বিজয়ের পর যা বললেন তারকারা
ভারতের সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন দলে তারকা প্রার্থী ছিলেন মোট ১৮ জন। বিজেপি, জাতীয় কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস থেকে এসব তারকা পেয়েছিলেন নিবার্চনী টিকিট। তবে ব্যক্তিগত সুনাম ও জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তাদের সবাই পার হতে পারেননি নির্বাচনী বৈতরণী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মোট ১৮ জন তারকা প্রার্থীর মধ্যে ১১ জন পেয়েছেন বিজয়মাল্য।
নির্বাচনের মাঠে তারকা প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি এবং তাদের হার-জিৎ বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিজেপি, জাতীয় কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস- যে দলেরেই প্রার্থী হোক না কেনো দর্শকদের নজর কেড়েছেন সেই নক্ষত্রেরা।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল শেষে প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। অভিনন্দন জানিয়েছেন দলের-কর্মীদের। ভক্তি জানিয়েছেন তাদের নিজ নিজ ভক্ত-ভোটারদের। বিজয়ীদের কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর থেকে তৃণমূলের নির্বাচিত আইনপ্রণেতা মিমি চক্রবর্তী এক টুইটার বার্তায় বলেন, “আমি সবার জন্যে কাজ করতে চাই। আমি সবসময়ই বলে এসেছি যে আপনারা আমার অহঙ্কার, আমার সম্মান, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মেরুদণ্ড এবং চিরদিনই তাই। সবাইকে ধন্যবাদ।”
বসিরহাট থেকে তৃণমূলের সাংসদ নুসরাত জাহান টুইটারে বেশ নীরবেই উদযাপন করছেন নিজের বিজয়। শ্রদ্ধা জানানোর ভঙ্গিতে দুই হাত জোড় করা মিম-ইমোজি প্রকাশের মাধ্যমে ভক্ত-ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
টুইটার বার্তায় তৃণমূলের ঘাটাল সাংসদ ও অভিনেতা দেব লিখেছেন, “৫৪২ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা ভারতবর্ষের সাংসদ। নতুন ভারত তৈরির কারিগর। প্রত্যেককে অভিনন্দন। আমি তাদের মধ্যে একজন হতে পেরে সন্মানিত। অভিনন্দন ঘাটালের বিজেপি এবং সিপিআই প্রার্থীকে।”
অপর এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, “আসুন সামনের দিনগুলোতে সবাই মিলে ঘাটালের উন্নয়নের কাজ করি। দেশে গণতন্ত্রের জয় হোক। দেশের মানুষের জয় হোক।”
আসানসোল থেকে বিজেপির হয়ে নির্বাচিত সাংসদ ও সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় তার বিজয়কে উৎসর্গ করেছেন দলপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি। এছাড়াও তিনি তুলে ধরেছেন বিজেপি কর্মীদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের অত্যচারের কথা। বলেছেন, “আসানসোলের বিজেপি নিষ্ঠুর মমতা দিদি ও তার তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমছি!) লোকদের হাতে অনেক কষ্ট-অত্যাচার সহ্য করেছে। এবং তারা নিজেদের জন্যে বিজয় অর্জন করে নিয়েছে।”
শুধু তাই নয়, বাবুল তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজিত প্রার্থী ও অভিনেত্রী মুনমুন সেনের ‘আমি আর আসানসোলে আসবো না’-খবরটিও নিজের টুইটারে শেয়ার করেছেন।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, হুগলী থেকে বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ভোট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “আমার প্রথম কাজ হবে হুগলীকে সন্ত্রাসমুক্ত করা।”
তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বহুল আলোচিত সিঙ্গুরে শিল্পকারখানা স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “ওখানে আন্দোলনের নামে মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর দিয়ে ওদের উত্থানের শুরু হয়েছিলো। পতনেরও সূচনা হলো সিঙ্গুর দিয়েই। আমি ওখানে নজর দেবো। চাইবো, ওখানে শিল্প হোক। টাটা আসুক।”
পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও ছিলো তারকা প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি। পূর্ব দিল্লি লোকসভা আসনে বিজেপির হয়ে জেতা প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর তার টুইটার বার্তায় প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় কংগ্রেসের অরবিন্দর সিং লাভলিকে কটাক্ষ করেছেন ছোট করে খেলার ধারাভাষ্য দিয়ে। বলেছেন, “এটা কোনো ‘লাভলি’ কাভার ড্রাইভ নয়, নয়, ‘আতিশি ব্যাটিং’। এটি হচ্ছে বিজেপির ‘গম্ভীর’ দর্শন যা জনগণ সমর্থন করেছেন।”
দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা-ধন্যবাদ জানিয়ে এই সাবেক ক্রিকেটার আশা করেন যে “জনতার ইচ্ছা পূরণে ব্যর্থ হওয়া যাবে না।”
পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর থেকে বিজেপির নতুন সাংসদ ও বলিউড অভিনেতা সানি দেওল তার টুইটার বার্তায় বলেন, “সর্বাধিক সম্মানিত নরেন্দ্র মোদিজি এবং সম্মানিত আমিত শাহজি, যিনি আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন, আমি খুশি যে আমি এটার উপর ভরসা করেছিলাম। আমি লোকসভা এলাকা, গুরুদাসপুরের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাকে বিজয়ী করেছেন। এই বিজয় শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল।”
উত্তরপ্রদেশের মথুরা থেকে বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত বিশিষ্ট অভিনেত্রী হেমা মালিনী-কে পুনর্নিবাচিত করার জন্যে তিনি তার ভোটারদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, “… ভোটারা আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন। তারা গত পাঁচ বছর তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাজ গ্রহণ করেছেন। আপনাদের অটুট সমর্থন কামনা করে আমি প্রার্থনা করেছিলাম। যেসব সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য আমাকে সমর্থন দিয়েছিলেন তাদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।”
পাঞ্জাবের চণ্ডীগড় থেকে বিজেপির হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন টেলিভিশন অভিনেত্রী কিরণ খের। বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরের স্ত্রী কিরণ এক টুইটার বার্তায় নরেন্দ্র মোদি এবং আমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেন, “ধন্যবাদ, আমার শহর- চণ্ডীগড়- আমি সর্বদা নিশ্চিত ছিলাম যে আমার শহর আমার সাথে থাকবে। আমি আপনার বিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতিদান দিতে সক্ষম হবো না। পাঁচ বছর আন্তরিকভাবে শহরের প্রয়োজন এবং কাজের জন্য আমার কণ্ঠস্বর তুলে ধরবো।”
Comments