বাংলাদেশি সন্ত্রাসীর হাতে খুনের আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীর জিডি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বাংলাদেশি সন্ত্রাসীর হাতে খুন হতে পারেন এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন।
গতকাল (৭ মে) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে ওই মন্ত্রী আরও বলেন, এর পেছনে বিজেপির একজন শীর্ষ নেতা এবং জেলা পর্যায়ের একজন নেতা রয়েছেন।
যদিও খাদ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির স্থানীয় পর্যায়ের ওই নেতা।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করার পর থেকেই সরকারের খাদ্য দপ্তরের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পাশাপাশি তিনি কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল সভাপতিও।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দুটি সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। একটি বসিরহাট এবং অন্যটি বনগাঁ। এমনকী, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটের বাসও যশোর রোড ধরে এই জেলার ওপর দিকেই যাতায়াত করে। ফলে এই জেলার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বহু পুরনো।
এমন গুরুতর অভিযোগের খবর পাওয়ার পর যোগাযোগ করা হয় খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল জানান, তিনি গত ৫ মে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গোবরডাঙা থানায় এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন।
কেনো তাকে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের দিয়ে খুন করানো হতে পারে?- এই প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমি জেলায় দায়িত্বে আছি। এখানে বিজেপি তেমন সুবিধা করতে পারছে না। আমাকে সরিয়ে দিলে ওদের রাজনৈতিক সুবিধা হবে। তাই ওরা আমাকে খুন করা পরিকল্পনা করেছে।”
বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের নিয়ে খুনের কথা মন্ত্রী কী করে জানাতে পারলেন?- সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন, এটি আমার এক সহকর্মী আমাকে জানিয়েছেন ৫ মে। বাংলাদেশের একটি মোবাইল কোম্পানির নম্বর থেকে ফোন আসে ওই সহকর্মীর মোবাইল ফোনে। ফোন যিনি করেছেন তিনি নিজেকে বাংলাদেশের একজন পেশাদার খুনি বলে পরিচয় দেন এবং জানান- বনগাঁর এক শীর্ষ সন্ত্রাসী দেবদাস মণ্ডল এবং ঠাকুরনগর এলাকার কয়েকজন বিজেপি নেতা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে খুনের জন্য তাকে নিযুক্ত করেছে। খুন করতে পারলে তাকে মোট ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। তাকে ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। ফোনে বাংলাদেশি ব্যক্তি এই তথ্য জানায়।”
“তবে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীকে আমার ব্যাপারে পুরো তথ্যটা দেওয়া হয়নি। আমি যে মন্ত্রী তা জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছিলো যে- আমি জেলা তৃণমূল সভাপতি। কিন্তু, আমার সহকর্মী যখন বলেছেন যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একজন মন্ত্রী তাকে খুন করা হলে কী পরিণতি হবে সেটি কি তারা জানেন? তখন বাংলাদেশের নম্বর থেকে ফোন করা ব্যক্তি বিস্মিত হন এবং বলেন- যে বিজেপি নেতারা তাকে খুনের জন্য নিযুক্ত করেছেন তারা তাকে মন্ত্রী পদের কথা জানাননি। তাই মন্ত্রীকে খুনের জন্য আরও অনেক বেশি টাকার দাবি করে পুরো অপারেশন থেকে সরে যাওয়ার কথা জানায় ওই বাংলাদেশি ব্যক্তি,” যোগ করে জ্যোতপ্রিয় মল্লিক।
বিজেপির বিরুদ্ধে উঠা এই অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তুনু ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ ধরণের কোনো ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নন।” তিনি উল্টো জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে তাকে খুন করার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন।
বিজেপি নেতা শান্তুনু ঠাকুর আরও বলেন, “দেখুন গত ৪ মে আমার গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়। গাড়ি দুর্ঘটনার মধ্যদিয়ে খুনের ষড়যন্ত্র করেছে তৃণমুলই। এবার সেটা ঢাকতেই এই ধরণের গল্প ফেঁদেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।”
প্রসঙ্গত, ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচন চলছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা মূলত তৃণমূলের ঘাঁটি। আগামী ১৯ মে শেষ দফায় এই জেলার আরও তিনটি আসনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের আগে এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে রীতিমত রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
Comments