বিজেপির উত্থান, তৃণমূলের ধাক্কা, কাটাছেঁড়া চলছে ওপার বাংলায়
দশ বছরের অবস্থান, মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ঝুঁকির মুখে। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের ১১ সাংসদ থেকে ২০১৪ সালে ৩৪ সাংসদে উন্নীত হওয়া মমতার দল, এবার বিজেপি শিবিরের কাছে বড় ধরণের ধাক্কা খেয়ে ২২-এ নেমে গেছে।
অন্যদিকে মাত্র ২ আসন পেয়ে বিজেপি ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে মাত্র ৫ বছরের মধ্যে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮ আসনে নিজেদের শক্তিশালী হিসেবে প্রমাণ করেছে।
এই দুটি দিক নিয়ে তুমুল চর্চা চলছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। যদিও আজ (২৪ মে) এই খবর লেখার সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দলটির সভানেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফলাফল নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে দলগতভাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিজেপির উত্থানের পেছনে রাজ্যের বামফ্রন্টকে দায়ী করেছেন।
ওদিকে শনিবার বিকালে কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ী ২২ সাংসদসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপি শিবিরেও দলের জয় এবং তাদের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা চলছে। দলটির শীর্ষ নেতা মুকুল রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, আমরা বিশ্বাসী যে আরও ভাল ফল করা সম্ভব ছিল। কিন্তু যেভাবে প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়েছেন তাতে ভোটারদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
এর আগে, রাজ্যে বিজেপি কমপক্ষে ২৩ আসনে জয় পাবে বলে নিজেদের আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
ওদিকে তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় বলেছেন যে, তার দল তৃণমূল রাজ্যে ৪২ আসনের ৪২ আসনেই জয় পাবে। এখানে বিরোধী রাজনীতিকরা কোনও আসন পাবেন না।
রাজ্যে বামফ্রন্ট কোনও আসনে জয় পায়নি। ২০১৪ সালে বামফ্রন্ট ২ আসনে নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু এবার তারা সেই আসনগুলোও হারিয়েছে। নিজেদের ফল নিয়ে বামফ্রন্ট নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, এটা খুবই অপ্রত্যাশিত ফলাফল। এর কারণ খুঁজতে তারা দলীয় নিয়ম অনুসারে বৈঠক করবেন।
কংগ্রেস রাজ্যে এবার ২টি আসন পেয়েছে। গতবার এই দলটির পেয়েছিল ৪ আসন। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙতে কোটি কোটি টাকার খেলা খেলেছিল গত কয়েক বছর, এরপরও যে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে সেটা মানুষের জন্য। মালদা দক্ষিণ আসনও পেয়েছে কংগ্রেস।
কলকাতার প্রবীণ সাংবাদিক বিপ্রতীপ দে দ্য ডেইলি স্টারকে বিজেপির উত্থানের কারণ বলতে গিয়ে জানান, এইখানে কার্যত দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে ভোট। একটি মমতার পক্ষে অন্যটি মমতার বিপক্ষে। এখানেও আবার দুটি স্তরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল ভোট। এক শ্রেণির ভোটাররা মনে করেছেন, মমতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী কে বা কোন দল আছে, সেই দলকেই ভোট দেবেন তারা এবং তাই করেছেন। আবার অন্য এক শ্রেণির মানুষ সরাসরি হিন্দুত্ব কিংবা জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছেন।
সামাজিক বিশ্লেষক মুকুল বসু জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে প্রচার প্রচারণায় ছিল বিজেপি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, তাতে বিজেপি বলা ভালো মোদির একটি ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই ঝড়ের গতিতেই অনেকে ভোট দিয়েছেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোর কারণেও রাজ্যের মানুষ তৃনমূলকে অনেকটা নেতিবাচকভাবে ধরে নিয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র তমাল রায় জানান, বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক বলা হয়, তবে তৃণমূলও সাম্প্রদায়িক। কারণ বিজেপি যেমন হিন্দুত্বকে সামনে রাখছে, তেমনি তৃণমূলকে দেখা যায় তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়েই কথা বলে। দুটি দলই ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছে। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখানে হিন্দু স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুত্ববাদকেই অনেকে সামনে এনে ভোট দিয়েছেন।
তবে, যে যেমন ভেবেই ভোট দিয়েছেন, বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ কিন্তু বিজেপির উত্থানে চিন্তিত। যেমন- রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী শোভা প্রসন্ন মনে করেন, এই শক্তির উত্থান মোটেও শুভকর নয়।
সংগীত শিল্পী কবীর সুমন জানালেন, বিজেপির মুখে-চোখে সাম্প্রদায়িকতার বিষ। আগামীর দিনে ভয়াবহ কিছু দেখতে চলেছে দেশ।
Comments