ষষ্ঠ দফার ভোটেও সহিংসতা পশ্চিমবঙ্গে

ষষ্ট দফার ভোটে মাওবাদী সহিংসতা এড়াতে পারলেও রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়াতে পারল না ভারতের নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আট আসনসহ দেশের সাত রাজ্যের ৫৯ আসনের ভোট সম্পন্ন হলো রোববার।
ছবি: রয়টার্স

ষষ্ট দফার ভোটে মাওবাদী সহিংসতা এড়াতে পারলেও রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়াতে পারল না ভারতের নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আট আসনসহ দেশের সাত রাজ্যের ৫৯ আসনের ভোট সম্পন্ন হলো রোববার।

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, তমলুক, ঘাটাল, কাঁথি, বিষ্ণুপুর এবং মেদিনীপুর এই আট আসনের ভোট নেওয়া হয় রোববার। সকাল থেকে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শুরু হলেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ একটি কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তখনই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভারতী ঘোষের ওপর বিশ-পঁচিশজন মহিলা ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং মারধরের চেষ্টা করেন।

যদিও সঙ্গে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা ভারতী ঘোষকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিজেপি কর্মীরাও মারমুখো হয়ে ওঠেন। এমন কি ভারতী ঘোষ নিজেও আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে চেষ্টা করেন। তখনই পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। স্থানীয় কিছু মানুষ ভারতীর গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। ওই ইট-পাথরে ভারতী ঘোষসহ তার নিরাপত্তারক্ষীরাও আহত হন। সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভারতী ঘোষের নিরাপত্তা রক্ষীরা নির্বাচনের আচরণবিধি ভেঙেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, ভারতী ঘোষের নিরাপত্তারক্ষীরা অস্ত্র নিয়ে ভোট কেন্দ্রর ১০০ গজের মধ্যে প্রবেশ করেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন দুটি পৃথক অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছে এবং মামলার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা গিয়েছে।

এই দফার ভোটের মধ্যদিয়ে ৪৮৩ আসনের ভোট সম্পন্ন করল নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে ৩৩ আসনের ভোট শেষ হলো। এখন বাকি সপ্তম ও শেষ দফার ভোট যা নেওয়া হবে আগামী ১৯ মে।

ওদিকে একইভাবে ঝাড়গ্রামে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ওপর এদিন তিন দফায় হামলার চেষ্টা চলে। তবে প্রত্যেক বারই নিরাপত্তা বাহিনী দিলীপ ঘোষকে বাঁচাতে সক্ষম হন।

পুরো ঘটনায় রাজ্য বিজেপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপি নেতা মুকুল রায় দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, এই রাজ্যেই এমন সম্ভব। কারণ রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন মমতার দলদাসে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের আয়ু ফুরিয়ে এসেছে তাই ওরা মরণকামড় বসাতে চাইছে।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও একইভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সময় শেষ হওয়ার হুমকি দেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি টেলিফোনে বলেন, “তৃণমূল ২০১৯ সালে সাফ আর ২০২১ সালে সাফ।”

যদিও তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার দাবি করেছেন, এই অশান্তির পেছনে রয়েছে বিজেপির ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, বিজেপি নেতারা যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঘুরছেন তাদের মধ্যে আরএসএসের ক্যাডারও আছে। তাদের সরকারি পোশাক পরিয়ে বুথে বুথে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ প্রশাসন সূত্রের খবর, মেদিনীপুরের কেন্দ্রীয় বাহিনীর বন্দুক থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছে তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে কিনা সেটা নিয়ে সরকারি বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ষষ্ঠ দফার ভোটের এদিন ভাগ্য পরীক্ষা হয়ে গেল ঘাটাল কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী দেব এবং একই কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী ভারতী ঘোষের। একইভাবে মেদিনীপুর আসনের তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়া এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ভাগ্য ইভিএম মেশিন বন্দি হয়ে গেল।

এদিন মোট ৮৩ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয় রাজ্যের আট আসনে।

আট আসনের মধ্যে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের কিছু এলাকাকে মাওবাদী অধ্যুষিত বলে আশঙ্কা করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় ভোটের দিন মাওবাদী কোনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ফলে নির্বাচন কমিশন স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

শেষ দফার ভোট নেওয়া হবে আগামী ১৯ মে তারিখ। সেদিন ভোট হবে আট রাজ্যের ৫৯ আসনের। আর পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, ডায়মন্ড হারবার, দমদম, বারাসত, বসিরহাট,মথুরাপুর, যাদবপুর, জয়নগর এই নয়টি আসনে।

রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এখন ব্যস্ত শেষ দফার ভোটের প্রচারে। রোববারও কলকাতা ও আশপাশের তিনটি নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই রকমভাবে এদিনও তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় সরব হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
bd govt logo

Army given magistracy power for 60 days

The government has decided to give magistracy power to the commissioned officers of the Bangladesh Army.

47m ago