উদ্বোধনের আগেই সিলেট জৈন্তাপুরের চিকারখাল সেতুতে ফাটল

Sylhet Bridge
সিলেটের জৈন্তাপুরে চিকারখালের ওপর নবনির্মিত সেতু। ছবি: ইউএনবি

সিলেটের জৈন্তাপুরে চিকারখালের ওপর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ৫৪ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুটিতে উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে সেতুর গার্ড দেয়ালও ভেসে গেছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের লক্ষ্যে খারুবিল ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন এবং জৈন্তাপুর বাজার সড়কের যাতায়াতের সুবিধার্থে চিকার খাল নদীর ওপর সেতুটি তৈরি করা হয়। এখন সেটির পাইলে (পিলার) উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিলো।

২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেতুটি নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিলো ‘নূরুল হক এন্ড তৈয়বুর রহমান জেবি’।

সেতুর দুই পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা ইউএনবিকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী সেতুটির ঢালাই কাজের আগে সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপস্থিত থেকে তা পর্যবেক্ষণ করার কথা থাকলেও কাজ করার সময় সংশ্লিষ্টদের কাউকে দেখা যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের মর্জি মতো সেতুর পাইলিং ৮০ ফিটের পরিবর্তে কোনো কোনো পিলারে ৩৫-৪০ ফুট গভীরে পাইলিং করে ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে। ঢালাই কাজে কাদা মেশানো বালু, নিম্নমানের পাথর ও মরা পাথর এবং সিঙ্গেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের বেশ কয়েকজন জানান, তখন বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে একাধিকবার মোবাইল ফোনে জানালেও কোনো কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই সেতুর গার্ডওয়াল ধুয়ে মাটি সরে গিয়ে পাইলিং পিলারের ফাটল বেরিয়ে এসেছে। নিম্নমানের বালু-পাথরের সাথে নিম্নমানের সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারেই এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

Sylhet Bridge
উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে জৈন্তাপুরে চিকারখালের ওপর নবনির্মিত সেতুটিতে। ছবি: ইউএনবি


এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নূরুল হক এন্ড তৈয়বুর রহমান জেবি’র স্বত্বাধিকারীর মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুরের নির্দেশনা মোতাবেক পুরো কাজ হয়েছে। পাইলিং কাজের সময় পশ্চিম পাশে কয়েকটি পিলার ৩৫ হতে ৪০ ফিটের মধ্যে ঢালাই কাজ করা হয়েছে। পাইলিং (পিলার) যতোটুকু গভীরে গেছে ততোটুকুর বিলই আমাকে দেওয়া হবে।

তিনি স্বীকার করেন, সেতুটির পূর্বপাশের প্রধান পাইলিংয়ের (মেইন পিলার) উপর মূল সেতুর ভারসাম্য রক্ষার জন্য ক্যাপ স্থাপনের স্থানটিতে ফাটলের বিষয়টি শুনেছেন। বলেন, নদীতে পানি থাকায় আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে, সেতুর অন্যান্য কাজ যথা নিয়মে হয়েছে দাবি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী তানভীর আহমদ বলেন, সঠিক নিয়মে কাজ হয়েছে। কোনো সন্দেহ নাই। ‘পানির স্রোত’ বেশি হওয়ায় গার্ডার ভেঙে যায়। এতে সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না।

তবে, জৈন্তাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান, কোনো কোনো পিলারে ৩৫-৪০ ফুট গভীরে পাইলিং ঢালাইয়ের কাজের কথা স্বীকার করে বলেন, ক্যাপে ফাটলের বিষয় তার জানা ছিলো না। বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এটি প্লাস্টারিং করলে সমাধান হয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে লেখালেখি করে লাভ নেই বলেও জানালেন এই উপজেলা প্রকৌশলী।

জানা গেছে, এর আগে উপজেলার সারী নদীর উৎসমুখে শুকসারী নামে পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি জলঘাট উদ্বোধনের ছয় মাসের মাথায় ভেঙে পড়েছিলো। সম্প্রতি, চিকারখাল সেতুর এমন অবস্থা দেখে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসীর আশঙ্কা, বর্ষায় সেতুটি নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। তাদের অভিযোগ, নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী তানভীর আহমদ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

A transitional budget for troubled times

Govt signals people-centric priorities but faces tough trade-offs

2h ago