বার্সেলোনার হঠাৎ ছন্দপতন দায়ী ভালভার্দে, মেসি না কি...
কি দারুণভাবেই না মৌসুম শুরু করেছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। তিন ম্যাচ হাতে রেখেই লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করে টানা পঞ্চম কোপা দেল রে জয়ের পথেও ছিল। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে এগিয়েছিল তিন গোলে। কিন্তু তারপর কেমন যেন অচেনা হয়ে গেল মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত খেলা দলটি। লিগ শিরোপা ছাড়া বাকি সবই হাতছাড়া তাদের!
আর তাতেই চলছে নানা ধরণের বিশ্লেষণ। দলটির হঠাৎ ছন্দপতনের কারণ কি? অনেকে দায় দিচ্ছেন কোচ এরনেস্তো ভালভার্দেকে। আবার কেউবা খেলোয়াড়দের। আবার অধিনায়ক লিওনেল মেসির উপর অতিনির্ভরশীলতাকেই দায় দিচ্ছেন অনেকে। কারো চোখে টেকনিক্যাল সেক্রেটারি পেপ সেগুরা হতে শুরু করে বোর্ডের সবাই। তবে স্প্যানিশ গণমাধ্যম মার্কা তুলে ধরেছে কিছু কারণ। দেখে নেওয়া যাক সে কারণসমূহ...
সমাধানবিহীন একজন কোচ ভালভার্দে
ঘরের মাঠে তিন গোলে এগিয়ে থেকে অ্যানফিল্ডে গিয়ে চার গোল খেয়েছে বার্সেলোনা। এমন নয় যে এবারই প্রথম। আগেরবারও এএস রোমার বিপক্ষে একই ঘটনা ঘটেছে। অথচ সে ম্যাচ থেকে শিক্ষা নেননি ভালভার্দে। লিভারপুলের বিপক্ষে স্রেফ ভেস্তে গিয়েছে তার সকল পরিকল্পনা। কোপা দেল রে’র ফাইনালেও তাই। পুরো মৌসুমে জাদুকরী খেলা উপহার না দিলে লা লিগার শিরোপাও হাতছাড়া হতো তাদের।
বিশেষ করে মৌসুমের শেষদিকে একেবারে পরিকল্পনাহীন ফুটবল খেলেছে বার্সেলোনা। যার দায় অবশ্যই কোচের উপর বর্তায়। তার সাজানো প্রথম একাদশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খেলোয়াড় পরিবর্তনেও কোন কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি ভালভার্দে। যদিও ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ ও অধিনায়ক লিওনেল মেসির সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
মেসিকে ঘিরেই সব পরিকল্পনা
মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে মেসি। দলকে প্রায় একাই টেনেছেন তিনি। কিন্তু বার্সেলোনার মতো দলের একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীলতা ভালো লক্ষণ নয়। ফিলিপ কৌতিনহোর ছন্দহীনতা, লুইস সুয়ারেজের অস্ত্রোপচার ও ওসমান দেম্বেলের না থাকাটা বেশ চাপ পড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা অধিনায়কের কাঁধে। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষেও মেসিকে কেউ সমর্থন দিতে পারেননি। তরুণ ম্যালকমের উপর তার সামর্থ্যের চেয়েও বেশি প্রত্যাশা করা হয়েছে। আর অভিজ্ঞ সেনানী সের্জিও বুসকেতস ও ইভান রাকিতিচ তাদের সেরা সময় হারিয়ে ফেলেছেন।
কৌতিনহো সমস্যা
বার্সার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে মূল্যবান ট্রান্সফারটি ছিল কৌতিনহোর। কিন্তু চলতি মৌসুমে তিনিই খেলেছেন সবচেয়ে বাজে। বার্সেলোনার প্রয়োজনের সময়ে জ্বলে উঠতে পারেননি, কেবল মাত্র কোপা দেল রে’র শেষ ষোলোতে লেভান্তের বিপক্ষে নেওয়া শেষ দিকের পেনাল্টিটি ছাড়া। অথচ তার উপর অনেক ভরসা করেছিল দলটি।
মিডফিল্ডারের সঙ্কট
চলতি মৌসুমে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স থেকে অনেক দূরেই ছিলেন বুসকেতস ও রাকিতিচ। রীতিমতো চোখে লেগেছে সেসব। মৌসুমের শুরুতে আর্থুর মেলো আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স করলেও ইনজুরিতে পড়ার পর ফিরে এসে আগের মতো খেলতে পারেননি। তবে আশার খবর আয়াক্সের তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কি দি ইয়ংকে আগামী মৌসুমে পাচ্ছে কাতালানরা।
প্রয়োজন ছিল সুয়ারেজের ব্যাকআপ
সেরা ছন্দে না থাকলেও চলতি মৌসুমে খারাপ খেলেননি সুয়ারেজ। লা লিগায় মেসির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। কিন্তু বয়সটা পেরিয়েছে ৩২ বছর। তাই টানা খেলার ধকল বাঁচাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন তার। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে জায়গা পূরণ করতে পারেননি কেউ।
কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে খেলোয়াড় সাইনিং
এবার কিছু খেলোয়াড় সাইন করে বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দিয়েছে বার্সা। বিশেষ করে কেভিন প্রিন্স বোয়েটাংকে তারা এনেছিল সুয়ারেজের বিকল্প হিসেবে। কিন্তু তার সিকিভাগও পূরণ করতে পারেননি তিনি। এছাড়া জেইসন মুরিলোর মতো খেলোয়াড়কে বিকল্প ডিফেন্ডার হিসেবে কেনাও কিছুটা বোকামি হয়ে গেছে দলটির। রোমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আনা ম্যালকমও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
Comments