ফল বিপর্যয়ের পর দল বিপর্যয়ে মমতা: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার হিড়িক

ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর নতুন রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। আজ ২৮ মে মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের দু-জন বিধায়কসহ প্রায় চারটা পৌরসভার ৭০ জন কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
দল বদল করে পশ্চিমবঙ্গের একদল তৃণমূল বিধায়ক, কাউন্সিলর এখন বিজেপিতে। ছবি: স্টার

ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর নতুন রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। আজ ২৮ মে মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের দু-জন বিধায়কসহ প্রায় চারটা পৌরসভার ৭০ জন কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে যোগ দিয়েছেন একজন বামফ্রন্টের বিধায়কসহ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও।

আগামী ৩০ মে সন্ধ্যায় বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি। ঠিক এর একদিন আগে এইভাবে দল বেধে দিল্লিতে তৃণমূল থেকে বিজেপি শিবিরে নাম লেখানোর ঘটনায় রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বের অন্দরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

যদিও এই ঘটনাকে সাময়িক বিপর্যয় বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। দলের শীর্ষ নেতা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ঝড়ের সময় জাহাজ দোল খেলে প্রাণে বাঁচতে ইঁদুররাই জলে ঝাপ দেয়। এখানেও তাই হয়েছে। আদর্শহীনরাই এখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার কলকাতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চারটি পৌরসভার বোর্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। ফলে ভাটপাড়া, কাচরাপাড়ি, হালিশর এবং নৈহাটি পৌরসভা এখন বিজেপির দখলে। তৃণমূলের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বহিষ্কৃত হয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আজ বিজেপিতে যোগ দিলেন। তিনি আবার রাজ্য বিজেপি শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের ছেলে। তৃণমূলে ভাঙনের শুরু উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকেই। ফলে এই জেলার তৃণমূল নেতাদের ঘুম কার্যত উড়ে গিয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যটির খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, বিজেপি বন্দুকের নল ঠেকিয়ে তৃণমূল থেকে নেতা-কর্মীদের ভাগিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে তাপস রায় নামের আরেক তৃণমূল নেতা বলেন, গোটা বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করে দেখছেন।

ওদিকে দিল্লিতে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শীর্ষ বিজেপি নেতা মুকুল রায়। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, সাত দফায় যেমন ভারত জুড়ে ভোট হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঠিক তেমনই পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাত দফায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের মধ্যদিয়ে রাজ্যে তৃণমূলের শাসন শেষ হবে।

মুকুল রায় বলেন, যে সংখ্যক নেতা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাতে দিল্লিতে রাজনৈতিক ক্যাম্প অফিসে জায়গা হবে না।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি আগেই বলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস করলেও বহু তৃণমূল নেতৃত্ব তলেতলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। এমন কি তৃণমূল বিধায়ক, কাউন্সিলার থেকে নেতা পর্যন্ত এবার ভোট দিয়েছেন বিজেপিতে। তৃণমূল কংগ্রেসে গণতন্ত্র নেই। এই দলের কেউ থাকবেন না, যোগ করেন মুকুল রায়।

২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে ৩৪ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে ১২ জন সাংসদ কমে গিয়ে ২২ জন জনপ্রিতিনিধিকে রাজ্যবাসী নির্বাচিত করেছেন। অন্যদিকে মাত্র দুই জন সাংসদ থেকে এখন বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ১৮।

বিজেপি আগেই ঘোষণা করেছে, দ্বিতীয় বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরলে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সরকারকে ভেঙে দেবে তারা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন তৃণমূলের ৪০ জন বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ভোটের ফল বের হওয়ার পর তারা প্রত্যেকেই বিজেপিতে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের বাস্তব চিত্র দেখাতে শুরু করেছে বিজেপি। অন্যদিকে দলের এই ভাঙর রুখতে দফায় দফায় বৈঠক শুরু করেছেন তৃণমূল সভানেত্রী তথা রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago