমে ফ্যানের ব্যবসাও জমজমাট। গরম না থাকলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেলুন বা এসি সেলুনের কি মূল্য থাকত? এসির বিক্রি ফ্রিজের বিক্রির পারদ চড়তে থাকে গরমের তাপমাত্রার পারদের মতোই।
যত গরম তত মজা, বিক্রি-বাট্টা তরতাজা।
কথায় বলে গরমে মানে না শরম। সেটা আর কেউ না বুঝলেও বাজারে যারা যায় তারা বুঝে। মাংসের বাজার, মাছের বাজার, সবজির বাজার, কাপড়ের বাজার সব গরম। এসির রিমোট দিয়ে যেমন তাপমাত্রা বাড়ানো কমানো যায়, ঠিক তেমনি ব্যবসায়ীরা তাদের হাতের রিমোট দিয়ে জিনিসপত্রসহ দাম যখন যেভাবে খুশি বাড়াতে বা কমাতে পারেন। যেমন রোজা আসার আগেই ছোলা, বেগুন, লেবু, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সব নিত্য-পণ্যের দাম বেড়ে গেছে কিন্তু বিশ্বব্যাপী তেল ও ডালের দাম কমছে। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে রোজায় পণ্যের দাম যথাসম্ভব কমানো হয়। আর এখানে যতটা সম্ভব বাড়ানো হয়। গত তিন চার বছরে গরুর মাংসের দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে শুধু রোজার মাসকে কেন্দ্র করেই। ক্রেতা হিসেবে আপনার লজ্জা থাকলেও গরমে কিন্তু বিক্রেতা তার শরম হারিয়েছে।
লজ্জাবতী ক্রেতা আর আমজনতার চাওয়া ওই একটাই ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই’।
গরম নিয়ে লিখতে গিয়ে হয়তো আপনাদের মেজাজও গরম করে দিচ্ছি। এবার আসুন ঠান্ডা পানি খেয়ে শরীর মন ঠান্ডা করি।
২০১৬ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের শিবপাল সিং নামের এক বাসিন্দা প্রচণ্ড গরম থেকে রক্ষা পেতে সূর্যের বিরুদ্ধেই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মামলা করে বসলেন। তিনি ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯৭৩ সালের ১৫৪ ধারায় সূর্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন। তারপর কী হয়েছে সেটা আর জানি না।
বাংলাদেশে তো অনেক কিছু নিয়েই রিট হয়। কিছুদিন আগে শবে বরাত কবে হবে সেটা নিয়েও কেউ কেউ আদালতে গিয়েছিলেন যদিও কোর্ট সেটা আমলে নেননি। তো গরম নিয়ে তো কারও দ্বিমত নেই, কেউ কি এগিয়ে আসবেন গরম থেকে বাঁচাতে একটা রিট করতে? অপেক্ষায় থাকলাম।
Comments